জাগ্রত হোক মানবধর্ম

জাগ্রত হোক মানবধর্ম

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রকৃতিতে এখন চলছে পৌষের আধিপত্য। তবে, ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর সারাদেশে যে তাপমাত্রা ছিলো, তা গত ৩০ বছরের একই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে বেশ কম বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত এই দুই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা রাতে গড়ে ৯-১৫ ডিগ্রি এবং দিনের বেলায় ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এই মূহুর্তে দেশের ১০টি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ চললেও, সারাদেশেই স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে।

পুরো দেশেই বিশেষ করে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা আগামী কয়েকদিনও স্বাভাবিকের চেয়ে কমই থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশের সাধারণ তাপমাত্রার হিসাব অনুযায়ী বড় কোন এলাকা জুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা যদি ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকে তাহলে তাকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বলে। কিন্তু তাপমাত্রা যদি ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়, তাহলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়।

ঋতু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় দেশে শীত ঋতু আসে। কিন্তু শীতের প্রস্তুতি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর থাকে না। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল, যেখানে প্রাকৃতিক কারণেই শীতের প্রকোপ বেশি, সেখানকার দরিদ্র মানুষের কষ্ট অবর্ণনীয়। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। শীতজনিত শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক লোকদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কৃষিকাজও। এই সময়ের স্বাভাবিক বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না। কুয়াশায় অনেক ফসল নষ্ট হচ্ছে। কৃষককে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

শীতের এই ঠান্ডা হাওয়া আমাদের দুয়ারে ভালোই আঘাত করছে। রাতে কম্বল আর নকশিকাঁথা ব্যবহার করে অনেকে আরাম-আয়েশে ঘুমাচ্ছে। একটু খেয়াল করলে আমরা দেখব চারপাশে অনেক প্রতিবেশী আছে, যারা শীতে কষ্ট পাচ্ছে। ফুটপাতে অসংখ্য মানুষ শীতের থাবায় জর্জরিত। রাস্তার উপর শুয়ে থাকা শিশুটি শীতে কাতরাচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ছোট ছোট শিশু ঘুমাতে পারছে না। এসব এলাকায় দেখা যায় বয়োবৃদ্ধ মানুষ আর ছোট শিশুরা প্রচণ্ডভাবে কাঁপছে। অনেক পাহাড়ি শিশু ও বৃদ্ধ খুব কষ্টের মধ্যে আছে। এই তীব্র শীতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যখন খালি গায়ে দেখি তখন খুব কষ্ট হয়।

আমাদের অনেকের অর্থ আছে, বিত্ত আছে, সহায়-সম্পদ আছে। এ সবকিছুর সঙ্গে আমাদের বিবেকটা জাগ্রত করতে পারলে আমরা নিজেরাই অনেক কিছুতে পরিবর্তন আনতে পারি। আমরা একটু সচেতন হলে এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। নিজের আয়ের সামান্য কিছু অংশ দিয়ে তাদের কয়েকটি কম্বল অথবা শীতবস্ত্র কিনে দিতে পারি। বড় বড় প্রতিষ্ঠান এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। বড় বড় ব্যবসায়ী আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে পারেন।

অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর মধ্যে আত্মতৃপ্তি আছে। আশার কথা, কিছু সংগঠন এখন শীতার্ত মানুষের জন্য কাজ করছে। অবশ্যই ধন্যবাদ তাদের প্রাপ্য। যেসব অসহায় মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে, তাদের পাশে থাকাটাই মানবতা। বলা হচ্ছে, সামনে আরেকটা শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। একদিকে করোনাভীতি অন্যদিকে শীতের ঠান্ডায় আমাদের চারপাশে থাকা অসহায় মানুষ খুব কষ্টে আছে। অল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগও বাড়তে শুরু করেছে।

নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবধর্ম। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের বিত্তবানদের শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়ানো উচিত। পারস্পরিক মানবতাবোধ ও উদারনৈতিক মনমানসিকতা থাকা আবশ্যক। সবার সম্মিলিত চেষ্টায়ই শীতের কষ্ট থেকে দরিদ্র মানুষদের রক্ষা করা সম্ভব। তবে সবার আগে প্রয়োজন শীতবস্ত্র। আমরা আশা করি, সমাজের সবাই দরিদ্র মানুষের সাহায্যে যে যার সাধ্য মতো এগিয়ে আসবেন।।

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: সিনিয়র সাংবাদিক।।

jsb.shuvo@gmail.com

প্রধান সম্পাদক