২৭ ও ২৮ মার্চ ১৮-দলীয় জোটের ৩৬ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান

২৭ ও ২৮ মার্চ ১৮-দলীয় জোটের ৩৬ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার সকল নেতাকর্মীর মুক্তি, সরকারের নির্দেশে পরিচালিত গণহত্যার প্রতিবাদ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা দুই দিন হরতালের ডাক দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট। সোমবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘোষণা দেন। লিখিত বক্তৃতায় তিনি বলেন,  বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার গত ৪ বছরে দেশ শাসনের নামে যে অপশাসন চালিয়ে যাচ্ছে তাতে দেশের স্বাধীনতা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং জানমালের নিরাপত্তা আজ বিলীন হয়ে গেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে সরকার এখন জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ যে কোনো কর্মসূচিতে সরাসরি গুলিবর্ষণের মতো বর্বরতা শুরু করেছে। এক্ষেত্রে পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ক্রিয়াকলাপে শুধু সহযোগিতা নয় বরং তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে নির্যাতন চালাচ্ছে। সম্প্রতি এই বর্বরতা এবং পৈশাচিকতার মাত্রা এতটাই লাগামহীন হয়েছে যে, একজন সাধারণ মানুষের জন্যও ঘর থেকে বের হয়ে সুস্থ অবস্থায় ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা হারিয়ে গেছে।  তিনি বলেন, গত ১১ মার্চ নয়া পল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণের নাটক সাজিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিনা অনুমতিতে পুলিশ ডাকাতের মতো হানা দেয় এবং দরজা ভেঙে দলের শীর্ষ নেতাসহ দলীয় কর্মীদের ন্যক্কারজনকভাবে গণহারে গ্রেফতার, মারপিট, ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করেছে যা বিশ্ববাসী টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট গত ১১ মার্চে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গ্রেফতার ১৫৪ নেতাকর্মীর ১৪ মার্চের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল। সংবাদ সম্মেলন এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল যে, ১৪ মার্চের মধ্যে সরকার আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে ১৮ ও ১৯ মার্চ দেশব্যাপী ৩৬ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল পালন করা হবে। দেশের জনগণ সেই হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনও করেছে।  তিনি বলেন, গত ২০ মার্চ গ্রেফতার নেতাকর্মীদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত দুটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় ১৫১ জন নেতাকর্মীকে মোট ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠায়।  মির্জা ফখরুল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যেভাবে রাজবন্দিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে কোর্টে হাজির করা হয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। যেখানে দেশে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ঠাণ্ডা মাথার খুনিদেরকে সুকৌশলে সরকার জেল থেকে মুক্তি দিচ্ছে সেখানে একই দেশে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে যেভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নির্যাতন ও অপমান করা হচ্ছে তা প্রকাশ করার ভাষা আমাদের জানা নেই। সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে চিরতরে কুক্ষিগত করার কুমানসে সংবিধানকে ইচ্ছামত কাঁটাছেড়া করে প্রচলিত সমস্ত আইন-কানুনকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করার যে নজীর স্থাপন করেছে তা একদলীয় জঙ্গলি শাসনেরই নতুন সংস্করণ।

মির্জা ফখরুল বলেন,  গত ২০ মার্চ দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে শোকবাণী দেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বঙ্গভবনে যান এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতির ইন্তেকালের পর রাষ্ট্রঘোষিত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য এই তিন দিন বিএনপি ঘোষিত সব কর্মসূচি স্থগিত করা হয় এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই তিন দিনে  বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট নিজেদের সব কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে এবং সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, নির্লজ্জ দলীয়করণ, হত্যা, গুপ্তহত্যা, গুম, অপহরণ ও দখল বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা থেকে বিরত ছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, রাষ্ট্রীয় শোকের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে সরকারি বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। গত ২১ মার্চ মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. হামিদুর রহমান হেলাল মাগরিবের নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে বাসার কাছে ওঁত পেতে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার ওপর বোমা হামলা চালায়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা  হেলালকে জবাই করে নির্মমভাবে হত্যার পর পালিয়ে যায়। বোমার শব্দে হেলালের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তার উপরও বোমা হামলা চালায়। বোমার আঘাতে হামিদুর রহমান হেলালের মেয়ে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর মারা যায়। এর মধ্যে গত ২১ মার্চ সকালে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় পূর্ব দরিয়াপুর গ্রামে ১৮ ও ১৯ মার্চের হরতালে দায়েরকৃত মিথ্যা ও বানোয়াট মামলার আসামি ধরার অজুহাতে পুলিশ রাতে অভিযান চালায়। পুলিশের বাড়াবাড়িতে গ্রামবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে আসামি ধরতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালায় এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে যুবদল নেতা ইন্তাজুলকে হত্যা করে। গুলিবর্ষণে আতিয়ার, শহীদুল, লুৎফর, ফাতেমাসহ ৩০/৩৫ জন গুরুতর আহত হয়।  একই দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হাসান, সদস্য পারভেজ আহমেদ, মাসুদুর রহমান ও রাহাদ হোসেনকে চাইনিজ কুড়াল এবং চাপাতি দিয়ে নির্দয়ভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তারা বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।  এছাড়া, গত ২২ মার্চ যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামে পুলিশ নিরীহ জনগণের ওপর একই কায়দায় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে যুবদল নেতা আনিসুর রহমানকে হত্যা করে। এ ঘটনায় প্রায় ৩০ জন গুলিবিদ্ধ এবং ৫০-৬০ জন নিরীহ মানুষ রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। গত ২১ মার্চ যশোরের চৌগাছায় চিহ্নিত আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নারায়ণপুর ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি ইউপি সদস্য আবুল কাশেমের দুই হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন।  মির্জা ফখরুল বলেন, নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে গত ১৮ ও ১৯ মার্চ দেশব্যাপী ৩৬ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। সরকার নেতা-কর্মীদের মুক্তির গণদাবিকে উপেক্ষা করে ১৫১ জন নেতাকর্মীকে দুটি মিথ্যা ও সাজানো মামলায় রাষ্ট্রীয় শোকের সময়ও ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এক সঙ্গে এতো নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ডা. রেদোয়ান উল্লাহ সাহেদী, এলডিপির মহাসচিব ডা. রেদোয়ান আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, বিজেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম খান, লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, মুসলিম লীগের মহাসচিব আতিকুল ইসলাম, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল মালেক চৌধুরী, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবদুর রশীদ প্রধান, এনডিপির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, এনপিপি মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলমা মোস্তফা ভূঁইয়া, জাগপার যুগ্ম-মহাসচিব আসাদুর রহমান খান, খেলাফত মজলিসের মাওলানা শফিক উদ্দিন প্রমুখ।

নিজস্ব প্রতিনিধি