হোসেকে ‘হ্যাঁ’ বলতে উত্তরসূরী সরকারকে ‘না’ বলুন

হোসেকে ‘হ্যাঁ’ বলতে উত্তরসূরী সরকারকে ‘না’ বলুন

মোমিন মেহেদীঃ বিশ্বের সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্রপ্রধান’-এর জন্য দেশের মানুষের মইের থাকতে হয় সেই রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য ভালোবাসা। গভীর ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার সূত্র ধরেই সম্ভব সবকিছুর চেয়ে জনগনকে বড় করে দেখা। যে কাজটি নিপুন মনের অধিকারী হিসেবে করেছেন হোসে মুজিকার। একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে জীবন ধারা কেমন হতে পারে, তা সবারই জানা। প্রথাগত এসব ঠাটবাটের বালাই না রেখে লাতিন আমেরিকার উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকার এগিয়ে গেছেন জনতার জন্য, জনগনের জন্য। তিনি একজন রাষ্ট্রপতি হয়েও জীর্ণ খামার নিয়ে খুব সাধারণ এক মানুষের মতো দিন পার করছেন। আরাম-আয়েশের সরকারি সব সুযোগ দূরে ঠেলে বেছে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের জীবন।
স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতির জন্য যেমন বিলাসবহুল সরকারী ব্যবস্থা রয়েছে, ঠিক তেমনি উরুগুয়ের সরকার রাষ্ট্রপতি হোসে মুজিকার জন্য বিলাসবহুল সরকারি বাসভবন বরাদ্দ করেছিল। তবে তিনি সেই বাড়িতে যাননি। প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি থাকেন রাজধানী মন্টেভিডিও থেকে বেশ দূরে স্ত্রীর খামারবাড়িতে। স্ত্রীর সঙ্গে ফুলের চাষ করেন। আয়ের বেশির ভাগ অংশই ব্যয় করেন দাতব্য চিকিৎসার কাজে।
মুজিকার বাড়ির বাইরে কাপড় কাচার ঘর। মাঠের এক কূপ থেকে পানি তোলা হয়। কূপের চারপাশটা আগাছায় ভরা। প্রেসিডেন্টর এই বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে মাত্র দুজন নিরাপত্তা রক্ষি। ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকা তাঁর সম্পদের বিবরণ দেন। এতে দেখা যায়, তাঁর সম্পদের পরিমাণ মাত্র এক হাজার ৮০০ ডলার। এ বছর তিনি তাঁর স্ত্রীর অর্ধেক সম্পদও এই বিবরণে  যোগ করেন। এতে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার। তবে তাঁর এই সম্পদ দেশটির ভাইস  প্রেসিডেন্ট দালিনো অ্যাস্ত্রোরির ঘোষিত সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ। আর মুজিকার পূর্বসূরি  প্রেসিডেন্টের সম্পদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। মুজিকা তাঁর মাসিক আয়ের ৯০ শতাংশই দাতব্য কাজে দেন। এর মূল্যমান প্রায় ১২ হাজার মার্কিন ডলার।
এই হলো হোসে মুজিকা। যিনি ইচ্ছে করলেই যাপন করতে পারেন অনেক অনেক বিলাসী জীবন। কিন্তু না জনগনের কথা ভেবে, দেশের কথা ভেবে এগিয়ে চলেছেন সততার সাথে। অথচ আমাদের রাষ্ট্রপতি? আমাদের প্রধানমন্ত্রী? তাদেরকে না হয় বাদ-ই দিলাম; আমাদের মন্ত্রী-এমপি এবং আমলাদের আর্থিক অবস্থাও এমন যে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ার পরও লুটপাট করে দেশের সবচেয়ে দামী গাড়ি কেনেন দামি বাড়ি করেন আর যত বিলাসবহুল আসবাবপত্র দিয়ে সাজান সংসার।
যেখানে জনগন তাদের মূল্যবান ভোটটি দিয়ে তাদেরকে নির্বাচিত করেন দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে। সেখানে তারা মন্ত্রী হয়েই একবছরের মধ্যে বনে যান টাকার কুমির। এমপি হওয়ার মাস ছয়ের মধ্যে চড়েন ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িতে। ওঠেন মস্ত বাড়িতে। আরো কত কি যে করেন…
কিন্তু হোসে মুজিকা; বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি সাংসদ ও মন্ত্রীদের জন্য উদাহরন। সেই সূত্র ধরে উল্লেখ করছি যে, খামারবাড়ির বাগানে রাখা পুরোনো চেয়ারে বসে পছন্দের কুকুরটিকে আদর করতে করতে মুজিকা বলছিলেন, ‘আমি এভাবেই আমার জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছি। আমার যা আছে, তা নিয়ে আমি চলতে পারি।’
