সে অনেক কথা…

সে অনেক কথা…
ছবি: লুৎফর রহমান হিমেল।

লুৎফর রহমান হিমেল: নীলক্ষেতের বলাকা সিনেমা হল। ছবির বিরতিতে হলরুমে আলো জ্বেলে উঠলো। তখনই চোখ পড়লো পাশের দুই সিট পরেই! এ যে নিশি! নিশি হক। কলেজ লাইফের সহপাঠী। কলেজের সেরা সুন্দরী। এখনও সেই আগের মতোনই আছে! লিকলিকে শরীরে শুধু বাড়তি কিছু মেদ জমেছে। ফলে হয়েছে কি, আগে সুন্দরী ছিলো, এখন সে হয়েছে অপরূপ সুন্দরী।


নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলো না রাফি। কুড়ি বছর পর এই জনারণ্য ঢাকা শহরে দেখা হয়ে যাবে দুজনের। কতশত স্মৃতি সেই কলেজবেলার!


অড্রি হেপবার্নের রোমান হলিডে চলছে। এখন বিরতি। হঠাৎ করে বাতি জ্বালিয়ে দেওয়ায় গোটা হলরুম আলোকিত হয়ে উঠেছে। অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে পুরো হল। ধূমপায়ীরা যাচ্ছে ধূমপান করতে। কেউ চানাচুর-চিপস কিনতে। যদিও একটি আস্ত সিগারেটও তারিয়ে তারিয়ে তারা খেতে পারবে না। তারপরও উপভোগ্য এক সময়। সিনেমা হলের এই সময়টা দারুন লাগে রাফির। সে ছবি দেখতে গেলে কুড়ের বাদশার মতো বরাবরই এভাবে বসে থাকে।


বিরতিতে হলের অডিও সিস্টেমে গীতা দত্ত গেয়ে চলেছেন: নিশি রাত – বাঁকা চাঁদ আকাশে/ চুপি চুপি বাঁশি বাজে বাতাসে, বাতাসে।।
রাফিই এগিয়ে গিয়ে নিশির পাসের সিটে বসে পড়লো। এখন তারা নিশ্বাস দূরুত্বে। রাসেলের ডান হাত আর নিরূপমার বাঁ হাত চেয়ারের দুই হাতলের পাশাপাশি। ফারাক মাত্র আধইঞ্চি বা তারও কম। ইচ্ছে করলেই ছুঁয়ে দেয়া যায় তাকে। কলেজবেলায় ত সাহসই ছিলো না। এখন সাহস আছে, কিন্তু বাস্তবতার দেয়াল হয়েছে অনেক উঁচু। সেই দেয়াল ডিঙানো কঠিন। বয়স আজ দুজনকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। রাফিই মুখ খুললো প্রথম।
— নিশি, তোমার গান বাজছে। ‘নিশি রাত’ .. কতো ক্ষ্যাপাতাম এই গান বলে বলে। আর তোমার সাথে কাউকে যে দেখছি না!
— কেউ নেই। তা-ই দেখছ না।
— না মানে, বিয়ে করো নি?
— করেছিলাম…
— করেছিলাম মানে!
— সে অনেক কথা। আর তুমি কি বিয়ে করেছো?
— নাহ!
— কেনো?
— সে অনেক কথা।
— আমাকে নকল করবে না বলছি।
— সত্যি যা, তা-ই বলছি। সে অনেক কথা, যা বলতে গেলে ফুরাবে না।


হলরুমের আলো হঠাৎ নিভে গেলো। সবাই ঝুপঝুপ করে আবার হলে ঢুকছে। সিনেমা শুরু হয়ে গেলো ব’লে। বাইরে নীলক্ষেতের আকাশ ভেঙে তখন তুমুল বর্ষণ শুরু হয়েছে।

অতিথি লেখক