প্রতারণা এবং প্রবঞ্চনা….!

প্রতারণা এবং প্রবঞ্চনা….!

প্রতারণা। এই শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। প্রযুক্তির যুগে বিভিন্নভাবে আমাদের এই শব্দটি গ্রাস করছে। আমরা বিরক্ত হচ্ছি এবং এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে মেনেও নিচ্ছি। এ যেন পরাজয়কে স্বাগত জানানোর অভিনব কৌশল। সম্প্রতি মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে প্রবঞ্চনার শিকার হয়েছেন এসবিডি নিউজের নিয়মিত ফিচার লেখক জবরুল আলম সুমন। তিনি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।  

 

121 Dialing… প্যুঁউত প্যুঁউত প্যুঁউত… শুভ সন্ধ্যা… Dear Star Subscriber Welcome. বাংলায় শুনতে চাইলে ১ চাপুন, For English Press 2… (চাপলাম ১…) বিল সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ১ চাপুন, ওয়েলকাম টিউনের জন্য ২ চাপুন, FnF এবং ভ্যালু এ্যাডেড সার্ভিসের জন্য ৩ চাপুন, ইন্টারনেট সেবার জন্য ৪ চাপুন, কাষ্টমার ম্যানেজারদের সাথে কথা বলতে ৫ চাপুন… চাপলাম ৫… (মিনিট খানেক গ্রামীণ সঙ্গীত শোনানোর পর…) স্টার গ্রাহক হিসেবে আপনার কলটি বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, As a star subscriber your call is in handles on priority bases, please hold down. আরোও মিনিট পাঁচেক ধরে গ্রামীণ সঙ্গীতের ফাঁকে ফাঁকে আমি যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কেউ একজন কল করেছি তা শুনতে শুনতে যখন বিরক্তির চরম সীমায় পৌছেছি ঠিক তখনি একজন কাষ্টমার ম্যানেজারের বাদান্যতায় আমার কলটি রিসিভ করা হলো।
: শুভ সন্ধ্যা… স্যার, গ্রামীণ ফোন কাষ্টমার কেয়ার থেকে আমি সালেকিন বলছি, বলুন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি…
: আমি কোন সম্বোধনের পথে পা না বাড়িয়ে করেই সরাসরি আমার সমস্যা বলতে শুরু করলাম… গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আমার ইন্টারনেট কানেকশান খুব স্লো হয়ে আছে, তাছাড়া একটু পর পর ডিসকানেক্ট হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যাটা কেন হচ্ছে ?
: স্যার, আপনি কি মোবাইলে নেট ব্যবহার করছেন নাকি কম্প্যুটারে ?
: মূলত কম্পিউটারে, মোবাইলেও ব্যবহার করি তবে সমস্যাটা কম্পিউটারে হচ্ছে।
: কম্প্যুটারে মডেম দিয়ে নেট ব্যবহার করছেন নাকি মোবাইলকে মডেমরূপে ব্যবহার করছেন ?
: দুটোই ব্যবহার করি তবে মোবাইলকে মডেমরূপে ব্যবহার করি কারণ মোডেম এমনিতেই অনেক স্লো।
: কি হ্যান্ড সেট ব্যবহার করছেন ?
: আমি বুঝতেই পারছি সে কাল ক্ষেপন করার জন্য আমার সাথে কথা বলছে কারণ আমি কি হ্যান্ডসেট ব্যবহার করছি তা সে স্ক্রীণেই দেখতে পাচ্ছে তারপরও বিরক্তি নিয়ে বলি NOKIA N95 8GB।
: স্যার, আপনার কনফিগারেশন সেটিংস ঠিক আছে ত ? একটু চেক করে দেখুন।
: আমি অসীম ধৈর্য্যে রাগ সংবরণ করে বলি সেটিংস যদি ঠিক না থাকতো তাহলে তাহলে কি নেটের সংযোগ হতো ?
: জ্বি স্যার, স্যার আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি আপনার সংযোগে কোন সমস্যা নেই। আপনি কি আমাদের স্পেশালাইজড টিমের সাথে কথা বলবেন ? বললে আমি আপনার কলটি আমাদের স্পেশালাইজড টিমের কাছে ফরোয়ার্ড করে দেবো তারা হয়তো আপনাকে আরোও ভালো কোন সল্যুশন দিতে পারে।
: আচ্ছা, ঠিক আছে দিন… আমার কলটি স্পেশালাইজড টিমের কাছে ফরোয়ার্ড করার পর আরোও মিনিট তিনেক গ্রামীণ সঙ্গীত শোনানোর পর একজন ফোন ধরলো (নাম ভুলে গেছি)।
: শুভ সন্ধ্যা… স্যার, (ফরমাল কথা বার্তার পর) কি সমস্যা স্যার ?
আমি আবারো আমার সমস্যার আদ্যপান্ত তার কাছেও পূনরায় বর্ণনা করলাম। তিনিও আগের জনের মতো জানতে চাইলেন কিসে ব্যবহার করছি, কি দিয়ে ব্যবহার করছি হেন তেনসহ এই সমস্যা সেই সমস্যা আছে কিনা জিজ্ঞেস করলেন, আমার কাছ থেকে উত্তর জানার পর জানালেন গ্রামীণ ফোনের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মান আরোও উন্নত করার লক্ষ্যে গত ক’দিন থেকে নেটওয়ার্কে কাজ চলছে তাই আমরা এই সাময়িক সমস্যার কবলে পড়ায় গ্রামীণ ফোনের পক্ষ থেকে তিনি যারপর নাই দুঃখিত। আমার মাথা গেলো খারাপ হয়ে ইচ্ছে করলো খুবই কুৎসিত একটা গালি দিই… খুব কষ্টে নিজের ভদ্রলোকি বজায় রাখলাম। কোন কথা না বলে খট করে লাইনটা কেটে দিলাম। কিছুক্ষণ দাতের দুই পাটি দিয়ে দাদরা তালে কটমটকট কটমটকট শব্দ করে রাগ প্রশমিত করলাম।

