ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে

এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্ক: রাজধানীসহ সারা দেশে বেড়েছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যা। মশা নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তারের পাশাপাশি এ বছর মৃত্যুহার আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। ঢাকায় ঈদুল আজহার ছুটির আগের দুই সপ্তাহ ধরে চলা জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১৫টি বাড়ির মধ্যে সাত থেকে আটটি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। এ বছর ৫ হাজার ৪০১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ২৩ জন।

বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলছেন, মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। আর মে-আগস্ট পর্যন্ত প্রকোপ থাকে সব থেকে বেশি। বর্তমান সময়টা হলো ডেঙ্গুর মৌসুম।

এডিস মশার বিস্তার আগে শুধু রাজধানীতে ছিল, এখন তা গ্রামাঞ্চলেও চলে গেছে। এর চিকিত্সা সাধারণত ঢাকাকেন্দ্রিক ও বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, এখনই সরকারের উচিত, সব পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আইসিইউ সাপোর্ট বিভাগীয় পর্যায়ে থাকতে হবে। নইলে ঢাকায় আনতে আনতে রোগী মারা যাবে।

বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেছেন, ডেঙ্গু মশা নিধনের দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রশাসন ব্যর্থ হলে এডিস মশার প্রকোপ বাড়বে। মানুষ আক্রান্ত হবে, মৃত্যুর হার বেশি হবে। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। বাসাবাড়ির মালিকদের দায়িত্ব আছে নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব রয়েছে। শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থাকা উচিত হবে না। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে দেশে ডেঙ্গু ভয়াবহ মৃত্যু ডেকে আনবে। ডেঙ্গু উপসর্গ হলো প্রচণ্ড জ্বর, গিরায় গিরায় ব্যথা, ব্যাকপেইন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও র্যাশ দেখা দেওয়া। এসব লক্ষণ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ফুল হাতা শার্ট-প্যান্ট পরিধান করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, রাজধানী থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সরকারের প্রশাসন আছে। এই চেইন যদি মশা নিধনে কাজ করে এবং মানুষ নিজেরাও সচেতন হয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ডেঙ্গু রোগীদের যাতে ঢাকামুখী না হতে হয়, সেজন্য বিভাগীয় পর্যায়ে আইসিইউ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে জটিল রোগীদের ঢাকায় আসতে না হয়।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিত্সা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার বলেছেন, মশার চরিত্র আচরণ অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। এটার কামড়ানোর ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। একটা জরিপে দেখা গেছে, ৫০ ভাগ আবর্জনা আর ৫০ ভাগ বাসাবাড়ির স্বচ্ছ পানিতে এই মশার উত্পত্তি হয়। কীটনাশক ব্যবহার করে, এটি সাধারণত মারা যায় না। এটা নিধন করতে হলে ওষুধও পরিবর্তন করতে হবে।

শ্যামলী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, এবার ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে দেশ। করোনার চেয়ে ডেঙ্গু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু কর্নার প্রস্তুত করছে। তবে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল পরিচালক বলেন, করোনা ও ডেঙ্গু রোগীদের জন্য মহাখালীতে ১ হাজার বেডের ডেডিকেটেড হাসপাতাল রয়েছে। প্রথম ধাপে সেখানে রোগীদের ভর্তি করার পরামর্শ দেন। সেখানে সামাল দিতে না পারলে রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা যেতে পারে।

বরিশালের স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের দুইটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ছয়টি সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২৪ জন ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় পিরোজপুরের নেছারাবাদ এলাকার বাসিন্দা ইসরাত জাহান মারা গেছেন। বরগুনা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন চাঁন মিয়া ও গোশাই দাসের মৃত্যু হয়েছে।

অপরদিকে, সারা দেশে করোনার সংক্রমণ ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির সংবাদে সিলেট অঞ্চলে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। সিলেট আন্তর্জাতিক ওসমানী বিমানবন্দর, সিলেটের তামাবিলসহ বিভিন্ন ইমিগ্রেশন সেন্টারে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এসবিডি নিউজ ডেস্ক