৩২ দিনেও জমা হয়নি এমভি মিরাজ লঞ্চ দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন

৩২ দিনেও জমা হয়নি এমভি মিরাজ লঞ্চ দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন

কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ মুন্সীগঞ্জে মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি মিরাজ-৪ দুর্ঘটনার ৩২ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা দেয়নি এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। দুর্ঘটনার পর সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর (ডস) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের সময় বেধে দেয়। পরবর্তী সময় কমিটির আহবায়ক নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের (এমএমডি) প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক এফ এম সিরাজুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আরো সাত দিন সময় নেন। কিন্তু ১৬ জুন (সোমবার) বিকাল ৫টায় পর্যন্ত এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, পটুয়াখালীতে অপর যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি শাতিল-১ দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দীর্ঘ কালক্ষেপনের পর গত ১২ জুন বিকালে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে ডস মহাপরিচালকের দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর পর দুটি কার্যদিবস অতিবাহিত হলেও তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় কিংবা ডস থেকে গণমাধ্যমকে কিছুই জানানো হয়নি। গত ১৫ মে দুপুরে ঢাকার সদরঘাট থেকে শরীয়তপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া তিন শতাধিক যাত্রীবোঝাই এমভি মিরাজ বিকাল পৌণে ৪টার দিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে নিমজ্জ্বিত হয়। এর পেছনে থাকা অপর একটি লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলা লাইফবয়া ও লাইফজ্যাকেটের সাহায্যে ৪৫ জন যাত্রী তীরে উঠতে সক্ষম হয় এবং চার দিনের অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৫৭ জনের লাশ। বাকি যাত্রীরা এখনো নিখোঁজ। ঐ ঘটনায় এমএমডির কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- ডস এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রধান পরিদর্শক। এই দুর্ঘটনার মাত্র ১১ দিন আগে ৩ মে পটুয়াখালীর গলাচিপার রামদাবাদ নদীতে নিমজ্জ্বিত হয় এমভি শাতিল-১। সেখান থেকে ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হলেও এখনো ঐ লঞ্চের ৩০ যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। ঐ ঘটনায় ডস এর পরীক্ষক প্রকৌশলী ড. এ এস এম নাজমুল হককে আহবায়ক এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রধান পরিদর্শককে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত দিনের সময় বেধে দেয়া হলেও দীর্ঘ ৪০ দিনের মাথায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমভি শাতিল-১ লঞ্চটির নকসা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এছাড়া অনুমোদিত নকসা অনুসরণ করেও নৌযানটি নির্মাণ করা হয়নি। অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য সত্ত্বেও এটিকে নিবন্ধন দেন ডস এর বরিশাল কার্যালয়ের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মুঈনউদ্দিন জুলফিকার। এছাড়া নির্মাণকালে ও নিবন্ধনের সময় এর যাত্রীসংখ্যা ১১২ জন নির্ধারণ করা হলেও বার্ষিক ফিটনেস প্রদানকালে একই কর্মকর্তা এর যাত্রীসংখ্যা নির্ধারণ করেন ১৬০ জন। সূত্র আরো জানায়, কাগজে কলমে নৌযানটির তলদেশের গভীরতা এক দশমিক ৬৮ মিটার দেখানো হলেও কার্যত এর গভীরতা মাত্র শূন্য দশমিক ৯ মিটার পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাপ্ত এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মুঈনউদ্দিন জুলফিকারকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহারপূর্বক প্রধান কার্যালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হলেও মূল তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁকে দায়ী করা হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান নাজমুল হকের সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে, এমভি মিরাজ-৪ লঞ্চটিও নানা দিক থেকেই অবকাঠামোগতভাবে ত্রুটিপূর্ণ ছিল। তা সত্ত্বেও ডস এর ঢাকা (সদরঘাট) কার্যালয়ের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মির্জা সাইফুর রহমান লঞ্চটিকে ফিটনেস সনদ প্রদান করে চলাচলের সুযোগ করে দেন। অথচ অভিযুক্ত এই কর্মকর্তাকে রক্ষার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে কালক্ষেপন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌ, সড়ক ও রেলখাত রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আশীষ কুমার দে বলেন, দায়ী কর্মকর্তাদের বাঁচাতেই তদন্ত প্রতিবেদন দিতে অহেতুক গড়িমসি করা হচ্ছে।  ৪০ দিনের মাথায় একটির প্রতিবেদন গোপানে জমা দেয়া হলেও সেখানে মূল অভিযুক্তকে দায়ী করা হয়নি। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে আশীষ কুমার দে জানান।

নিজস্ব প্রতিনিধি