আমি বুঝতে পারছিনা নেটওয়ার্কে কাজ চলছে তাই নেট স্লো বা সাময়িক সমস্যা করছে এই তথ্যটা দিতে এতো ফর্মালিটি মেইন্টেইন করার কি প্রয়োজন ছিলো ? কেন অহেতুকভাবে গ্রাহকদেরকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করা হচ্ছে ? প্রথম জনই বা কেন সঠিক তথ্য না দিয়ে স্পেলাইজড টিমের কাছে কলটা ট্রান্সফার করলো ? যাদেরকে কাষ্টমার ম্যানেজার হিসেবে চেয়ারে বসানো হয়েছে তারা কি লবিং করে চাকরীটা বগলদাবা করে কোন প্রশিক্ষণ না নিয়েই সমস্যাগ্রস্থ গ্রাহকের মুখোমুখী হচ্ছে ? এরা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষিত হলেও মুর্খের দল, এরা কেবল জানে দেশের টাকা কিভাবে গাট্টি বোচকা বেঁধে বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে হয়। ব্রিটিশ বেনিয়ার দল ১৯০ বছর এই দেশ শোষণ করেও যা নিয়ে যেতে পারেনি কেবল গ্রামীণ ফোন নামের প্রতিষ্ঠানটি গত পনেরো বছরে তারচেয়েও অনেক বেশি নিয়ে গেছে। তিন চার বছর আগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে গ্রামীণ ফোনের রোজকার মোট আয় প্রায় তিন কোটি টাকা !
সে হিসেব মতো প্রতি মাসে দেশের ৯০ কোটি টাকা কেবল গ্রামীণ ফোনই নিয়ে যেত আর এখন এই হিসেব দ্বিগুণ হবারই কথা। অপরদিকে VOIP ব্যবসার অযুহাত দেখিয়ে র‍্যাংসটেল, ঢাকা ফোন, বিজয় ফোনসহ দেশীয় সব ক’টি ওয়্যারলস ল্যান্ড ফোন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে দেয় সরকার। কিন্তু শুরু থেকেই গ্রামীণ ফোন, একটেল (রবী), সেবা (বাংলালিংক), ওয়ারিদ (এয়ারটেল) সহ সব ক’টি মোবাইল অপারেটর এখনো নির্বিগ্নে VOIP ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মাঝে মধ্যে তাদের ধরে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু দেশীয় ফোন কোম্পানীদের আর ছাড় পত্র দেয়া হয়নি। আমরা ভালো করেই জানি এর মূলে এইসব বিদেশী কোম্পানী রয়েছে কারণ তারা মোটা অংকের উৎকোচের ব্রিফকেস যথাযত কর্তৃপক্ষের বড় কর্তার হাতের গুঁজে দিয়ে তাদের ব্যবসাকে চাঙ্গা করে রাখতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে গলা টিপে হত্যা করেছে, ছাড়পত্র প্রাপ্তিতে বাঁধা দিচ্ছে। সেই সাথে একমাত্র দেশীয় বা সরকারী মোবাইল অপারেটর টেলিটককে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। সরকার যদি একটু সদয় হয় তবে আমাদের টেলিটকও হতে পারতো গ্রামীণ ফোনের বিকল্প। টেলিটকের সেবার মান ও নেটওয়ার্ক যদি বিস্তৃত করে তবে দেশের টাকা দেশেই থাকবে সেই সাথে সরকার ও জনগণ দুই উপকৃত হতে পারে। এখনই সময় এসেছে সরকারকে দরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করার।

বিঃদ্রঃ কোন বিশেষ মহলের সম্মান নষ্ট করার জন্য লেখাটি প্রকাশ করা হয়নি। লেখাটি বাস্তব ঘটনার আলোকে। সুতরাং লেখাটিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

ফিচার সম্পাদক