রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের তান্ডব রুখতে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের তান্ডব রুখতে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি

বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের তান্ডব রুখতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নাশকতা বা হামলার শিকার হতে পারে এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সাদা পোশাকের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দিয়ে বাড়তি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। জনবহুল মোড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অলিগলিতে পোশাক পরিহিত পুলিশ-র‌্যাব নিয়মিত টহল দিচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে জামায়াতের হামলা হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আটক শীর্ষ নেতাদের মুক্তির নামে জামায়াতের কর্মীরা রাজপথে নেমে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সরাসরি হামলা করে। তারা যানবাহন ভাঙচুর করে এবং তাতে অগি্নসংযোগ করে। এসব ঘটনার সবই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এরপরই সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেন। জামায়াত যেন এ ধরনের হামলা পুনরায় না করতে পারে সে জন্য নিয়মিত নিরাপত্তার সঙ্গে হামলা ঠেকাতে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার অনেক দূর এগিয়েছে। এটি বুঝতে পেরে জামায়াত বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তবে তারা যত কৌশল অবলম্বন করুক না কেন, ছাড় দেয়া হবে না। বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর জামায়াতের এ কাজের ইন্ধন জোগাচ্ছেন খালেদা জিয়া।
জামায়াতের চোরাগোপ্তা হামলা, মানুষ হত্যা তথা জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীর পল্টন মোড়, নয়াপল্টন, গুলিস্তান, মিরপুর, ফার্মগেট, পুরান ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকার দুই শতাধিক স্থান বা স্পটকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব স্থানে পোশাক পরিহিত পুলিশকে রাখা হয়েছে। কয়েকটি স্থানে জলকামান, কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান-মোড়ে বসানো হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট। স্থানবিশেষে বসানো হয়েছে গোপন ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। সব ক্যামেরা আবার মনিটরিং করছে একটি গোয়েন্দা দল। কেউ অবৈধ কোনো কিছু বহন করছে কি না ক্যামেরার মাধ্যমে তার তদারকি হচ্ছে। এসব এলাকায় মোতায়েন করা পুলিশের সঙ্গে টহলও সার্বক্ষণিক রাখা হয়েছে। গ্রুপ করে পুলিশকে দেয়া হয়েছে দায়িত্ব। সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালীসহ সব বাস টার্মিনালে বাড়তি নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। আদালতপাড়া, সচিবালয়সহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, দূতাবাস, হাইকমিশন, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, বিমানবন্দর, পাঁচতারা হোটেল, স্টেশন, লঞ্চঘাট, মন্ত্রী-এমপিদের বাসা, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ কূটনীতিকপাড়ায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন এমনকি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দেহ তল্লাশির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, জামায়াতের এ হামলা অত্যন্ত পরিকল্পিত। তারা বড় ধরনের নাশকতা করে শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করার টার্গেট নিয়েই নামেনি, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত- শিবিরের সঙ্গে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বা জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি), হিযবুত তাহরীরসহ আরো কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের কর্মীরাও একজোট হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানায়, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে প্রথমে ধরা হয়েছে রাজধানী ঢাকাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আগাম সতর্কও করা হয়েছে, যা দেশের প্রতিটি জেলায় করা হয়েছে। প্রতিদিন কোন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা জেলার এসপিরা এবং মহানগরী এলাকার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলকে জানাচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নিরাপত্তা অব্যাহত থাকবে। আপাতত কাউকে ছুটিও দেয়া হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিনে সাধারণ জনগণ হামলার শিকার না হলেও সারাদেশে প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হয়েছেন। জামায়াতের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, তাদের কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না পুলিশ। এ কারণে তারা পুলিশের ওপর চরম ক্ষিপ্ত রয়েছে। মিছিলের নামে পুলিশের ওপর হামলা করার কারণও এটি। অবস্থা এমন যে, জামায়াতের ক্যাডারদের প্রধান টার্গেট এখন পুলিশ। পুলিশকেও আগে থেকে আরো বেশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিশেষ প্রতিনিধি