সুনীল ব্যানার্জিঃ সাংবাদিকতার এক বড় পাঠশালা

সুনীল ব্যানার্জিঃ সাংবাদিকতার এক বড় পাঠশালা
ছবি: সুনীল ব্যানার্জি।

মোঃ ফরিদ আহমেদ: বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, সমাজ বিশ্লেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনীল ব্যানার্জির ৬৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের ২০ এপ্রিল সাতক্ষীরা শহরের এক অভিজাত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহন করেন। স্বাধীনতার পরবর্তীতে বাংলাদেশে যে কয়জন গুনী, সৎ ও প্রতিভাবান সাংবাদিক ছিলেন তাদের মাঝে প্রতিথযশা সাংবাদিক সুনীল ব্যানার্জি ছিলেন অন্যতম। বিসিএস পাশ করে তিনি ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেননি। এল.এল.বি পাশ করেও স্বাধীন আইন পেশায় যোগদান না করে তিনি সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেন।

১৯৭৩ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। অতঃপর এই কালজয়ী সৎ সাংবাদিকের শেষ কর্মস্থল ছিল দৈনিক জনকন্ঠ। অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখে তিনি সাংবাদিক হিসেবে সকল মহলে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন। সাংবাদিকতাকে তিনি জীবিকা হিসেবে না দেখে জীবন হিসেবে দেখেছেন। তাঁর প্রতিভা, জ্ঞান-গরিমা, চিন্তা-চেতনা ও প্রজ্ঞা সমাজের গন্ডি পেড়িয়ে রাষ্ট্র এবং পরবর্তীতে পুরো বিশ্ববাসির মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি  কর্মে যেমন ছিলেন সত্যের সাধক, তেমনি ব্যাক্তিগত জীবনেও ছিলেন সহজ, সরল ও নিষ্ঠাবান।

প্রকৃত অর্থে বলা যায়, যশস্বী সাংবাদিক সুনীল ব্যানার্জি ছিলেন সাংবাদিকতার এক বড় পাঠশালা। তার কর্ম ও দর্শন তাকে আপন মহিমায় উজ্জিবিত করে রেখেছেন। তাঁর উপমা কেবল তিনি নিজেই। বর্তমান সংবাদ মাধ্যমে যাঁরা অনেক খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁদের অনেকেই সুনীল ব্যানার্জির হাত ধরে সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন। সাংবাদিক হিসেবে তিনি ছিলেন দ্রোহের ফুল, সাংবাদিকতা পেশায় এক কালজয়ী দার্শনিক। সমসাময়িক তথ্যের নির্ভুল উপস্থাপনা, সঠিক ইতিহাসের নিরিখে তাঁর নির্মোহ বিশ্লেষন, নীতি-নৈতিকতার কষ্ঠি পাথরে তাঁর নিখুঁত যাচাই-বাছাই যেভাবে অনিরুদ্ধ করে গেছেন জীবনভর তা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক পরম সম্পদ। পেশাগত জীবনে যশস্বী সাংবাদিক সুনীল ব্যানার্জি অনেক সময় বিড়ম্বনার স্বীকার, অনেক রক্তচক্ষু ও অশুভ শক্তির তোয়াক্কা না করে সাহসকিতার সাথে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠুর রিপোর্ট করে গিয়েছেন। তার ক্ষুড়ধার লেখনি অসত্যের দেয়াল ভেঙ্গে সনত্যের জয়গান গেয়েছেন যা অনুকরনীয় হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি তিনি লেখা-লেখির কাজ ও করতেন। ২০০৬ সালের একুশে বইমেলায় তাঁর লেখা ”সাংবাদিকতায় বিড়ম্বনা” বইটি পাঠক মহলে খুব প্রশংসিত হয়।

২০০৬ সালের ২৮ আগষ্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মোহাম্মদপুরের নিজ বাসভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র পূত্রকে রেখে যান। তাঁর স্ত্রী শিখা ব্যানার্জি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত)। তাঁর একমাত্র পূত্র শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ sbdnews24.com এর প্রধান সম্পাদক এবং বর্তমানে উদীয়মান সাংবাদিকদের মধ্যে প্রতিভাবান একজন।

সাংবাদিক সুনীল ব্যানার্জির মৃত্যুর পর তাঁর সম্পর্কে প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক নির্মল সেন লিখেছেন- ‘‘সব দিক দিয়ে সুনীল ছিল একজন বড় মাপের মানুষ। নিজের ঢাক নিজে পেটানোর মতো মানসিকতা  তাঁর কখনও-ই ছিল না। সে ছিল নিভৃতচারী এক জ্ঞান সাধক। পড়া ও লেখা দু’ই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। যা বিশ্বাস করতেন তা লেখার সৎ সাহস সুনীলের ছিল। কারো চোখ রাঙানি বা চাওয়া-পাওয়ার তাঁর বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি। আজ সুনীল আমাদের মাঝে নেই। তবে তা দৈহিক অর্থে। মানুষকে ভালবেসে, মানুষের ভালবাসা নিয়ে যাঁর মৃত্যু তিনি বেঁচে থাকেন তাঁর কর্ম ও কীর্তির মধ্যে”।

উল্লেখ্য, সুনীল ব্যানার্জি জাতীয় প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য, ক্রাইম রিপোটার্স এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের আজীবন সদস্য এবং কন্জুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কার্যনির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য ছিলেন।

[লেখক: মোঃ ফরিদ আহমেদ।]
rosemoni75@gmail.com

অতিথি লেখক