এক মুহূর্ত—-

এক মুহূর্ত—-

এক মুহূর্ত—-
তানজারীন ইফফাত স্বাতী


আশফাক–রিমি শান্তিনগরে দোতলা এক বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকে। আজ ওদের বাড়িতে একজন গেস্ট আসার কথা। সে হচ্ছে রিমির এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। অনেক দিন পর রিমির সাথে যোগাযোগ। আজ আসবে। সেই জন্য রিমি অনেক রান্নাবান্না করছে। আশফাক বাজার করে এনেছে। রান্নার আইটেম হিসেবে আছে সরষে ইলিশ, মাংসের ভুনা, পটল ভাজি, বেগুনের ভাজি, কয়েক রকমের ভর্তা, সাথে সাদা ভাত। তা ছাড়াও কয়েক রকমের মিষ্টি।


দুপুরে রান্না শেষ করে আগে ভাগেই গোসল সেরে নেয় রিমি। ফ্রেশ হয়ে সুন্দর একটা শাড়ি পরে। আশফাক বলে, তোমার বান্ধবী তো এখনো এলো না।
—আসবে।
—ফোন করেছিলে? এতটা দেরী হচ্ছে তোমার ফোন করা উচিত্ ছিল।
—-প্রয়োজন নেই। ও সময় মত চলে আসবে। ও যেমন পাঞ্চুয়াল তেমনি কথা দিয়ে কথা রাখে।
—-তবুও তোমার ফোন করা উচিত্।
—-ঠিক আছে। তুমি যখন বলছ করছি। রিমি ফোন হাতে নিতেই কলিংবেল বাজে। ঐ দেখ মনে হয়  চলে এসেছে। আমি দেখছি।
রিমি দরজা খুলে দেয়। আর দরজায় আর কেউ নয়, ওর বান্ধবী ইরা। দুজন দুজনকে দেখে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। এরপর জড়িয়ে ধরে। প্রথমে ইরাই কথা বলে,
—-কেমন আছিস রিমি?
—- তার আগে বল তুই কেমন আছিস? কতদিন পর দেখা বলতো?
—-হুম অনেক বছর হবে।
—-আয় ভিতরে আয়।
রিমি ইরাকে ড্রয়িংরুমে এনে বসায়। এর মধ্যে আশফাক চলে এসেছে। রিমি আলাপ করিয়ে দেয়। —–আশফাক, ও আমার হাসবেন্ড।
আর ও হচ্ছে ইরা আমার বান্ধবী।


আশফাক ইরাকে দেখে খুব অবাক হয়। ও ইরা? এক সময় ও ইরাকে চিনতো। এখন সবই অতীত। ইরাও কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকে। তারপর উচ্ছল হয়ে উঠে বলে, ওহ্ আপনি রিমির হাসবেন্ড। নাইস টু মিট ইউ। কেমন আছেন?

—-ভালো। আপনি বসুন।
—-তুমিও বসো না আশফাক। আমি রিমির জন্য শরবত বানিয়ে রেখেছি। নিয়ে আসছি।

আশফাক আর ইরা মুখোমুখি কোন কথা বলছে না।  রিমি শরবত নিয়ে আসে।
—-এই নে ইরা।
রিমি ওদের এই পরিচয়ের কথা কিছুই জানে না।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর ওরা বেডরুমে জমিয়ে আড্ডা দেয়। রিমির অনুরোধে ইরা গানও শোনায়।
এবার বিদায়ের পালা।
রিমি অনেক অনুরোধ করে আরো কিছুক্ষণ থাকার জন্য। কিন্তু ইরা রাজি হয়না। এমনিতেই করোনার সময়। তাছাড়া রাত হয়ে যাবে। সময়টা নিরাপদ নয়। ইরা চলে যেতে চাইলে আশফাক ওকে এগিয়ে দিতে চায়। কিন্তু তাতে ইরা সায় দেয় না। পাছে যদি পুরোনো কোন কথা মনে পড়ে যায়। কিম্বা দুজনের কেউ কোন কথা বলে ফেলে এবং অপ্রস্তুত হয়। তাই ইরা বলে, প্রয়োজন নেই। আমি একাই চলে যাব। আমিতো চাকরি করি। আর চিটাগাং থেকে ঢাকায় একাই এসেছি। আর এটুকু পারব না? ধন্যবাদ আপনাকে।
আশফাক আর কথা বাড়ায় না। ইরা চলে যায়।


বেশ কিছুদিন পর—–
আশফাক অফিসে। অনেক ব্যস্ত। করোনার জন্য অফিস কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন খুলে গেছে। করোনার সতর্কতা সত্বেও অফিস চলছে সব যায়গায়। কিছু তো করার নেই। এভাবে মাসের পর মাস তো আর সবকিছু বন্ধ রাখা যায় না। কাজের ব্যস্ততায় রিমিকেও ফোন করতে ভুলে যায়। লাঞ্চ টাইমে হঠাত্ একটা ফোন আসে। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে গলা শোনা যায়,
আমি ইরা।


আশফাক রিমিকে নিয়ে সংসার সাজিয়েছে। তবু দ্বিধা দ্বন্দ্বের ঘোরপ্যাচ হঠাৎ করেই আটকে ফেলে। মন থেকে দৈন্যতা ছিল না ভালোবাসার।
যে পথ থেকে একবার যে কোন কারণে ফিরে এসেছিল সে পথে আর মন নেই। তবু হঠাৎ এক মুহূর্তের দেখা প্রত্যেকর পিছনে ফেলে আসা জীবনকে আরেকটিবার মনে করিয়ে দেয়। সে হোক রিমি, ইরা কিংবা আশফাক।

অতিথি লেখক