বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় দূর্ভোগ বেড়েছেঃ ১ বছর যাবৎ কর্মচারীদের বেতন বাঁকী

বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় দূর্ভোগ বেড়েছেঃ ১ বছর যাবৎ কর্মচারীদের বেতন বাঁকী
ছবি: বগুড়া জেলা শহরের ২টি সড়কের বেহাল দশা।

চপল সাহা,বগুড়া থেকে,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বগুড়া জেলা শহরের পৌরসভার একদিন আগে ১৮৭৬ সালে জম্ম নেয়া শেরপুর প্রথম শ্রেনীর পৌরসভার পৌর নাগরিকদের দূর্ভোগ এখন চরমে উঠেছে। প্রতিদিন কাঁদা-পানির রাস্তায় চলতে হচ্ছে হাজার হাজার পৌর বাসীদের। অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের পৌর এলাকা যেন ভুতরে শহরে পরিণত হলেও কোন প্রতিকার নেই। অভিযোগে প্রকাশ, বগুড়ার প্রথম শ্রেনী মানের শেরপুর পৌরসভার প্রায় অর্ধলক্ষ পৌরবাসীর দূর্ভোগ এখন চরমে উঠেছে। পৌর বাসীর জন্য নাগরিক সেবা বলতে কিছুই নাই। গত অর্ধযুগের অধিক সময় কালেও শেরপুর পৌর এলাকায় কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি বলে দাবী পৌর নাগরিকদের। রাস্তাঘাটের অবস্থা যেন খানা-খন্দকে ভরা। একটু খানি বৃষ্টি হলেই বাড়ে জন দূর্ভোগ। ফলে প্রতিবছর সরকারি বরাদ্দ আর অভ্যন্তরীন আয়ের কোটি কোটি টাকার বৃহৎ অংশ কাগজে-কলমে উন্নয়ন হলেও সুষ্ঠ তদন্তের অভাবে এসব টাকার অনেক অংশ গচ্চা যাচ্ছে পুরোটাই।  যে সকল কোন উন্নয়ন মূলক কাজের নাম জনসম্মুখে প্রচার আছে তার কোন চিহ্ন নাই। অত্যন্ত গোপনে ঘরোয়া দরপত্রের মাধ্যমে উন্নয়ন মূলক কাজের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয় বলে জানায় সচেতন পৌর নাগরিকরা। চলতি মাসেও মোটা অংকের টাকার টেন্ডার ভাগাভাগি হয়েছে বলে জানা গেছে। টেন্ডার দরপত্রের শতকরা ৬৫ থেকে ৭০ভাগ টাকা আগেই ভাগ বাটোয়ারা হওয়ায় ওই সকল রাস্তার আর কোন কাজ হয় না।
বর্তমানে শেরপুর পৌরসভার প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় একবছর যাবত বেতন ভাতা বাঁকি আছে। টাকার অংকে প্রায় কোটি টাকার ওপরে। শেরপুর পৌরসভার একটি ঐতিহাসিক বারদুয়ারি হাট এবং ২টি সকাল-বিকাল বাজার থেকে প্রতিবছর প্রায় সোয়া ১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও ওই সকল হাট বাজারের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। হাট বাজারের জায়গায় স্থায়ী মার্কেট বসানো হয়েছে অনেকটা সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে। এসকল দোকান বরাদ্দের আড়ালে আছে পৌর পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও কর্মকর্তার নাম। এমনকি পৌর সচিবের নিকট আত্মীয় স্বজনের নামেও দোকান বরাদ্দ আছে বলে জানা গেছে। দৃশমান উন্নয়ন না থাকায় হাট-বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের রোদেপুরে আর বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করে অতিরিক্ত হারে টোল দিতে হচ্ছে। সরকারি বিধি মোতাবেক হাট বাজারের নিজস্ব আয়ের শতকরা ৪৫ভাগ টাকা সেখানকার উন্নয়ন খাতে ব্যয় করার বিধান থাকলেও শেরপুর পৌরসভার মেয়র বাবু স্বাধীন কুমার গত ২৯জুন তার বাজেট বক্তব্যে বলেছেন-দুঃখ জনক হলেও সত্য যে,শেরপুর পৌরসভার উন্নয়নের টাকার একটি বৃহৎ অংশ দিয়ে পৌর কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে হচ্ছে। এরপরেও  অর্ধশত কর্মচারীদের গত ১বছরের বেতন ভাতা বাঁকি প্রায় কোটি টাকার ওপরে।
শেরপুর পৌরসভার অভ্যন্তরীন আয়ের খাত বৃদ্ধিতে নেই কোন উদ্যোগ। যেমন-দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বহুতলভবন এবং বাসা-বাড়ির ট্যাক্স বৃদ্ধিতে কাজ করলে আগামীতে ভোট কমে যাওয়ার আশংকা থাকে। এদিকে শেরপুর পৌরসভার সাবেক কর্মচারী উদয় চৌধুরী পল্টু জানায়, একবছর আগে অবসরে যাওয়ার পরেও মোট বার মাসের বেতন ভাতা বাঁকি রেখে আমাকে খালি হতে বাড়ি আসতে হয়েছে। সারা জীবন চাকরী শেষে আজ আমাকে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। শেরপুর পৌরসভার থানা মোড়ে রাস্তার ড্রেন পরিস্কার করতে গিয়ে মাষ্টার রোল কর্মচারী শেরপুর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের মৃত. খোকা আকন্দের ছেলে মো.আব্দুস সামাদ(৪৫) এর বাম চোখ চির দিনের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে। পৌর পরিষদ থেকে তার ভাগ্যে জুটেছে পৌরসভার সাহায্য তহবিলের মাত্র ৫‘শ টাকা। অপরদিকে, পৌর মেয়র বাবু স্বাধীন কুমার কুন্ডু পৌর এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কার্যক্রম দেখভালের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের আদেশ ও বিধি মোতাবেক ২০১১ সালের গোড়া থেকে প্রতিদিনের জন্য ৭ লিটার করে জ্বালানী বাবদ তেলের ভাউচার জমা দিয়ে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করেন। পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তেল উত্তোলনের সময় থেকে পৌর পরিষদের অথবা মেয়রের নিজস্ব কোন যানবাহন ছিল না।
এ সকল অভিযোগ নিয়ে পৌর মেয়রের সাথে বার বার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অফিস থেকে জানানো হয়, তিনি দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। শেরপুর পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা পৌর সচিব দীলিপ কুমার দাস রাখী জানান, অনিয়ম করে পৌর পরিষদের কোন টাকা খরচ করা হয়নি। এসকল অভিযোগ মিথ্যা বলে তিনি দাবী করেন। নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
এদিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানান,  চলতি বছরে বাংলা ১৪২১ সালে বারদুয়ারী হাটের ইজারা মূল্য ১কোটি ৫ লাখ টাকা, সকাল বাজার ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০ টাকা এবং বিকাল বাজার ১লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ টাকায় অস্থায়ী ইজারা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে ২০১১-১২ সালের অর্থবছরে উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য ৭০লাখ টাকা, পরের বছর ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৭৪লাখ টাকা এবং  ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৭০ লাখ  সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

বিশেষ প্রতিনিধি