উষ্ণায়নের ঝুঁকিতে বিশ্ব

উষ্ণায়নের ঝুঁকিতে বিশ্ব

তামান্না আফরোজ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ অ্যান্টার্কটিকা এলাকায় বেঁচে থাকাই সম্ভব নয় বলে অনেকে মনে করেন। চারদিকে শুধু বরফ আর এমনই ঠাণ্ডা যে, গরমে তা মাইনাস ২০ এবং শীতে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে দাঁড়ায়। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার মতো বাতাসের জোর আর যাবতীয় সৌররশ্মিসহ প্রবল রোদ, তা সত্ত্বেও এ ভয়ঙ্কর এলাকা মানুষকে টানে। মেরুতে কাজ করা বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, আর্কটিকের তুলনায় অ্যান্টার্কটিকায় বরফ জমা কমছে না, বরং তা উল্টো বাড়ছে, অর্থাৎ দক্ষিণ মেরু উত্তর মেরুর সঙ্গে ভারসাম্য রেখেই চলেছে। রাশিয়ার ‘বেল্লিনসহাউজেন’ স্টেশনে ২০০৭ সালে ‘পবিত্র ত্রয়ী’র গির্জায় প্রথম বিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছিল। দক্ষিণ মেরুতে এমনকি শিশুর জন্মও হয়েছে। প্রথম বাচ্চা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। কিন্তু এখানকার বেশিরভাগ লোকই মেরু স্টেশনের বিজ্ঞানী। এখানে রাশিয়ার সাতটি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি স্থায়ী, দুটি ঋতুনির্ভর। সেখানে কাজ করছে দুটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার জাহাজ ‘অ্যাকাডেমিক ফিওদরভ’ ও ‘অ্যাকাডেমিক কারপিনস্কি’। রাশিয়ার বিশেষজ্ঞদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো এখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া। কারণ ষষ্ঠ মহাদেশ বিশ্বের আবহাওয়ায় বিশাল প্রভাব ফেলে। আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভাইস ডিরেক্টর আলেকজান্ডার দানিলভ বলেছেন, সারা বিশ্বে উষ্ণায়নের ঝুঁকি রয়েছে। এ সম্পর্কে অ্যান্টার্কটিকা বিশ্বের জীবজগতের ওপরে নির্দিষ্ট রকমের বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ এখানের বরফ গলতে শুরু করলে মহাসমুদ্রের জলের স্তর উঁচু হবে। এর অর্থ হল্যান্ডের মতো বহু দেশ পানির নিচে চলে যাবে। এর মধ্যে রাশিয়ার অংশও রয়েছে। এটা খুবই গুরুতর বিপদ। বর্তমানের অ্যান্টার্কটিকা সংক্রান্ত পরিকল্পনার মধ্যে রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা বরফের নিচে থাকা ‘ভস্তক’ হ্রদের পানি অবধি পৌঁছনোর কাজ করছেন। এর জন্য প্রায় ৪০০০ মিটার বরফ খুঁড়তে হচ্ছে। এখন বাকি মাত্র ২০ মিটার। সম্ভবত এটা এ বছরেই শেষ করা যাবে। আর তাহলে এটা মানুষের মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার মতোই বড় মানব সভ্যতার আবিষ্কার হবে। এই হ্রদ বৈকালের অর্ধেক কিন্তু এর নিচে বা পানিতে একবার পৌঁছনো গেলেই হতে পারে যে, একেবারেই অন্য ধরনের প্রাণের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে, যা আগে কখনও জানা ছিল না। এ হ্রদ আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে গত ৪২০ হাজার বছরে পৃথিবীর আবহাওয়াতে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। রুশ বিজ্ঞান একাডেমীর ভূগোল ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর ভদ্মাদিমির কতলিয়াকভ বলেছেন, এটা চারটে আবহাওয়ার বৃত্ত, যখন পরিস্থিতি ছিল হিম যুগের, আর তারপরে মধ্য হিম যুগের। বর্তমানে আমরা রয়েছি মধ্য হিম যুগে, আর আগের যুগের পৃথিবীর মাটির তাপমাত্রা থেকে এখনকার তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি কম হয়েছে। তার মধ্যে আবার বিশ্বে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে, যা তখন ছিল না। মানব সমাজের ভাগ্য ভালো যে, আমাদের কাজকর্মে বিশ্বের প্রধান আবহাওয়ার প্রক্রিয়াতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। প্রকৃতির যন্ত্র আগের মতোই কাজ করছে, তা ভালোই ভারসাম্য রেখে চলে।

সূত্র : রেডিও রাশিয়া।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক