পরলোকে নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ!

পরলোকে নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ!

সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ আর নেই। ক্যান্সার নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এম এ মোমেন ১৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন।

তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশ ও বাংলাসাহিত্য হুমায়ূন আহমেদের অভাব বোধ করবে।

বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই লেখক হুমায়ূন আহমেদের বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। ১৯৪৮ সালে তিনি নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যিক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় সাফল্য তিনি বইবিমুখ এই জাতির তরুণ প্রজন্মের কাছে বইকে জনপ্রিয় করেন। সাধারণ মানুষের জীবন-যৌবনের কাব্যগাথা অসাধারণ কথামালায় ধারণ করে বাংলা সাহিত্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। এপার-ওপার দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় এই সাহিত্যিকের সৃষ্টিশীলতা হুমায়ূন ঘরনা বলে নতুন ধারার সূচনা করেছে।

ড. মোমেন বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশের একাধিক বার্তা সংস্থাকে টেলিফোনে বলেন, ‘একটু আগেই তাকে (হুমায়ূন) মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা।’ লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছোটভাই মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, বন্ধু মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে ড. মোমেনও মৃত্যুর সময় হাসপাতালে ছিলেন।

উল্লেখ্য, ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পর একুশে পদকজয়ী হুমায়ূনকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের উপদেষ্টা নিয়োগ করে সরকার।

হুমায়ূন যে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন, তা বুধবারই জানিয়েছিলেন ড. মোমেন। বৃহদান্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে যান হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে মেমোরিয়াল সস্নোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন তিনি। দুই পর্বে মোট ১২টি কেমোথেরাপি নেয়ার পর গত ১২ জুন বেলভ্যু হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. জেইন এবং ক্যান্সার সার্জন জজ মিলারের নেতৃত্বে হুমায়ূন আহমেদের দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর বাসায় ফিরেছিলেন এই লেখক। স্ত্রী শাওনসহ সন্তানদের নিয়ে কুইন্সে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকছিলেন তিনি। বাসায় ফিরলেও অবস্থার অবনতি ঘটলে আবার বেলভ্যু হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। সেখানে গত কয়েকদিন ধরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। তার মরদেহ স্থানীয় সংরক্ষণাগারে রাখা হয়েছে। আজ সেখানেই জুমার নামাজের পর তার প্রথম নামাজে জানাজা হবে। মৃতদেহ কবে দেশে আনা হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে আজ।

অস্ত্রোপচারের আগে পরিবার-আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে গত মাসে দুই সপ্তাহের জন্য দেশে আসেন হুমায়ূন। দেশের পুরোটা সময় গাজীপুরে নুহাশ পল্লীতে কাটিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালে জন্ম নেয়া হুমায়ূন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই লেখালেখি শুরু করে সাহিত্য সমালোচকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। নন্দিত নরকে তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। তারপর ধীরে ধীরে দেশের জনপ্রিয়তম কথাসাহিত্যিকে পরিণত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের এই শিক্ষক। লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠার পর অধ্যাপনা ছেড়ে দেন তিনি। টিভিতে নাটক লিখে ও নির্দেশনা দেয়ার পর চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন হুমায়ূন। এ জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন।

বিশেষ প্রতিনিধি