মাতববরদের ফতোয়াঃ শিবগঞ্জে গৃহবধূকে অবৈধভাবে মারপিট করার পর মাথা ন্যাড়া

মাতববরদের ফতোয়াঃ শিবগঞ্জে গৃহবধূকে অবৈধভাবে মারপিট করার পর মাথা ন্যাড়া

চপল সাহা, বগুড়া থেকে, এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ শ্বশুরের সঙ্গে পুত্রবধূর অবৈধ সর্ম্পক রয়েছে এমন অভিযোগে শ্বশুর আব্দুর রশিদ (৫০) ও পুত্রবধূ সালমা বেগম (২০) কে ব্যাপক মারপিটের পর মাথা ন্যাড়া করে (চুল কেটে দিয়ে) তাতে কালো রঙ মাখিয়ে সারা গ্রামে ঘুরিয়ে নিয়ে বেরিয়েছে গ্রাম্য মাতববররা। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুরে মাঝিহট্র ইউনিয়নের সৈয়দ দামগারা গ্রামে গত রবিবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায়। এ ঘটনায় গত সোমবার রাতে গ্রাম্য মাতববরসহ সালিশ বৈঠকের ৩২ জনের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে।

এরা হলো ওই গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান মন্ডলের ছেলে আবুল কাসেম মন্ডল (৩০), আব্দুল হামিদ মন্ডলের ছেলে তোফাজ্জল মন্ডল (৩৫)।

পুলিশ জানায়, উপজেলার মাঝিহট্র ইউনিয়নের সৈয়দ দামগারা গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে ট্রাকের হেলাপার জাকির মন্ডল গত ৭ মাস আগে আদমদীঘি উপজেলার বিনসারা গ্রামের আব্দুস ছালামের মেয়ে সালমা বেগমকে বিয়ে করেন। স্বামী ট্রাকের হেলপার হবার কারনে প্রায়ই বাইরে থাকতো। এ সুযোগে গ্রামের কতিপয় বখাটে যুবক নববধূ সালমাকে প্রায় উত্যক্ত করতো। এমনকি নানা রকম কু-প্রস্তাব দিতো। সালমা বিষয়টি একদিন তার স্বামী জাকিরকে জানালে সে গিয়ে বখাটেদের বারন করে। এনিয়ে তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এরপর থেকেই তারা নানাভাবে ওই পরিবারকে সমাজে হেয় করার জন্য ফন্দি ফিকির করে আসছিল।

ঘটনার ১৫ আগেও গ্রামের কতিপয় মাতববর পুত্রবধূ সঙ্গে আব্দুর রশিদের অবৈধ সর্ম্পক আছে দাবি করে বাড়িঘর ভেঙে অন্য কোথায় নিয়ে যাবার কথা বলে। তা না হলে বাড়িঘর উচ্ছেদের হুমকিও দেয় তারা

এ ঘটনায় জের ধরে গত রবিবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওই গ্রামের মাতববর মো.  ওবায়দুল্লাহ (৫০), ইছাহাক আলী (৩২), রজিব উদ্দিন (৪০) জাহিদুল ইসলাম (৩৫), ধলু মুন্সিসহ (৩৮) কমপক্ষে ৩০/৩৫ জন বেআইনীভাবে আব্দুল রশিদের বাড়িতে গিয়ে শ্বশুর ও পুত্রবধূর অবৈধ সর্ম্পক আছে দাবি করে জোর করে শালিস বসায়। শালিসের নামে প্রথমে  তারা উভয়কে লাঠি দিয়ে বেদম পিটায়। এরপর তারা কিলঘুষি মারে। এতে তারা দুই জন অসুস্থ হয়। পরে অবৈধ সর্ম্পকের শাস্তি হিসেবে বৃদ্ধ আ. রশিদ ও নববধূ সালমা বেগমের মাথার সমস্ত চুল কেটে ন্যাড়া করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা তাদের দুইজনকে পুরো গ্রাম ঘুরে নিয়ে বেড়ায়। এরপর শালিস বৈঠককারিরা উল্লাস করতে করতে তাদেরকে টেনে হেচড়ে দুই কিলোমিটার দুরে ত্রিমোহনী এলাকায় ইসাহার আলীর দোকানের সামনে আটকে রাখে।  এই বর্বরোচিত ঘটনা কমপক্ষে ৬শ মানুষ প্রত্যক্ষ করে। রাত ১০ টার দিকে পুলিশ আসছে শুনে শালিসকারিরা পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় আব্দুর রশিদের ছোট ভাই ভ্যানচালক আব্দুল জলিল মন্ডল বাদি হয়ে গ্রাম্য মাতববর শালিসকারি ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১৫ জন কে আসামী করে মোট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

শিবগঞ্জ থানার এসআই ও তদন্তকারি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন গৃহবধূ সালমা বর্তমানে শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) লুৎফর রহমান বলেন অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।   

বিশেষ প্রতিনিধি