শহীদ রুমী স্কোয়াডের বন্ধুদের প্রতি…

শহীদ রুমী স্কোয়াডের বন্ধুদের প্রতি…

শওগাত আলী সাগরঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শ্লোগান দিতে দিতেই  পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে সহযোদ্ধা শান্ত। এখন আবার ১৩ জন ‘শান্ত’ জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে  জীবন বিসর্জনের অঙ্গীকার করে  আমরন অনশন শুরু করেছে। মহান স্বাধীনতা দিবসের (২৬ মার্চের) মধ্যে জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার  সময় সীমা বেধে দেওয়া হয়েছিলো ।কিন্তু সরকার তরুন প্রজন্মের  প্রাণের এই আকাংখার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাও দেখায় নি।ফলে ২৬ মার্চের জনসমাবেশ থেকে  ‘ঢিমেতালে’ নতুন কর্মসূচী অসংখ্য তরুনকেই হতাশ এবং বেদনাহত করেছে।সেই বেদনামিশ্রিত ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ থেকেই  যে এই তরুনরা আমরন অনশনের মতো কর্মসূচীর ঘোষনা দিয়ে বসেছেন।

শহীদ রুমী স্কোয়াডের ব্যানারে অনশনের কর্মসূচীটি যে কোনো বিবেচনায়  যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে তারুন্যের তীব্র আবেগ থেকে উতসারিত সিদ্ধান্ত,সেই আবেগকে ছোটো করে  বা তীর্যক দৃস্টিতে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এই তরুনদের সিদ্ধান্ত এবং কর্মসূচীর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন এবং শ্রদ্ধা আমাদের আছে। তবে রাজনৈতিক আন্দোলনে আবেগের সঙ্গে যুক্তি,পারিপার্শ্বিক ঘটনাপ্রবাহ এবং বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অনেকেই হয়তো বলবেন, শাহবাগের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। শাহবাগের আন্দোলন অবশ্যই একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতিতে ফিরিয়ে  নিয়ে যাবার রাজনীতি এটা । জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটি একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের  ব্যাপার।সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারের প্রস্তুতি এবং হোমওয়ার্ক  করার মতো  সময় তাদের দিতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে জনতার ম্যান্ডেট আওয়ামী লীগ সরকারের আছে। অপ্রিয় হলেও সত্য,কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ম্যান্ডেট এই সরকার জনগনের কাছে চায় নি।আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোনো দলকে নিষিদ্ধ,ফিষিদ্ধ করেই কেবল    সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কালো হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করা যাবে না। তার জন্য রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক  ততপরতা দরকার।  এসব নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা হতে পারে,হওয়া দরকারও। কিন্তু এই মুহুর্তে জরুরী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত  করার আন্দোলনটাকে গতিশীল রাখা। শাহবাগে  একদিকে কিছু তারুন্য  না  খেয়ে শুকনো মুখে বসে থাকবে আর  মূলমঞ্চের কর্মসূচি হিসেবে গান-কবিতা চলতে থাকবে- এটা খুবই দৃষ্টি কটু। তাছাড়া নিজেদের মধ্যে বিভেদ বা অনৈক্য তৈরির সময় এটা নয়।দ্বিতীয় পর্বের মুক্তিযুদ্ধ আমরা যাকে বলছি- তা নিয়ে  ‘লোক হাসার’ মতো অবস্থার তৈরি হউক, তাও আমরা চাইবো না। শহীদ রুমী স্কোয়াডের বিপ্লবী বন্ধুদের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই অনুরোধ করতে চাই,আমরন অনশনের মতো চূড়ান্ত কর্মসূচী এখনি নয়। প্লিজ, আন্দোলনের আরো কৌশলগুলো ব্যবহার করুন, আসুন আমরা সবাই মিলেই সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখি, জনমত গড়তে থাকি। প্লিজ বন্ধুরা,আপনারা আপনাদের এই অনশন আপাতত: স্থগিত রাখুন।শাহবাগের মুল মঞ্চ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এই আন্দোলনের গতিবেগ আরো তীব্রতর করার ক্ষেত্রে আমরা আসুন ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখি।

মুক্তবুদ্ধির প্রবীন রাজনীতিক,বুদ্ধিজীবী,কিংবা মুক্তবুদ্ধির প্রবীন নাগরিকদের প্রতিও অনুরোধ রাখতে চাই। আপনাদের মধ্য থেকে কেউ এগিয়ে আসুন,এই তরুনদের অনশন ভাঙতে ভূমিকা রাখুন। নিজেদের কষ্ট দিয়ে,আত্মাহুতির হূমকি দিয়ে নয়, জীবনকে সতেজ রেখেই আমাদের আন্দোলনের পথে থাকতে হবে। সামনের পথের দৈর্ঘ্যটা নেহায়েতই কম নয়,আর দীর্ঘ এই পথ আমাদের পাড়ি দিতেই হবে।

লেখক: কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক।।  

অতিথি লেখক