বিশ্বজিৎ হত্যাঃ গ্রেফতারকৃতদের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশে পুলিশের অনীহা

বিশ্বজিৎ হত্যাঃ গ্রেফতারকৃতদের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশে পুলিশের অনীহা

বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ পুরান ঢাকায় দর্জি শ্রমিক বিশ্বজিৎ দাস খুনের সঙ্গে ১১ জনকে গ্রেফতারের কথা অবশেষে স্বীকার করেছে মহানগর পুলিশ। ১৪ ডিসেম্বর (শুক্রবার) পুলিশ কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে ৩ জনকে পৃথক ৮ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তবে কাগজ-কলমে ৭ জনের বেশি গ্রেফতার দেখাতে পারছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে প্রধান অভিযুক্ত ভয়ঙ্কর ছাত্রলীগ কর্মী রফিকুল ইসলাম শাকিলকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সে গোপনে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিদেশ পালিয়ে যেতে পারে বলে গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন।

উল্লেখ্য, ৯ ডিসেম্বর অবরোধ চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছের একটি দোতলা ভবনে নির্মমভাবে ধারালো চাপাতির আঘাতে খুন হন বিশ্বজিৎ। মহানগর পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত মোট ১১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। সূত্রাপুর থানার এসআই মাহাবুবুল আলম আকন্দ মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের আদালতে গ্রেফতারকৃত মাহফুজুর রহমান নাহিদ, কাইয়ুম মিয়া টিপু ও এইচ এম কিবরিয়াকে হাজির করেন। এ সময় তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিলপূর্বক আসামিদের জামিন প্রার্থনা করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেকের ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা হয় মাহাবুবুল আলম আকন্দের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৩ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। বাকিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জনকে ৫৪ ধারায় আটক, পরে আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতার করার হিসাব তিনি দেখাতে পারলেও বাকি জনের ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছুই জানাতে পারেননি। এমনকি তাদের নাম-পরিচয়ও বলতে পারেননি। কারাগারেও এ মামলায় ৪ জন ছাড়া অন্য কেউ নেই বলে কারাগার সূত্র জানিয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার পুলিশ কর্মকর্তারা এ মামলায় ৩ জনকে গ্রেফতারের কথা বললেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছিলেন ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগের দিন তিনি এ মামলায় ৮ জনকে গ্রেফতারের কথা বলেন। এ নিয়ে বিশ্বজিতের খুনের খুনিদের গ্রেফতারে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। কেননা কাগজে-কলমে এ মামলায় ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, যে ৩ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তারা ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কেননা তাদের ছবি বিভিন্ন মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। তারা গ্রেফতারের পর নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকারও করেছে। এরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের রাজনীতির ব্যাপারে নানা আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শাকিলসহ এদের সবাইকে এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার নেতারা শেল্টার দিতেন। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই পড়ালেখা করতে এসে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী বনে যায় শাকিলসহ অপররা। অর্থ উপার্জনের লোভ ও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি, আশপাশের দোকানপাট, মার্কেট থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, টেন্ডার কিংবা সিট বাণিজ্য থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে ঘটনার পর খুনিদের রক্ষায় উঠেপড়ে লাগেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগ নেতারা। তারা গ্রেফতারকৃত এবং পলাতকদের রক্ষায় মন্ত্রী, রাজনীতিক নেতা থেকে সমাজের বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর লোকের সঙ্গে তদবিরও শুরু করেছেন। ওই নেতাদের শেল্টারে শাকিল এমন আছে সীমান্ত দিয়ে দেশের বাইরেও পালিয়ে যেতে পারে। কেননা তাকে গ্রেফতারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান, বরিশালে গ্রামের বাড়ি এমনকি সম্ভাব্য অনেক স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু তাকে গ্রেফতার তো দূরের কথা, অবস্থানও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। গ্রেফতারকৃতরা শাকিল কোথায় আছে তাও ঘটনার পর থেকে জানে না বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। অথচ এ শাকিলের ছবিই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশি প্রচার হয়েছে। সে-ই স্টিলের তৈরি ধারালো চাপাতি দিয়ে বিশ্বজিৎকে এলোপাতাড়ি জখম করে। পরে সে বীরদর্পে স্থান ত্যাগ করে। আর তাকে গ্রেফতার করতে না পারলে ঘটনার প্রকৃত কারণ বেরিয়েও আসবে না।
প্রসঙ্গত, অবরোধের দিন বিশ্বজিৎ পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছের রাস্তা দিয়ে হেঁটে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এ সময় ওই এলাকায় ছাত্রলীগ একটি মিছিল বের করে। মিছিলের পেছন দিক থেকে এ সময় পর পর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। মিছিলকারীরা বোমা দুটি কে মেরেছে তাকে খুঁজতে থাকে। এরই মধ্যে পেয়ে যায় বিশ্বজিৎকে। বিশ্বজিৎ নিজের পরিচয় তুলে ধরলেও ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে ছাত্রদলের লোক বলে ধরে এবং এলোপাতাড়ি চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় পরে থানা ও আদালতে পৃথক দুটি মামলা হয়।

বিশেষ প্রতিনিধি