টেস্ট জয়ের বিলেতী স্বাদে বাংলাদেশ

টেস্ট জয়ের বিলেতী স্বাদে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক, এসবিডি নিউজ24 ডট কম: প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। ৩০ অক্টোবর মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ১০৮ রানের অবিস্মরণীয় এ জয় পায় টাইগাররা। কুক-ফিনদের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একাধিকবার জয়ের স্বাদ পেলেও লঙ্গার ভার্সনের ক্রিকেটে জয়টা ছিল অধরা। সেই অধরা স্বপ্নের জয়টাই আজ ধরা দিয়েছে মিরপুরে।

.
দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৩ রানের লক্ষ্যে মাঠে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিল ইংলিশরা। ওপেনিং জুঁটিতেই স্কোর বোর্ডে শতরান জমা করেছিলেন অধিনায়ক অ্যালিষ্টার কুক ও বেন ডাকেট। কিন্তু এরপরই ঘটে ছন্দপতন। মাত্র ৬৪ রানের মধ্যে পুরো দশ উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। মিরাজ ৬টি আর সাকিব চার উইকেট পেয়েছেন। ঢাকা টেস্টে জয়ের জন্য ২৭৩ রানের টার্গেটে মাঠে নেমেছিল সফরকারী ইংল্যান্ড। শুরুটাও দূর্দান্ত করেছিলেন দুই ওপেনার অ্যালিস্টার কুক ও বেন ডাকেট। স্বাগতিক বোলারদের চাপে রেখে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে টেস্ট ম্যাচে ওয়ানডে ষ্টাইলে ব্যাট চালাতে থাকেন। দ্রুতই রান বাড়তে থাকে স্কোর বোর্ডে। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি তুলে বিরতিতে যান ডাকেট। তাদের ব্যাটের ঝড় দেখে মনে হচ্ছিল ম্যাচটিকে ‘একতরফা’ বানিয়ে ফেলছেন।

.
২১.৫ ওভারে দলীয় শত রান পূর্ণ করেন এ জুটি। ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠে অধিনায়কের মুশফিকের কপালে। কিন্তু আচমকাই স্বাগতিক শিবিরে স্বস্তির সু-বাতাস বইয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ইনিংসের ২৪তম ওভারের প্রথম বলেই হাফসেঞ্চুরি করা ডাকেটকে ফিরিয়ে দিয়ে উইকেট উৎসব শুরু করেন ২০ বছর বয়সী এ স্পিনার। ৬৪ বলে সাত বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের ৫৬ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন ডাকেট।

.
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি টাইগারদের। একের পর এক উইকেট তুলে নিতে থাকেন মিরাজ-সাকিবরা। পরের ওভারের প্রথম বলে রুটকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরান সাকিব আল হাসান। এরপরের ওভারে মিরাজ এরবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ইংলিশ দলপতি অ্যালিষ্টার কুককে। আম্পায়ার কুমারা ধর্মসেনা মিরাজের আবেদনে সাড়াও দিয়েছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ড রিভিউ নিলে বেঁচে যান কুক। কুকের ব্যাট থামাতে না পারলেও ৩১.২ ওভারে মিরাজের বল উঠিয়ে মারতে গিয়ে তামিমের হাতে তালুবন্দী হন গ্যারি ব্যালেন্স (৫)। একই ওভারের শেষ বলে আবারও উইকেটের পতন। এবার তার শিকার মঈন আলী। স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বোলিংটা হয়তো কাটাছেঁড়া করতে পারেনি ইংলিশরা। তাই আজও চমক দেখান তিনি। এবার তার বলে বোকা বনে যান অ্যালিষ্টার কুক। সিলি পয়েন্টে তার ক্যাচ লুফে নেন মমিনুল হক। সাজঘরে ফেরার আগে ১১৭ বলে পাঁচ চার দিয়ে নিজের ৫৯ রানের ইনিংসটি সাজান কুক। এটাই দ্বিতীয় ইনিংসে ইংলিশদের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। মিরপুরে তখনো মিরাজ ম্যাজিক বাকী ছিল। দলীয় ১৩৯ রানে মিরাজের বলে লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বেয়ারস্টো। আর এ উইকেটের মধ্য দিয়েই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে তৃতীয়বারের মতো পঞ্চম উইকেট তুলে নেয়ার স্বাদ পেলেন মিরাজ।

.
সপ্তম উইকেট জুটিতে স্টোকসের সাথে দলের হাল ধরতে মাঠে নেমেছিলেন ওকস। তাদের সাবধানী ব্যাটিং স্বাগতিক শিবিরে কোন আতংক তৈরি করতে পারেনি। কারন ম্যাচ তখনও ফিফটি-ফিফটি। এ জুটি দলের স্কোর বোর্ডে ২২ রান জমা করার পর আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। মিরাজ অধ্যায় শেষ হওয়ার পর শুরু হয় সাকিব ধামাকা। সাজঘরে ফেরান মিডল অর্ডারের নির্ভরতার প্রতিক ২৫ রান করা স্টোকসকে। তার ষ্টাম্প উড়িয়ে দেন এ স্পিনার। ঐ ওভারের পরের বলেই আদিল রশিদকে ফেরান তিনি। পরের বলে কোন উইকেট না পেলেও ঐ ওভারের শেষ বলেই আবারো উইকেট উৎসবে মাতিয়ে তুলেন সাকিব। এবার তার শিকার জাফর আনসারি। আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিনকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আর সাথে সাথেই উৎসবের রঙ্গে রেঙ্গে উঠে পুরো দেশ। প্রথমবারের মতো ক্রিকেটের জনক দেশটির বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে জয়। তাও আবার ১০৮ রানের।

ক্রীড়া প্রতিবেদক