জলমহাল নিয়ে বিরোধ ।। ডাকাতির অভিযোগে জেলহাজত!

জলমহাল নিয়ে বিরোধ ।। ডাকাতির অভিযোগে জেলহাজত!

জাফরুল হাসান রুহান, বরগুনা প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ জলমহাল ও জমি নিয়ে বিরোধ কে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ফাসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৭ এপ্রিল রাতে বরগুনার বুড়িরচর ইউনিয়নের গাবতলা এলাকার সমিরণনেসার বাড়িতে কথিত ডাকাতির অভিযোগে প্রতিপক্ষ সেলিম, ছালাম, ইউসুফ কাজী ও জাহাঙ্গীর হোসেন নামের চারজনকে আসামী করে ১৮ এপ্রিল  বরগুনা থানায় সমিরণনেসা বাদী হয়ে একটি মামলা রুজু করেছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এ সমিরন ও চান মিয়া এ ঘটনা সাজিয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবী। মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে বুধবার বিকেলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ওই এলাকার শতাধিক নারী-পুরুষ।

বিষয়টি জানতে বৃহষ্পতিবার সকালে সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে এলাকাবাসী জানান, ডানিডার সহায়তায় ওই এলাকার একটি জলমহালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সালাম ও সেলিমের সাথে সমিরণের স্বামী চান মিয়ার বেশ ক’বছর ধরে ধরে বিরোধ চলছে। বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ডাকাতির নাটক সাজিয়ে আসামীদের ফাঁসানো হয়েছে। ডানিডা স্থানীয় হতদরিদ্রদের জন্য ২০০৬ সালে ৫ একর জমি নিয়ে একটি জলাধার তৈরী করে। স্থানীয় দু’শ জন দরিদ্রকে নিয়ে জলমহালা রক্ষনাবেক্ষন কমিটি গঠন করা হয়। জলমহালে মাছ চাষ করে প্রতিবছরের প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় হয়। এসব টাকা সদস্যদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হয়। জলমহাল তৈরি দু’বছর পরই চান মিয়া মাঝখানে বাধ দিয়ে একটি অংশ নিজে দখল করে নেয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেখা দেয়। এ নিয়ে ডানিডা কর্তৃপক্ষ চান মিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে ‘চান মিয়ার বাধ দেয়া অবৈধ’ মর্মে রায় পান। কিন্তু এরপরও জলমহালের ওই অংশটি চান মিয়া জবরদখল করে রেখেছেন।

সালামের ভাই আলম মিয়া জানান, বাধ অপসারণের জন্য সালাম জাহাঙ্গীর ও সেলিম মিয়া স্থানীয়দের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে চান মিয়ার সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে চান মিয়া স্থানীয় প্রভাবশালী আবদুল মতিন মাষ্টার, সোনালী ব্যাংক বরগুনা শাখার কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও মতিন মাষ্টারের ছেলে বংশাল থানা এসআই খোকন মিয়াকে ম্যানেজেরে মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ওই তিনজনকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। এর আগেও চান মিয়ার স্ত্রী সমিরণ নেসা, সালাম, সেলিম ও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অচেতন করে মালামাল লুটের একটি অভিযোগ দিয়েছিল। তদন্তে সেটি মিথ্যে প্রমানিত হয়। সেলিমের ভাই মোশাররফ হোসেন জানান, মতিন মাষ্টারের ছেলে খোকন বংশাল থানার এসআই। বরগুনা থানায় যোগাযোগের মাধ্যমে খোকন পুলিশকে দিয়ে আসামীদের হয়রানী করছে।

ইউসুফ কাজীর ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, ৫ একর জমি নিয়ে তাদের সাথে চান মিয়ার বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন। ১৭ এপ্রিল ওই মামলায় চান মিয়া ও সমিরণের হাজিরার তারিখ ছিল। তারা আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করে ওই দিন রাতেই ডাকাতির নাটক করে। নজরুলের দাবী তার ভাই নির্দোষ। জমি-জমা নিয়ে বিরোধে তার ভাই ইউসুফ কাজীকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

সমিরণনেসার রুজু করা মামলায় সেলিম, সালাম, ইউসুফ ও জাহাঙ্গীর ও রিয়াজ নামের চারজনকে গ্রেফতার করেছে বরগুনা থানা পুলিশ। এর মধ্যে রিয়াজ রিকশা শ্রমিক, জাহাঙ্গীর দিনমজুর। রিয়াজের স্ত্রী রোজীনা বেগম বলেন. দুইডা পোলা মাইয়া লইয়্য এই একসপ্তাহ ধরইর‌্যা প্রায়ই না খাইয়া আছি। রোজিনার দাবী’ তার স্বামী রিয়াজ ডাকাতির ব্যাপারে কিছুই জানেনা। একই অবস্থা জাহাঙ্গীরের পরিবারের। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী খাইরুননেসা বলেন, স্বামীকে কোনদিনও অন্যায় করতে দেখিনি। খেটেপুটে যা জোটে তাই দিয়ে সংসার চালায়।

যোগাযোগ করা হলে, মামলার বাদী সমিরণনেসা মুঠোফেনে বলেন, গভীর রাতে আসামীরা আমার বাড়িতে ঢুকে ডাকাতি করায় আমি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। বিষয়টি এখন পুলিশের ব্যাপার।

বরগুনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন ফকির বলেন‘ সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থণে গিয়ে সমিরণনেসার সনাক্ত করা লোকজনকে আটক করা হয়। পরে তিনি ওই তিনজনসহ জাহাঙ্গীর নামের আর একজনকে আসামী করে ডাকাতির অভিযোগে একটি মামলা রুজু করেন। বাদী অভিযোগে ভিত্তিতে আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।

এসবিডি নিউজ ডেস্ক