উপকূলীয় অঞ্চলে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা ।। মারাত্মক ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম

উপকূলীয় অঞ্চলে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা ।। মারাত্মক ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম

ফারুক আহমেদ ও মোক্তার হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেনের’ কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। এছাড়া মংলাকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে। এদিকে শহর রক্ষা বাঁধ অরক্ষিত থাকায় মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরী। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূণির্ঝড় ‘মহাসেনর’ প্রভাবে চট্টগ্রামে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর উপকূলীয় ১১টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন। একই সঙ্গে ঝুঁকিতে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি, নৌ বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি নেভাল অ্যাকাডেমি, বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি, চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলি ইপিজেড, রাষ্ট্রীয় তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ প্রায় এক হাজার মাঝারি ও ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এসব স্থাপনা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ের পর সরকার অরক্ষিত শহর রক্ষায় পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। ৯৫ সালে নির্মাণ শেষ হওয়া বেড়িবাঁধটির কোনো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় এটির পাঁচটি স্থানের বিশাল অংশজুড়ে ভেঙে গেছে। বর্ষার স্বাভাবিক জোয়ারেই এসব জায়গা দিয়ে শহরে পানি ঢুকে যায়।  স্থানীয়দের আশঙ্কা এবারের ‘মহাসেন’ আঘাত হানলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। ঝুঁকিতে থাকা এলাকার বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম সুজন জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ‘মহাসেনর’ যে গতি দেখা যাচ্ছে সে গতিতে উপকূলে আঘাত হানলে চট্টগ্রাম নগরীর অর্ধেক এলাকায় ভয়াবহ প্লাবনে ডুবে যাবে। এতে শুধু এলাকার বাসিন্দারেই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের বেশ কয়েকটি প্রধান স্থাপনাসহ এক হাজারের অধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানের কথা থাকলেও তারা বাঁধ নির্মাণের পর কোনো রক্ষণাবেক্ষণই করেনি। সংস্থাটি পতেঙ্গার তিনটি স্থানে এবং আনন্দবাজার ও হালিশহরে বড় বড় ভাঙন রোধেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

অপরদিকে, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন বাংলাদেশি উপকূলের দিকে আরো এগিয়ে এসেছে। ঘূর্ণিঝড়টি মংলা বন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৪২৬ কিমি, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৪৬৩ কিমি দূরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। ১৫ মে (বুধবার) বিকেল ৩টায় স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্রে মহাসেনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)। বৃহস্পতিবার দিনের প্রথমে ভাগে খুলনা ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। স্পারসোর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুরম, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরই মধ্যে আবহাওয়া অফিস থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সাবাজারে ৭ নম্বর এলাকায় বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া মংলায় ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে স্পারসো।

নিজস্ব প্রতিনিধি