এবোলা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত

এবোলা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত

এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্কঃ এবোলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড়সড় সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। শেষ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হল এই মরণ ভাইরাসের প্রতিষেধক। এবোলার ভ্যাকসিন তৈরি করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেন কানাডার গবেষকরা। কানাডার বিজ্ঞানীরা কয়েক বছরের গবেষণায় এই অসাধ্য সাধন করেছেন। শনিবার কানাডার রাজধানী অটোয়ায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। সোমবার থেকেই কানাডায় ক্লিনিক ও হাসপাতালে পরীক্ষামূলক এবোলার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর আগে অন্য প্রাণীর ওপর ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে কার্যকর ফল পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে গত কয়েকমাসে এবোলা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল তার অবসান ঘটবে। তবে আরও বেশ কয়েকটি কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই এটি বাজারে ছাড়া হবে। কানাডার প্রধান জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা গ্রেগরি টেইলর এক বিবৃতিতে বলেন, দীর্ঘ গবেষণার পরে এবোলার ভ্যাকসিন (ভিএসভি-ইবিওভি) তৈরি করেছেন কানাডার ন্যাশনাল মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরির গবেষকরা। পশু দেহে পরীক্ষা করা হয়েছে, যা চূড়ান্তভাবে সফল। তবুও চূড়ান্ত পর্যায়ে পরীক্ষার জন্য ভ্যাকসিনটি সুইজারল্যান্ড পাঠাচ্ছে কানাডা সরকার। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে পরীক্ষামূলক এই ভ্যাকসিনের এক হাজারের বেশি ডোজ জেনেভা পৌঁছুচ্ছে। জেনেভা ইউনিভার্সিটি হসপিটাল (এইচইউজি)-এ স্টোর করে রাখা হবে। যতটুকু জানা গেছে তা হলো, শুষ্ক বরফের সঙ্গে একটি বিশেষ বোতলে (কন্টেইনার) ভিএসভি-এবো ভ্যিাকসিন প্যাকেট করে বাজারজাত করা হচ্ছে। মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা মাইনাস ১১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় এটি সংরক্ষণ করতে হবে। কানাডার ন্যাশনাল মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরি এটি আবিষ্কার করেছে। কানাডীয় সরকার নিউলিংক জেনেটিকস করপোরেশনকে এটি বাজারজাতের অনুমতি দিয়েছে। এইচইউজি সূত্রে খবর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসারে এই পর্যায়ে ভিএসভি-ইবিওভি ভ্যাকসিনগুলিকে মানব দেহে পরীক্ষার পালা। চলতি মাসের শেষ নাগাদ অথবা আগামী মাসে প্রথম থেকে শুরু হবে এই প্রক্রিয়া। আর পরীক্ষা সফল হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। মরণঘাতী ভাইরাস এবোলা নিয়ে চিন্তিত বিশ্ববাসী, উদ্বিগ্ন বিশ্ব নেতারাও। এবোলা ভাইরাসকে প্রতিরোধে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই জারি করা হয়েছে সতর্কতা। জাতিসংঘের ইবোলা মিশনের প্রধান অ্যান্থনি ব্যানবারি বলেছেন, মরণঘাতী এবোলা ভাইরাসকে থামানো না গেলে ‘নজিরবিহীন পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা মোকাবেলার ক্ষমতা থাকবে না বিশ্বসম্প্রদায়ের।
২০১৩ সালের শুরুতে এই ভাইরাস দেখা দেয়। মার্চে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। গত সেপ্টেম্বর থেকে এটি আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সিয়েরালিওন, লাইবেরিয়া, গায়নায় এবোলা আঘাত হেনেছে বেশি করে। কিন্তু এটি থামাতে না পারায় সৃষ্টি হয় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার। ১৪ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এখন পর্যন্ত এবোলায় চার হাজার ৪৪৭-এর বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। সিয়েরালিওন, লাইবেরিয়া, গায়নায় ইবোলা আঘাত হেনেছে সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘের এবোলা মিশনের প্রধান অ্যান্থনি ব্যানবারি বলেছেন, মরণঘাতী এবোলা ভাইরাসকে থামানো না গেলে ‘নজিরবিহীন পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা মোকাবেলার ক্ষমতা থাকবে না বিশ্বসম্প্রদায়ের। মঙ্গলবার ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এবোলা ভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বসম্প্রদায় পিছিয়ে পড়ছে। ভাইরাসের সঙ্গে দৌড়ে আমরা পারছি না। আর এর ফলে ডিসেম্বর হাজার হাজার লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ব্যানবারি বলেন, আমাদের চেয়ে এবোলা বেশি গতিতে দৌড়াচ্ছে। দৌড়ে সেই জয়ী হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য প্রমাণে দেখা যায়, এবোলা মোকাবেলা করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা বাড়ানো না হলে দুই মাসেই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার থেকে বেড়ে ১০ হাজার ছাড়াবে। এবং এটা ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে যা বিশ্বের জন্য এক সঙ্কটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক