ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সকল কার্যালয় ধূমপানমুক্ত ঘোষণা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সকল কার্যালয় ধূমপানমুক্ত ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৮০০ (এক হাজার আটশত) অগ্নিকান্ডের অন্যতম কারণ হচ্ছে ধূমপান। অর্থাৎ ধূমপানের সময় বিড়ি ও সিগারেটের শেষাংশ থেকে বিপুলসংখ্যক অগ্নিকান্ড ঘটে থাকে। এজন্য বাজার, শপিং মলসহ সব জনসমাগমস্থল ধূমপানমুক্ত রাখা সম্ভব হলে ধূমপানজনিত অগ্নিকান্ড প্রতিরোধ অনেকাংশে সম্ভব। ২৩ নভেম্বর (শুক্রবার) সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর মিলনায়তনে “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’র করণীয়” বিষয়ক এক সেমিনারে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) জনাব আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট) এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসাবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (প্রাক্তন পিজি) ও হাসপাতাল এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন। এতে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. মোস্তফা জামান এবং একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট চলচিত্র ব্যক্তিত্ব আহমেদ শরীফ প্রমুখ। প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব:) জনাব আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, ধূমপান অগ্নিকান্ডের অন্যতম প্রধান কারণ। ১২ ভাগ অগ্নিকান্ডের জন্য দায়ী ধূমপান। তাই প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ধূমপানকে নিরুৎসাহ যুগিয়ে আসছে। সারাদেশে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ২৫৪টি ফায়ার স্টেশন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। আজ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে কেউ ধূমপান করতে পারবে না। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্ব স্ব এলাকায় প্রতি মাসে কমপক্ষে ৪টি জনসংযোগ করা হয়। এসব জনসংযোগ কর্মসূচীতে ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে যুক্ত করা হবে। অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের তিন দিনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এসব প্রশিক্ষণে ধূমপান প্রতিরোধ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যুক্ত করা হবে।

অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, পরোক্ষ ধূমপানের কারনে শিশু ও নারীদের ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগসহ নানা রকম রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এজন্য উন্নত দেশগুলো পরোক্ষ ধূমপান থেকে শিশু-নারীদের রক্ষায় সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন শতভাগ ধূমপানমুক্ত করেছে। আমাদেরও সব প্রতিষ্ঠান শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে হবে। গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘস্থায়ী ধূমপান মানুষের গড় আয়ু ১০ বছর কমিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, ধূমপায়ীদের মৃত্যু হয়েছে নানরকম ভয়াবহ অসুখে, দীর্ঘদিন রোগে ভুগে। সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ুর জন্য ধূমপান বর্জন করা উচিত। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলোর সব রকম প্রচারণা নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

ডা. মোস্তফা জামান ২০০৪ সালের গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ধূমপানসহ তামাকজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়। ধূমপান মানুষের আয়ু ক্রমশ কমিয়ে ফেলে। তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর অধূমপায়ী কর্মীদের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতিষ্ঠানের সব কার্যালয় ধূমপানমুক্ত করা দরকার। চলচ্চিত্রাভিনেতা আহমদ শরীফ ব্যক্তি জীবনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমি গত ২২ বছর ধূমপান করি না। ধূমপান বন্ধ করায় আমার শারীরিক ও মানসিক মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি চিকিৎসকের পরামর্শে ও নিজের সুস্থ্যতার জন্য ধূমপান ছেড়েছি। শুধু ধূমপান ত্যাগ-ই করিনি, ধূমপান বর্জনে অন্যদের উৎসাহ যোগাচ্ছি। মানুষের কাছে সবচাইতে মূল্যবান তার নিজের জীবন।

এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ধূমপায়ীর ধূমপানের ফলে অধূমপায়ীর অধিকার ক্ষুন্ন হয়। বাংলাদেশ প্রায় ১ কোটি নারী পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি হতে মানুষকে রক্ষায় ধূমপানমুক্ত স্থানের পরিধি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। হেলাল আহমেদ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনগনকে আইন পালনে দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর অতিরিক্ত মহাপরিচালকবৃন্দ ও যুগ্ম পরিচালকবৃন্দসহ পদস্থ কর্মকর্তা, জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব), নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটি, প্রত্যাশা, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিজস্ব প্রতিনিধি