জনপ্রতিনিধিদের কিছু বলা দরকার…

জনপ্রতিনিধিদের কিছু বলা দরকার…
ছবি: সুমন্ত আসলাম।

সুমন্ত আসলাম: পুরো এক ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। সামনের স্কুলটা ছুটি হয়েছে, ছোট্ট বাচ্চাগুলো বের হয়েই বৃষ্টিতে ভেজার জন্য আকুপাকু করছে। পরম মমতা নিয়ে বাধা দিচ্ছেন মা-জননীরা। কেউ কেউ বেয়ারা হয়ে নেমে পরেছে রাস্তায়। চারশ বছর খাঁচায় বন্দী থাকার পর মুক্তি পাওয়া পাখির মতো উচ্ছ্বল হয়ে উঠেছে কেউ কেউ। দুটো মেয়ে একটু বাড়াবাড়ি করতেই পড়ে গেল ছোট্ট একটা খাদায়। চেহারা ব্যথাতুর করা তো দূরের কথা, হেসেই খুন! কী নির্মল হাসি, কী পবিত্র শব্দ!

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে একনাগারে। মেট্রোরেলের আরাম পরশের আশায় মিরপুরের মেইন রাস্তাটা ছোট খাটো পুকুরে পরিণত হয়েছে কয়েক কিলোমিটার। বাকীগুলো হয়েছে একেকটা কুয়োর বহর। মানুষের জীবন নাভিশ্বাস। এই যা, রিকশায় উঠতে গিয়ে এক মা পরে গেলেন ছোট ছেলেটাকে নিয়ে। দ্রুত কয়েকজন এগিয়ে এলেন তাদের সাহায্য করার জন্য। এই না হলে মানুষ!

এমন বাদল দিলে তারে বলা যায়—রবী ঠাকুর কী বলতে চেয়েছিলেন জানি না। কিন্তু আমাদের জনপ্রতিনিধিদের কিছু বলা দরকার—মাত্র এক বছরেরই রাস্তাগুলো এমন উপরে যায় কেন? আমাদের টাকার মূল্য কি এতই কমে গেছে? ইট এবং আলকাতরা কি মেয়াদ-উর্ত্তীর্ণ হয়ে গেছে? আমরা কি অন্ধ হয়ে গেছি? বোধ হারিয়ে নিরেট পাথর হয়ে গেছি?

আবার টেন্ডার হবে, আবার রাস্তা বানানো হবে, আবার বৃষ্টির পর রাস্তা হয়ে যাবে খানাখন্দ! আচ্ছা, কেউই কি দেখার নেই! জনপ্রতিনিধিদের কোনো একজনকে বলব—কিন্তু তাদের কেউ আছেন বিদেশে, কেউ কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বেডরুমে শুয়ে হিন্দী সিনেমা দেখছেন আর ভাজা মুরগী চিবাচ্ছেন।

হে আল্লাহ, আর কেউ না দেখুক, তুমি তো দেখো। একটা কিছু করো না আমার দয়ার আল্লাহ। প্লিজ, প্লি-ই-ই-জ। দু ঘণ্টা কেটে গেল, একটা বাস নেই। তারা এই অনিরাপদ রাস্তায় গাড়ি চালাবে না এই বৃষ্টিতে। দাঁড়িয়েই আছি, দাঁড়িয়েই আছি। আচ্ছা, কেউ কি একটা বরশি আর লম্বা ছিপ দেবেন? এই ছোট ছোট নদীতে চেষ্টা করে দেখি না—একটা ইলিশ না হোক, টাকি-পুঁটি-ট্যাংরা তো পাবো! সময়ের কী নিদারুন অপচয়! হে আল্লাহ, তুমি আমাকে বেহেস্তে নিয়ে যাও।


[সুমন্ত আসলাম: সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক সমকাল]

অতিথি লেখক