জামায়াতের হরতালঃ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন, আটক ৬৯

জামায়াতের হরতালঃ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন, আটক ৬৯

বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে ৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির। রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা চোরাগোপ্তা স্টাইলে পুলিশের ওপর সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তারা অন্তত ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে ও রাস্তায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ তৈরির চেষ্টা করেছে। অনেক জায়গায়ই জামায়াতের কর্মীরা আকস্মিকভাবে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেছে। পুলিশ জানায়, রাজধানীতে জামায়াত-শিবিরের ৬৯ জনকে আটক করা হয়েছে। কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, খিলক্ষেত, কর্ণফুলী মার্কেটের সামনে ও কলাবাগানে পিকেটারেরা একটি করে বাস ভাঙচুর করেন। কোথাও কোথাও তারা চোরাগোপ্তা হামলা চালায় পুলিশের ওপর। হরতাল সমর্থকরা খিলগাঁওয়ে একটি লেগুনা, সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা ও শাহজাহানপুরে একটি বাসে আগুন দেয়। পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দাপট থাকে হরতালের মাঠে। শুরু হয় হরতালবিরোধী মিছিল। রাজপথে শোনা যায় ‘মুজিবের বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নেই, ‘যারা দেয় হরতাল, তাদের মাথায় ঘোল ঢাল’, ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এ মুহূর্তে দেশ ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগান। এমনকি জামায়াতের আখড়া হিসেবে পরিচিত মগবাজারে জামায়াত-শিবির পরিচালিত এক হাসপাতালেও ভাঙচুর চালায় যুবলীগ ক্যাডাররা। এছাড়া তেজগাঁও, কাজীপাড়া ও মিরপুরে আনসার ক্যাম্পের কাছে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। মগবাজারে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনের কাচ ভাঙচুর করা হয়। যাত্রাবাড়ী এলাকায় ৭-৮টি বাস ভাঙচুর ও একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এদিকে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা পরিস্তিতি সামাল দিতে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রতিটি সড়কেই থাকেন র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে কিছু কিছু বাস চলাচল করেছে। অটোরিকশা ও রিকশার চলাচল ছিল কম। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিসহ কয়েকটি দাবিতে দলটি গত সোমবার দুপুরে হরতালের ডাক দেয়।
হরতালে সক্রিয়ভাবে অংশ না নিলেও ‘নৈতিক সমর্থনের’ কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বর্তমানে আটক রয়েছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আব্দুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, আবদুস সুবহান, মীর কাসেম আলী, এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
বনানীতে নৌবাহিনীর সদর দফতরের সামনে দুপপুর ১২টার দিকে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেয়। বাসটি গুলিস্তান থেকে বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিভিয়েছেন। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভূঁইয়া মাহবুব হাসান জানান, পুলিশ বাসটি উদ্ধার করে বনানী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল থেকে মগবাজারের ইনসাফ বারাকাত কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের সামনের দিকের কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিছিল থেকে এলোপাতাড়িভাবে ইটপাটকেল ছুঁড়ে ভাঙচুর করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হরতাল সমর্থনকারী একদল যুবক মিরপুর-১ নম্বরে আনসার ক্যাম্পের সামনে ‘বিশাল’ নামের যাত্রীবাহী একটি পরিবহন ভাঙচুর করে। পরে ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেন। র‌্যাবের টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর তারা পালিয়ে যান। একই সময়ে মিরপুর-১০ নম্বরে ফলপট্টির কাছে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করার জন্য জড়ো হন। এ সময় পুলিশ মইনুদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে। মইনুদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে মিরপুর থানা জামায়াতের শূরা সদস্য বলে দাবি করেছেন। মিরপুর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, গত সোমবার রাত থেকে এ পর্যন্ত মিরপুর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক জানান, রাজধানীর কাওরানবাজার ও ফার্মগেট এলাকায় সকাল পৌনে সাতটার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় তাঁরা অন্তত চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে। একটি বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে।

বিশেষ প্রতিনিধি