১২ মার্চের ঢাকার মহাসমাবেশকে সামনে রেখে ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ।। ১ দিনে গ্রেফতার ৫ শতাধিক!

১২ মার্চের ঢাকার মহাসমাবেশকে সামনে রেখে ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ।। ১ দিনে গ্রেফতার ৫ শতাধিক!

সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ প্রধান বিরোধীদল বিএনপির ১২ মার্চের ঢাকার মহাসমাবেশকে সামনে রেখে ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। গত  ৭ মার্চ (মঙ্গলবার) রাতে রাজধানী ও এর আশপাশ থেকে ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্দেহজনক (৫৪ ধারা), পের্ন্ডিং মামলা (আগের), ডিএমপি অ্যাক্ট কিংবা জিডিতে গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বেশিরভাগ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। এদিকে মহাসমাবেশে নাশকতা, সহিংসতার শঙ্কায় রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, ১২ মার্চের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কোনো মহল সুযোগ নিতে পারে। তারা নাশকতা করে কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করারও পরিকল্পনা করতে পারে। এতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ কারণে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে গণগ্রেফতারের প্রশ্নই ওঠে না।

৭ মার্চ বিকালে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পল্টনে এক রাতে ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ২০ জনকেই গ্রেফতার করা হয় এক মামলায়। গ্রেফতারকৃতরা আগের মামলার আসামি বলে থানা থেকে জানানো হয়। এছাড়া বাকিদের ৫৪ ধারা বা অন্য মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। একইভাবে দৈনিক বাংলার মোড়ে পুলিশের ওপর হামলায় ১১ জনকে গ্রেফতার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। আর ডিএমপি অ্যাক্টে ৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে পাঠানো হয় আদালতে। কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেফতার করে ৮ জনকে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ৫৪ ধারা ও ডিএমপি অ্যাক্টে মামলা হয়। হাজারীবাগে ৪, সবুজবাগে ৪ জনকে নিয়মিত মামলার সঙ্গে ৫৪ ধারার আসামি দেখানো হয়। এছাড়া মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় রাজধানীর ৪২ থানা এলাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীর আশপাশ থেকে অনেককে গ্রেফতার করা হয়। গত দুদিনে আসামি আসার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে নিম্ন আদালতের গারদখানা সূত্রে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে আসামি গ্রেফতারের সংখ্যা ৫০০’র বেশি ছাড়িয়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদস্যরা বলছেন, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার শঙ্কা আছে কি না সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দারা মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তা পর্যবেক্ষণ করছেন। এ সময় বেরিয়ে আসে মৌলবাদীগোষ্ঠী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগসাজশে সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করছে। দায় চাপানো হবে সরকারের ওপর। এছাড়া ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে মাঠ দখলে মরিয়া ছাত্রশিবির। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেতাকর্মীদের রাজধানীতে জড়ো করবে_ এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। এ কারণে মঙ্গলবার বিকাল থেকে উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে থানা পুলিশের সঙ্গে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পৃথক অভিযান শুরু করে। রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, বাসাবাড়ি, ছাত্রাবাস, মেস, মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতার করা হয় অনেককে। এ সুযোগে গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে পুলিশ বাণিজ্য শুরু করেছে। বিভিন্ন অভিযোগে থানায় গ্রেফতার করে এনে অপেক্ষাকৃত দুর্বল মামলা দেয়ার কথা বলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে গোয়েন্দা পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ থেকে কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানাতে পারেনি।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নাশকতা এড়াতে রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাবের সঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা গতকাল বিকাল থেকে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। পল্টনের সমাবেশস্থলসহ সচিবালয়, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালত, মন্ত্রী-এমপিদের বাসা, কূটনীতিকপাড়া, বিদেশি হাইকমিশন-দূতাবাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বিভিন্ন মার্কেট-শপিং সেন্টার, বাস, রেল, লঞ্চঘাটে এসবি, এনএসআই, ডিবি, সিআইডির কর্মকর্তারা নজরদারি করছেন। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বসানো হয়েছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরাও। একইসঙ্গে থানা পুলিশের নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে।

বিশেষ প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।