মুজিকা ষাট ও সত্তরের দশকে উরুগুয়ের গেরিলা সংগঠন তুপামারোসের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কিউবার বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে উরুগুয়ের বামপন্থীরা এই গেরিলা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। গেরিলা জীবনে তিনি ছয়বার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং ১৪ বছর কারাভোগ করেছেন। কঠোর শর্ত আর একাকিত্বের মধ্যেই বন্দিজীবন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরলে ১৯৮৫ সালে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।
তবে বন্দিজীবন তাঁকে এমন জীবনদর্শন শিখিয়েছে বলে জানালেন প্রেসিডেন্ট মুজিকা। তিনি বলেন, ‘আমাকে বিশ্বের সবচেয়ে গরিব  প্রেসিডেন্ট বলা হয়। আমার কিন্তু তা মনে হয় না। যারা শুধু ব্যয়বহুল জীবনযাপনের জন্য অন্যায় কাজ করে, সব সময় আরও বেশি  বেশি চায়; তারাই গরিব।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বেশি বিত্তবৈভব না থাকলে সারাজীবন শুধু দাসের মতো কাজ করার কোনো দরকার নেই; বরং ওই সময়টা নিজেকে দিন। আমাকে পাগল বা পালগাটে বৃদ্ধ মনে হতে পারে। কিন্তু এটা আমার নিজের পছন্দ।’
এ বছরের জুনে রিও সম্মেলনেও উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নিজের দর্শন তুলে ধরেন। টেকসই উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বে যে পরিমাণ সম্পদ আছে তা দিয়ে কি ৭০০-৮০০ কোটি মানুষ একইভাবে ভোগ ও অপচয় করতে পারবে, যা উন্নত বিশ্ব করছে? এ ধরনের উচ্চ ভোগবাদ পৃথিবীর ক্ষতি করছে। ভোগবাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বনেতারা অন্ধ বলে তিনি তাঁদের সমালোচনা করেন।
উরুগুয়ের জরিপ প্রতিষ্ঠানের ইগনাসিও জুয়াসনাবার বলেন, এমন জীবন যাপনের জন্য সাধারণ মানুষ প্রেসিডেন্টের প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে সরকারের ভুল কাজের সমালোচনা করতে তারা পিছপা হয় না। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় বিরোধীরা মুজিকার সমালোচনায় মুখর হলেও তাঁর সরল জীবন যাপনের জন্য, সততার জন্য বরাবরই পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।
‘তবে, আমাদের দেশে হবে সেই সরকার প্রধান কবে…??/ কথা না বড় হয়ে, কাজে বড় হবে…? এমন প্রশ্ন উঠে এসেছিলো  হোসে মুজিকার জীবন যাপনের সূত্র ধরে। তার উত্তরে অবশ্য ফেসবুক-এর সদস্যরা এক একজন এক এক ভাবে দিয়েছেন। আমি এক্ষেত্রে বলতে চাই- আমাদের দেশেও এমন সরকার প্রধান হবে, তবে বাংলাদেশের জনগনকে হতে হবে আরো সচেতন, আরো নিলোর্ভ ভোটার। কেননা, আপনার ভোটেই নির্বাচিত হবে ভালো লোক, ভালো সরকার প্রধান। জনগন-ই ফিরে ফিরে সেই মন্দ লোকদের কাছে যায়; ভোট দেয়। আর যখন দেশের বারোটা বাজে, যখন জনতার বারোটা বাজে; তখন বলে সরকার ভালো না, সরকার ভালো না।
তাই বলছি ড. কামাল হোসেন, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, বি চৌধুরী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না, আন্দালিব রহমান পার্থ, মাহি বি চৌধুরীসহ সকল সৎ এবং কর্মনিষ্ট ত্যাগি এবং দেশ-মানুষের জন্য নিবেদিত তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বকে ‘হ্যাঁ’ বলুন। তাই বলে অবশ্যই তারেক- কোকো এবং জয়কে ‘না’ জানিয়ে। ‘না’ জানিয়ে দিন উত্তরসূরী সরকার হাসিনা অথবা খালেদাকেও।
আমরা আর কোন বিলাসবহুল সরকার দেখতে চাই না। দেখতে চাই না উত্তরসূরীর উত্তরসূরীকেও। এবার নতুন প্রজন্মকে ক্ষমতায় বসানোর সম্পূর্ন দায়ভার জনতার। জনতা তৈরি হলে, তৈরি হবে সততার নেতৃত্বও। সেই সাথে তৈরি আছি আমরাও নতুন মত নিয়ে, নতুন পথ নিয়ে নতুনধারা সম্মিলনে…
মোমিন মেহেদী : মহাসচিব, নতুনধারা গণতান্ত্রিক পার্টি

অতিথি লেখক