সারাদেশে জামায়াত-পুলিশ ব্যাপক সংঘর্ষ ভাঙচুর বিক্ষোভ,বগুড়া-যশোরে নিহত ৫ ।। ২ ফেব্রুয়ারী বগুড়ায় হরতাল

সারাদেশে জামায়াত-পুলিশ ব্যাপক সংঘর্ষ ভাঙচুর বিক্ষোভ,বগুড়া-যশোরে নিহত ৫ ।। ২ ফেব্রুয়ারী বগুড়ায় হরতাল

বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা ৩১ জানুয়ারীর হরতালে বগুড়ায় ও যশোরে একজন পুলিশ কনস্টেবলসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় চার জামায়াত-শিবিরকর্মী নিহত হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির তুমুল সংঘর্ষে নিহতের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। নিহতের মধ্যে তিন শিবিরকর্মী এবং একজন জামায়াত বলে দাবী করেছে জামায়াত। এর প্রতিবাদে শনিবারও হরতাল ডেকেছে দলটি। আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবারের হরতালে পিকেটারদের সঙ্গে হরতালবিরোধীদের সংঘর্ষে দুপুরে দুইজন শিবির নেতা নিহত হয়। এর জের ধরে পর পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে এবং আরো দুই শিবিরকর্মী নিহত হয়। তবে শিবিরকর্মীরা এক পর্যায়ে কোনঠাসা করে ফেললে পুলিশ গুলি ছুড়তে ‘বাধ্য’ হয় বলে জানান বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মকবুল হোসেন। এক গুলির মুখে পিছু হটে শিবিরকর্মীরা আযিযুল হক কলেজের একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ছাত্রাবাসে আগুন দেয়, যেটিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা থাকতেন বলে স্থানীয়রা জানায়। সংঘর্ষে নিহতদের চার জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন- ছাত্রশিবিরের আযিযুল হক কলেজ শাখার সভাপতি আবু রুহানী, শিবিরকর্মী আবদুল্লাহ. মোহামদ শরীফ ও ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। জামায়াতের বগুড়া শহর শাখার সেক্রেটারি জানান, বিকালে, জামায়াতকর্মী হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শনিবার বগুড়া জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। এদিকে হরতালে শিবির-পুলিশ সংঘষের সময় জহিরুল ইসলাম নামের পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। তিনি সংঘর্ষের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক সময় তকে হাসপাতলে নিলে তিনি সেখানে মারা যান। হৃদরোগে মারা যান বলে পুলিশ ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তার বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামে। দুই মাস পর তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। মনিরামপুর থানার ওসি আলী আযম জানান, সকাল পৌনে ৬টার দিকে জামায়াত-শিবিরের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী লাঠি-সোটা নিয়ে পৌর শহরে মিছিল বের করে। মিছিলটি স্থানীয় পুরান বাস স্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর এক পর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল জহুরুল ইসলাম (৫৫) পড়ে যান। তাকে প্রথমে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেয়া হয়। সেখান থেকে যশোর পুলিশ লাইন হাসপাতাল ও পরে যশোর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশরাফুল ইসলাম আরিফ বলেন, জহুরুল ইসলাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা ভাল না থাকায় তাকে যশোরে স্থানান্তর করা হয়। যশোর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল হাদী জানান, তাদের হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই জহুরুল ইসলাম মারা যান।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল এবং আটক নেতাদের মুক্তি দাবিতে জামায়াতের ডাকা হরতালে বৃহস্পতিবার দিনের প্রথমভাগে কয়েকটি স্থানে পিকেটারদের সঙ্গে হরতালবিরোধীদের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন রুহানী ও মিজান। পরে হাসপাতালে মারা যান এই দুজন। রুহানীর মৃত্যুর পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন আবদুল্লাহ। নিহত মিজানুর রহমানকে জামায়াত তাদের কর্মী বলে দাবি করলেও পুলিশ বলছে, এই ব্যক্তি ব্যবসায়িক কাজে কুমিল্লা থেকে বগুড়া এসেছিলেন। জামায়াত দাবি করেছে, আওয়ামী লীগকর্মীদের হামলায় রুহানী ও মিজানুর মারা গেছেন। তবে পুলিশের দাবি, রুহানী সংঘর্ষে নিহত হলেও পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মিজানের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। মজানুরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। সকালে শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় হরতালের পক্ষে-বিপক্ষের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন শিবির নেতা রুহানী। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তিনি মারা যান বলে জানান জামায়াত নেতা মাজেদুর। শিবিরের একটি মিছিল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তারা হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে ঘটাতে সাতমাথায় এগিয়ে আসে। এ সময় তারা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হাতবোমা ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তারা পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে থানায় ঢুকিয়ে দেয়। এরপর প্রায় ৪ শতাধিক পুলিশ- র‌্যাব সদস্য কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছুড়তে থাকলে শিবিরকর্মীরা সাতমাথা ছেড়ে আযিযুল হক কলেজের দিকে চলে যায়। কলেজে কাছে জামিলনগর এলাকায় গিয়েই শিবিরকর্মীরা জুয়েল ছাত্রাবাসে আগুন দেয়। এতে ছাত্রলীগের অনেক কর্মী থাকতেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এএসপি মকবুল জানান, ছাত্রাবাসের আগুল লাগার খবর পেয়ে অগি্ননির্বাপক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে পুলিশ আগুন নেভাতে যায়। তখন জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর গুলি ও বোমা ছুড়তে থাকে। তখন পুলিশও আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা গুলি, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে,” বলেন তিনি। তিনি কীভাবে নিহত হয়েছেন, সেই বিষয়ে পুলিশের স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আমদের প্রতিনিধি জানান, সারাদেশে ডাকা এই হরতালে বগুড়া শহরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর চালায় জামায়াতকর্মীরা। সকাল ৮টার দিকে শিবিরকর্মীরা উপশহর এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা ও একটি মটর সাইকেল ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ দুই পিকেটারকে আটক করলে শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটছুড়তে থাকে। ওই সময় পুলিশের একটি শটগান খোয়া যায়। পরে ধাওয়া দিয়ে ওই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

বিশেষ প্রতিনিধি