এ কোন দেশের চেহারা দেখছি আমরা?

এ কোন দেশের চেহারা দেখছি আমরা?
অজয় দাশগুপ্তঃ এর চেয়ে অস্বস্তিকর অসহনীয় অবস্থা আর কি হতে পারে? এক দিকে মানুষের আকুতি ,মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুরাগ, বিচার প্রার্থনা ,শাস্তি নিশ্চিত করার। অঙ্গীকার, অন্যদিকে ধর্মের নামে হত্যা মারামারি লুটপাট। এখন যা চলছে তাতে কোন সাধারণ বিবেকবান মানুষ নিশ্চিত থাকতে পারেন না। আমরা থাকি দেশ থেকে অনেক দূরে, যে ভূমিতে, আমাদের জীবন গনতন্ত্র মানবাধিকার আইন ও সভ্যতা দিয়ে ঘেরা এক নিরাপদ জীবন। এই সেদিন আমরা ও সমবেত হয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলাম, ব্যানারে ফেষ্টুনে স্লোগানে দেশী বিদেশী মিডিয়ায় আলোকিত সেই প্রতিবাদ মূলত কাগুজে বা শব্দ হুংকার। এদেশে নিজেদের বিবেকের দায় মেটানো ছাড়া এর আর কোন গুরুত্ব নেই। আবার আমাদের বিরোধী শিবির ও কম কিছু নয়। এদ্দিন চুপ করে ঘাপটি মেরে থাকলে ও এখন তারাও বাইরে আসছে। বিশেষত খালেদা জিয়া সাংবাদিক সম্মেলনের নামে জামাত ও যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনের বিষয়টি পরিস্কার করার পর থেকেই বিএনপি’র আশ্রয়ে তারা  প্রতিবাদে নেমেছে। পার্থক্য এই সভ্য দেশে আইনের সমাজে কেউ কারো মুখোমুখিতে পারবে না। কারো টিকিটি সর্প্শ করার ও সুযোগ নেই কারো। নিরাপদ ভূমির অভিবাসী বাঙ্গালী হিসেবে আজ আমার হৃদয় দীর্ন। আমার বিবেক আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এ কোন দেশের চেহারা দেখছি আমরা? এ কোন সমাজ? মানুষ এত বর্বর নিষ্ঠুর ও উন্মাদ হতে পারে? রেল লাইন উপড়ে ফেলছে, ট্রেনে আগুন দি্চ্ছে। পুলিশ কে মেরে তার জান কেড়ে নিচ্ছে। পতাকা পোড়াচ্ছে, মন্দির ভাঙ্গছে ! মসজিদের কার্পেটে আগুন দিচ্ছে , লাঠি সোটা নিড়ে ছুটে আসা এদের দেখে মনে হচ্ছে একদল রক্ত পিপাসু হায়েনা। যে চেতনার কথা যে আদর্শের কথা বলে আমরা কাঁদি, শপথ করে আবেগে, বুক ভাসাই এই তার পরিণতি? এই কি এতদিনের রাজনীতি আর আর সংস্কৃতির ফলাফল?  এরা তো আমাদেরই কেউ না কেউ অপরিচিত পান্জাবী বা বিহারী তো নয়। আজ যারা যে সব তরুনেরা ধর্মের নামে জামাতের নামে সংখ্যালঘুদের জান মাল কেড়ে নিচ্ছে, মন্দির ভাঙ্গছে। রাজীব কে নাস্তিক মনে করা কোপানো জায়েজ ভাবছে এরা কি অচেনা কেউ? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিয়ে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনের অল্প আগে রামুর কথা ভাবুন তো! রামুর সহিংসাতা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি আক্রমন বুদ্ধের ওপর নির্যাতন বৌদ্ধদের জীবন ও মালামাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কি খুব আগের কথা? সে সংকেত আমার কেন বুঝতে পারলাম না? কেন বুঝতে পারলাম না এই যুবকরাই যে কোনদিন আমাদের পতাকা টুকরো করে ফেলতে পারে, আমাদের সংগীত কে অপমান করতে পারে আমাদের যুব সম্প্রদায় কে নাস্তিক বানিয়ে কোপাতে পারে, মেয়েদের পতিতা বলে গালি দিতে পারে, কেন রাজনীতি তা বুঝল না?
মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্সী নেয়া আওয়ামীলীগ ভুলে গেছে তার মাথার ওপর বঙ্গবন্ধু নেই, আকাশ নেই। নেই তাজুদ্দীনের মত ছাদ। তার বর্তমান নেতৃত্ব জনগনের আস্থা বা বিশ্বাসের তেমন কোন জায়গায় নেই যে ডাক দিলেই মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে। যে কারণে শাহবাগের গোড়ার দিকে তাঁরা ভিড়তে ও পারেনি। একজনকেও জায়গা দেয়নি ছাত্র যুবসমাজ। কিন্তু  রাজনীতির ছলের অভাব নেই। ছলে বলে কৌশলে দ্বিধাবি্ভক্ত দেশীয় রাজনীতির এক প্রান্তে এসে ঠেকা শাহবাগের ওপর আক্রোশ শানাতে গিয়ে আজ আমাদের চেতনা আর আস্থার জায়গাটুকু নিয়ে শেষ খেলায় মেতেছে পরাজিত দূশমন, রাজাকার ও দালাল বাহিনী। তারা এখন জ্বালাও পোড়াও আর মর ও মারার নীতিতে অটল। এমনটি যে হবে ধারণ করার নাম ই তো রাজনিতি নাকি? তা হলে আজ প্রশ্ন জাগে কথিত আওয়ামী লীগের বাঘ সিংহ রা কোথায়? তারা কি ঘরে চুড়ি পরে আছেন? না ভয় পেয়েছেন? না কম্প্রোমাইজড? তাদের ছেলেরা বা তারা তো জান দিচ্ছেন না। জান যাচ্ছে নীরিহ মানুষের। এই হায়েনার আর ক’দিন পর জাফর ইকবালের বাসায় গিয়ে তাঁকে মেরে আসবে। টেনে নিয়ে আসবে মুনতাসীর মামুন বা শাহরিয়ার কবির কে। দ্রৌপদির মত লাঞ্চিত হবেন সুলতানা কামাল বা লাকী আক্তার। ধর্ম ও রাজনীতি সমার্থক হলে কি হয় কি হতে পারে সে আমাদের অজানা কিছু নয়। বন্ধু সাংবাদিক শ্যামল দত্ত একটি টক শোতে বলেছেন রায়ের দিন ই আদালতে হৈ হৈ করে বলা হয়েছিল চিন্তা নাই এমন পরিস্থিতি হবে যাতে দেশের বারটা সরকারের বারোটা বাজনো হবে,তখন সরকার শেষ বিচার ও খতম। এরপরও আওয়ামীলীগের হুঁশ নাই। তাঁদের হুঁশ থাক না থাক। আমাদের অস্তিত্ব আর বাঁচা মরার প্রশ্ন। আমরা আরেকটি একাত্তর চাই বটে একাত্তরের মত মৃত্যু বা ধ্বংস চাই না। রক্তপাত আর দ্রো্হ আমাদের তারুন্যকে আর কতকাল এভাবে অস্থির করে রাখবে? বারংবার ৪৭ এর বাস্তবতায় ফিরে যাবার ভেতর গৌরব নেই। পাওয়ার গেম বা যে কোন ছলনার চাইতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আর নিরাপত্তাই আজ জরুরি। সরকার কেন তা পারছে না? কোথায় রাজনৈতিক শক্তি? ভোটের দিন ভোটের বাক্স পাহারার দিন যে আওয়ামী লীগ বা দেশজ রাজনৈতিক শক্তির চেহারা দেহি দূর্দিনে সে কোথায়? এখনো যদি সে ঘুরে না দাঁড়ায় আর কখন তার বোধদয় হবে? দেশ ও দেশের সর্বস্ব হারালে? আমাদের সন্তানদের তো আমরা হিংস্র হায়েনার মুখে ছেড়ে দিতে পারি না। তারা অনেক করেছে এবার আপনারা দায়িত্ব নিন।
অজয় দাশগুপ্তঃ সিডনী প্রবাসী কলামিষ্ট।।

অতিথি লেখক