প্রসঙ্গ ভারসাম্যহীন: ব্যারিস্টার রফিক নাকি সরকার?

প্রসঙ্গ ভারসাম্যহীন: ব্যারিস্টার রফিক নাকি সরকার?

জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ।। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ব্যারিস্টার রফিক উল হককে ভারসাম্যহীন বললেন। সূত্র প্রথম আলো। জনগণ সরকারের এই অর্বাচীন মন্তব্যকে ভালো চোখে দেখছেন নাকি সরকারই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে তার বিচার জনগণই করবে। তবে খোলা চোখে দেশের পরিস্থিতি, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তা-ব্যক্তিদের বহুরুপী বক্তব্য আর লম্ফঝম্ফের কারণে আইন প্রতিমন্ত্রির বক্তব্যটার ঠিক বিপরীত চিত্রটাই জনগণের সামনে চিত্রিত হচ্ছে ক্রমশ:।
বিশেষ মর্যাদাশীল বিচার বহির্ভূত হত্যাবাহিনী সাগর-রুনির খুনিদের ধরার ব্যাপারে উৎসাহী নয়। কিন্তু তারা সাগর-রুনির গলিত লাশ নিয়ে নতুন নাটকের মঞ্চায়ন শুরু করলো। এখন নাকি আবার ভিসেরা নমুনা বিদেশের মাটিতেও পাঠাবে তারা। ব্যাপারটা যেন এমন খুনিরা সাগর-রুনিকে হত্যার আগে বিষ প্রয়োগ করেছিল এমনটা প্রমাণ হলেই খুনিরা আপনা আপনি ধরা দেবে! যতসব মাথা মোটা কাজকারবার। আসল কাজের নাম নেই, সারা দেশজুড়ে শোরগোল। এই এলিটদের মাথায় সাগর-রুনির ভিসেরা পরীক্ষার বুদ্ধিটা আসলো আড়াই মাস পরে। কেন পুলিশ নাহয় ভুল করেছে কিন্তু সাগর-রুনির দাফনের পরপরই মানবাধিকার লংঘণকারি এই বাহিনীর ঘিলুতে ভিসেরার বিষয়টা ঢুকলৈা না কেন? তখন কী তারা খুনিদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই ইচ্ছেকৃত বিলম্ব করেছে? সরকারের পক্ষ থেকেতো বলা হয়েছিল যে এলিট, অলিট সব বাহিনীই সমন্বিতভাবে কাজ করছে! সেই সমন্বয় গেলো কোথায়? আইজি হাসান মাহমুদ প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি থেকে সরে এসেছেন। এখন বলছেন ভিন্ন কথা। বলছেন ‘নিশ্চয়ই আমরা পজিটিভ রেজাল্ট পাবো?’ফালতু বচন। আসলে ওদের সবকথাই একটা ফাঁপা বাঁশের মতোই। অল্প হাঁড়ি টলকে বেশি অবস্থা আর কী?
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রি বললেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী জীবীত ফিরে আসবে। একই কথা বললেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। অন্যদিকে কয়েকটি সংবাদপত্র ইলিয়াস অপহরণ বা নিখোঁজ নাটকের রহস্য উন্মোচন করে দিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়। প্রধানমন্ত্রি, এলজিআরডি মন্ত্রি এবং সংবাদপত্রের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে এটা স্পষ্টই বলা যায় যে ইলিয়াসকে সরকারই নিখোঁজ করেছে। হয়ত তাকে মেরেই ফেলেছে! তাই এখন ফিরে আসবে, জীবিত আসবে ইত্যাদি বলে সময় ক্ষেপণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রি শামসুল হক টুকু বোমা ফাটানো বক্তব্য দিয়েছেন। যার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রি কিংবা আশরাফের বক্তব্যের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। টুকু বলেছেন ইলিয়াস ঘটনায় জঙ্গিরাও জড়িত থাকতে পারে! তারমানে দেশে এখনও জঙ্গি তৎপরতা আছে। অথচ প্রধানমন্ত্রি বারবার বলেছেন তাঁর সরকার জঙ্গিদের নির্মূল করেছে। যদি টুকুর বক্তব্য সত্য বলে ধরেই নিই তবে প্রধানমন্ত্রির কথা মিথ্যা, অর্থাৎ হাসিনা মিথ্যাবাদি! আইন প্রতিমন্ত্রি ব্যারিস্টার রফিক উল হকের মতো একজন সৎ, অভিজ্ঞ মানুষকে ভারসাম্যহীন বলে তাঁর মর্যাদাহানি ঘটালেন। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকার কোন সত্য কথা সহ্য করতে পারছে না! সাগর-রুনির খুনি ধরা পড়নিন, সৌদি কূটনীতিক খালাপ হত্যার আসামিরাও লাপাত্তা। ইলিয়াস নিখোঁজ, চৌধুরী আলমের কোন সন্ধান করতে পারেনি সরকার। চারিদিকে শুধু দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তপনা ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের মহোৎসব। তাহলে কী তবে সরকারই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে?
লেখক:- জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, ইউরোপ প্রবাসী সাংবাদিক, মানবাধিকারবিষয়ক অনলাইন সংবাদপত্র ইউরো বাংলা’র সম্পাদক।

বিভাগীয় প্রধান