উপকূল অঞ্চলের আড়তগুলো ইলিশে সরগরম হয়ে উঠেছে

উপকূল অঞ্চলের আড়তগুলো ইলিশে সরগরম হয়ে উঠেছে

এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্কঃ মৌসুমের শুরুতেই বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ট্রলারবোঝাই ইলিশ নিয়ে জেলেরা সাগর থেকে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে বাগেরহাটসহ উপকূল অঞ্চলের আড়তগুলো ইলিশে সরগরম হয়ে উঠেছে। ২২ জুন (শনিবার) বাগেরহাটের কেবি বাজার, পিরোজপুরের পারেরহাট ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা আড়তে ইলিশ বোঝাই কয়েকশ ট্রলার ভিড়েছে বলে জেলেরা জানিয়েছেন। জেলে-মহাজন ও ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ইলিশ নিয়ে। জেলেপল্লীতে চলছে আনন্দ উল্লাস। ইলিশের স্বাদ নিতে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ খুচরা বাজার থেকে শুরু করে পাইকারি আড়তগুলোতে ভিড় করছেন। গেল বছরের তুলনায় ইলিশের দর এ বছর পোন প্রতি (৮০ পিস) তিন-চার হাজার টাকা কমে গেছে। ইলিশ রফতানি বন্ধ থাকায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে ইলিশ।

মৎস্য বিভাগ বলছে, ঘুর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর সাগর থেকে দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উপকূলের দিকে ছুটে আসছে। এমনকি ইলিশ সুন্দরবনসংলগ্ন বিভিন্ন ছোট ছোট নদী-খালে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে, ইলিশের নিরাপদ প্রজনন ও ১ নভেম্বর থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সাত মাস জাটকা ধরা বন্ধ থাকায় ইলিশের আকার গত বছরের তুলনায় বড় হয়েছে। এখন জেলেরা সাগরের বিভিন্ন এলাকায় জাল পাতলেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। শনিবার ভোরে ভৈরব নদী সংলগ্ন বাগেরহাট কেবি বাজার আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা সাগর থেকে শতাধিক ট্রলারে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ভিড়েছে। ওই সব ট্রলার থেকে বাঁশের তৈরি ঝাকায় করে আড়তে তোলা হচ্ছে ইলিশ। আড়তের চাতাল ছেয়ে গেছে বিভিন্ন সাইজের ইলিশে। রূপালি ইলিশ দেখে হৃদয় যেন জুডিয়ে যায়। ঢাকা ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা ভিড় জমিয়েছে আড়তে। ডাকের মাধ্যমে প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। খুচরা ক্রেতারাও কম দামে ইলিশ কিনতে কয়েকজনে মিলিত হয়ে পাইকারি ডাকের মাধ্যমে ইলিশ ক্রয় করে ভাগ করে নিচ্ছেন তারা। পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত একপোন (৮০ পিচ) ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে। ৪শ’ গ্রাম থেকে শুরু করে এক কেজি ওজনের এসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।  বাগেরহাটের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৬শ’ টাকা কেজি ধরে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময়ে এই সাইজের ইলিশ ৬শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ইলিশের দাম কম থাকায় খুচরা ক্রেতারা ভিড় করেছে মাছ বাজারে।  সাগর থেকে ইলিশ নিয়ে বাগেরহাট কেবি বাজার আড়তে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তারা বঙ্গোপসাগরে ইলিশ আহরণ করে থাকেন। কিন্তু এ বছরই প্রথম মৌসুমের শুরুতে তাদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ঘুর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উপকূলের দিকে ছুটে আসছে। তাদের ইলিশ ধরতে এখন আর গভীর সমুদ্রে যেতে হচ্ছে না। কিন্ত সাগরে ইলিশ ধরতে যাওয়া জেলেরা জলদস্যুদের অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি চায় জানিয়ে তারার আরও বলেন, মৌসুমের প্রথমেই জলদস্যুরা তাণ্ডব শুরু করেছে। তাদের চাঁদা দিয়ে নির্ধারিত টোকেন না নিলে দস্যুরা ইলিশ ধরতে দেয় না। তাদের চাঁদার টাকা না দিলে জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে। আর মুক্তিপণের টাকা না দিলে দস্যুরা জেলেদেরকে হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেয়। বাগেরহাট উপকুলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে কেবি বাজার আড়তে ইলিশের দেখা মেলিনি। এখন এই আড়তে ইলিশের ছড়াছড়ি। জেলে, মহাজন ও ব্যবসায়ীরা এ বছর ইলিশ বিক্রি করে অনেক লাভবান হবে। দাম কম থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষও ইলিশের স্বাদ নিতে পারবে।’  ইলিশ যাতে বিদেশে পাচার হয়ে না যায় সে দিকে সরকারকে নজর দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতরের উপপরিচালক ড. একে এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ইলিশের নিরাপদ প্রজনন ও ১ নভেম্বর থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সাত মাস জাটকা সংরক্ষণ করতে সফল হওয়ার কারণে এ বছর ইলিশের উৎপাদন বেড়ে গেছে। এছাড়া মাছের আকারও গত বছরের তুলনায় বড় হয়েছে।’ তিনি আশা করছেন, এ বছর ১৪ হাজার টন ইলিশ উদৎপাদন বেশি হবে। গত বছর তিন লাখ ৬৬ হাজার টন ইলিশ উদৎপাদন হয়েছিল।

 

এসবিডি নিউজ ডেস্ক