জীবনে এতো মায়া কেন!

জীবনে এতো মায়া কেন!

সুমন্ত আসলাম: রোজা শুরু হওয়ার তিন দিন আগে থেকেই হিরো হয়ে যেতাম আমি। ত্রিশ-পয়ত্রিশ বছর আগে। আমার সমবয়সী, কমবয়সীরা ঘুরঘুর করত আমার পেছন পেছন। কারণ একটাই…। তখন মোবাইল ফোন তো ছিলই না, টিভিও ছিল না তেমন, মসজিদে মসজিদে মাইকও ছিল না। গ্রামের স্কুল থেকে ক্লাসের ঘণ্টা নিয়ে আসতাম বাড়িতে, সঙ্গে বাজানোর কাঠের হাতুরি। ইফতার শুরু হওয়ার সময়, সেহরির সময় শুরু ও শেষ হওয়ার সময়—এই তিন সময়ে ঘণ্টা বাজাতেন বাবা। ধর্মীয় আবেশ থেকে, না দায়িত্ব বোধে বাবা কাজটা করতেন—তা তখন বুঝতে পারিনি। সম্ভবত দুটোই। গ্রামের সকল মানুষ ঘুমিয়ে আছেন, ইফতার সামনে নিয়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে বসে আছেন পরিবারকর্তা, আর বাবা তখন ঘণ্টা বাজিয়ে জানান দিচ্ছেন সবাইকে। পাশে পরিবারের সবচেয়ে দুষ্টুটি অামি।
ঘণ্টা বাজানো শেষ করে বাবা ওটা আমার হাতে দিতেন। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই এগিয়ে আসত আমার দিকে। ঘণ্টাটা আমি উঁচু করে ধরে রাখতাম, কাঠের হাতুরি দিয়ে একে একে সবাই একটা করে আঘাত করত সেই ঘণ্টায়। তারপর সবার চোখে-মুখে সে কী আনন্দ! পূর্ণিমার চাঁদের মতো পিতলের সেই ঘণ্টা আর স্রষ্টার মতো সুন্দর বাবার মুখটায় আমি আজও মগ্ন হয়ে থাকি, যা আর ফিরে অাসবে না কখনো।
হায়, জীবনে এতো মায়া কেন!
[সুমন্ত আসলাম,এসিসটেন্ট এডিটর,দৈনিক সমকাল।]

অতিথি লেখক