নামেই ডিসিসির পাঠাগার!

নামেই ডিসিসির পাঠাগার!

কাজী মাহফুজুর রহমাহ শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ নামেই পাঠাগার। পাঠক আছে তো বই নেই। বই আছে তো লাইব্রেয়িয়ান নেই। চাহিদানুযায়ী পত্রিকা, মানসম্মত পরিবেশ থাকার বিধান থাকলেও সেদিকে নজর নেই। তাছাড়া বেশিরভাগ পাঠাগারই থাকে বন্ধ। এই অবস্থা বিরাজ করছে ডিসিসির ২৩ পাঠাগারে। গত এক সপ্তাহে নগরীর কয়েকটি পাঠাগার ঘুরে এ দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) ৯০টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঠাগার রয়েছে মাত্র ২২ ওয়ার্ডে। এক ওয়ার্ডে ২টি পাঠাগার থাকলেও অন্য ৬৮টি ওয়াডের্র বাসিন্দারা বঞ্চিত হচ্ছেন পাঠাগারের সুবিধা থেকে। ২৩ পাঠাগারের বেশিরভাগেই নেই পাঠের পরিবেশ। ৭ এপ্রিল মগবাজার নয়াটোলা পার্ক সংলগ্ন ওয়াহাব মেমোরিয়াল পাঠাগারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ২টায় খোলার কথা থাকলেও খোলা হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়। ডিসিসির পরিছন্নতা কর্মী পালন করছেন লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব।

গত মাচর্র্ মাসে পাঠাগারের পাঠকসংখ্যা ছিল ১৮ জন। ডিসিসির নীতিমালা অনুযায়ী বই-ম্যাগাজিন এ পাঠাগারে দেওয়া হয় না। পাঠাগার খোলার সময়সীমাও জানেন না লাইব্রেরিয়ান। আলমিরা না খুলতে খুলতে জং ধরে গেছে। চাবিতে আর তালা খুলছে না। ৬ এপ্রিল নবাবগঞ্জ পাঠাগার সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় পাঠাগার বন্ধ পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রতিদিন সকালে ব্যায়ামাগার খোলার সময় সকাল ৭ টায় পাঠাগার খোলা হয়। এ সময় লোকজন আসেন। এলাকার কাউন্সিলর পত্রিকা রাখেন। এলাকাবাসী পত্রিকা পড়ে চলে যান। সারাদিন আর খোলা হয় না।

নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ আব্দুল খালেক জানান, পাঠাগারের জন্য কোনা লোক নেই। কাউন্সিলর সাহেব আমাকে চাবি দিয়েছেন পাঠাগার খোলার জন্য। মাঝে মধ্যে এক-দুজন পাঠক আসেন। কেউ বই পড়েন, কেউ নিয়ে যান। একবার নিলে ফেরত দেন না। একহাজারের বেশি বই ছিল। এখন ৩-৪শ’ আছে।

৪ এপ্রিল সরেজমিন আজিমপুর নতুন করবস্থান সংলগ্ন আজিমপুর গ্রন্থকেন্দ্রে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়। জানা গেছে, এ পাঠাগারটি খোলাই হয় না। আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকেই জানে না ওই জায়গায় একটি পাঠাগার আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাঠাগারে উপন্যাস, সাহিত্য ও রচনা সমগ্র রয়েছে; কিন্তু সেগুলো অনেক পুরনো। ফলে পাঠকরা পাঠাগারমুখী হ ন না। ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সমসাময়িক তেমন কোনো বই পাওয়া যায় না।

ডিসিসির নীতিমালায় যা আছে: ডিসিসি পরিচালিত পাঠাগার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতীত বিকাল ২ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। পাঠাগারে পাঠকরা সাধারণ গ্রন্থের পাশাপাশি দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, জার্নাল, গবেষণাপত্র, সায়েন্সফিকশন ইত্যাদি পাঠের সুযোগ থাকবে। ক্যাটালগ দর্শন ও গ্রন্থাগারিকের সহযোগিতা থাকবে। গ্রাফ, নকশা, ম্যাপ ও গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ অংশের ফটোকপি ফ্রি পাওয়ার সুবিধা থাকবে। অডিও, ভিডিওসামগ্রী পাওয়া যাবে। বঙ্ কেবিনেট থাকবে। লাইব্রেয়িয়ান পাঠকের প্রয়োজনীয় বই ও সামগ্রী পূরণে সচেতন থাকবে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট দাখিল করবে।

ডিসিসির ৮নং ওয়ার্ডও সাবেক কাউন্সিলর ফেরদৌসী আহমেদ (মিষ্টি) বলেন, এ ওয়ার্ডে অবস্থিত কমিশনার সাইদুর রহমান পাঠাগার। শুরু থেকেই কোনো জনবল নেই। আবেদন ও অনুরোধ করতে করতে হতাশ হয়ে এখন আর এ জন্য কাউকে কিছু বলি না।

১৯নং ওয়ার্ডও সাবেক কাউন্সিলর আ.ফ.ম আব্দুল আলীম (নকী) বলেন, এ ওয়ার্ডে কোনো পাঠাগার নেই। পাঠাগার করার চেষ্টা করছি।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এ বিষয়ে বলেন, ঢাকা শহরে প্রচুর পাঠক রয়েছে। ডিসিসি সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে বিধায় পাঠাগারগুলোর এ দশা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সংবাদ আসে এসব পাঠাগার এখন সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। ঢাকাবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ডিসিসির কাজ মানুষকে সেবা দেওয়া; কিন্তু তারা এখন এসব ভুলে লুটেপুটে খেতে ব্যস্ত থাকে। তিনি বলেন, পাঠাগারে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হলে নগরীর লাখ লাখ পাঠক উপকৃত হতো।

বিশেষ প্রতিনিধি