আবাসিক এলাকায় কয়েক হাজার অবৈধ শিল্প কারখানাঃ ঝুঁকিতে নগরবাসী

আবাসিক এলাকায় কয়েক হাজার অবৈধ শিল্প কারখানাঃ ঝুঁকিতে নগরবাসী

কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজধানীর আবাসিক এলাকাতেই একের পর এক গড়ে উঠছে অবৈধ শিল্প-কারখানা। নগরবাসী আবাসিক এলাকায় কারখানার আধিক্যে অসহায়। ফলে বাধ্য হয়েই নগরবাসীর অনেককেই কারখানা ভবনে কিংবা এর আশপাশে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে হচ্ছে। এতে অগ্নিকান্ড, ভবনধ্বস, শব্দদূষণসহ নানা ধরনের দূষণের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। সব কারখানা শুধু বিড়ম্বনাই নয় রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব শিল্প কারখানার মধ্যে রয়েছে, ব্যাটারী ঢালাই, ওষধ, সামগ্রী, নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ, পলিথিনের দানা, প্লাষ্টিক সরঞ্জাম, বৈদুতিক পাখা, আচার চকলেট, বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাদ্য সামগ্রী তৈরী হচ্ছ্। এছাড়াও রয়েছে ঝালাই, কেমিকেল, রেক্টিফইড, স্পিরিড, নানা ধরনের সুগন্ধি, আতর, আতশবাজি, লাইসেন্সবীহিন বিদ্যুতের তার, নকল মবিল তৈরীর কারখানা, পটকা, সাইকেল, নাটবল্টু, খেলনা, প্লাষ্টিক সামগ্রীর কারখানা। একই সাথে নকল প্রসাধনী সামগ্রী বিভিন্ন ধরনের গহনা, জুতা স্যান্ডেল, রাবার রং, সলিউশন, ব্লিচিং পাউডার, ওয়াশিং সামগ্রী, ভিসিডি প্লেয়ারসহ আরো অনেক পণ্য তৈরীর কারখানা। নিয়মনীতি না মেনেই প্রকাশ্যেই চালু থাকছে এসব অবৈধ বেশীরভাগই লাইসেন্সবিহীন শিল্প কারখানা। প্রশাসন জানলেও অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ।
পরিবেশ অধিদফতরের একটি সূত্রমতে, পুরান ঢাকার ১০ থানা এলাকাতে এখনও রয়েছে ২৫ হাজারেরও বেশি অবৈধ রাসায়নিক মজুদের গুদাম এবং কারখানা। এই ১০ থানা এলাকা হচ্ছে লালবাগ, হাজারীবাগ, কোতোয়ালি, চকবাজার, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী ও সূত্রাপুর। এসব রাসায়সিক ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র হাজারখানেক কারখানার ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। বাকিগুলোর কোন কাগজপত্রই নেই। ট্রেড লাইসেন্সধারী প্রায় হাজারখানেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আবার বাধ্যতামূলক ফায়ার লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ১৮৭ প্রতিষ্ঠানের। আতঙ্কের বিষয় হলো ২৫ হাজার অবৈধ কারখানার মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আবাসিক ভবন বা বাসাবাড়িতে। এই ভবনগুলোরও বেশিরভাগই পুরনো, যখন-তখন ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা। এসব জীর্ণ ভবন আর কারখানার দিকে তাকালে যেকোন সচেতন মানুষই আতঙ্কিত হবেন।
এসব কারখানায় অবাধে বিস্ফোরক জাতীয় কেমিক্যাল এবং অতিমাত্রায় দাহ্য কেমিক্যালের ব্যবহার চলছে বছরের পর বছর ধরে। পরিস্থিতি এমন যে, পুরনো ঢাকা আবাসিক এলাকা নাকি শিল্প এলাকা তা পৃথক করাই এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
অথচ কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী পরিবেশগত ছাড়পত্র নেয়ার বিধান রয়েছে। আইনের ১২ ধারায় রয়েছে, মহাপরিচালকের নিকট হতে, বিধিমালা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতিরেকে কোন এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। এ ধারা অমান্য করলে অনধিক ৩ (তিন) বছর সশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের ব্যবস্থা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন স্তরের লোকজন আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এসব অবৈধ কারখানা থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকেন। এজন্য এলাকাবাসী বাধা না দিলেও কেউ তা শুনছে না। বরং এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা শিল্প কারখানা পরিচালিত হচ্ছে পেশীশক্তির মাধ্যমে। আর তাদেরকে আড়ালে সহায়তা করছে পুলিশ প্রশাসন। ফলে ভূক্তভোগীদের কোন অভিযোগ আমলে নেয় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জীবন ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বা হুমকী হতে পারে এমন কোন কারখানা বা দোকানের অনুমতি নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের। এসব এলাকায় যে সব কারখানা গড়ে উঠেছে তার শতকরা ৮০ ভাগই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় নেই। এসব কারখানা চলছে ডিসিসির ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত মহানগরীর জন্য ইন্ডাষ্ট্রিয়াল জোন নগরীর বাইরে গড়ে তুলতে হবে। তবে বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা উচিত। তবে সেখানে কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ সেখানে অবশ্যই প্রতিকারের জন্য এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে রাজউক জানায়, পরিকল্পিত নগর গড়তে হলে সবাইকে একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে। ইতিমধ্যে ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে আইন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিনিধি