ওয়াসার মিটার রিডার যখন ডাইরেক্টর!

ওয়াসার মিটার রিডার যখন ডাইরেক্টর!

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ 24 ডট কমঃ : ঢাকা ওয়াসার একজন সিবিএ নেতা মোঃ জাবের হোসেন। তিনি ওয়াসার রাজস্ব অঞ্চল-৬ (মতিঝিল) এর একজন মিটার রিডার। রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর (কে-৫) বিশাল ভবনটির মালিক তিনি। এলাকায় তিনি  ওয়াসার ডাইরেক্টর হিসেবে পরিচিত। ১৬ বছর চাকরি করার পর তার বর্তমান মাসিক বেতন দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯০ টাকা। ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে বনশ্রী আবাসিক প্রকল্পের সাড়ে তিন কাঠা আয়তনের প্লটটি তিনি ক্রয় করেছিলেন ১২ বছর আগে। ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০১ সালে। শেষ হতে সময় লাগে একটানা দুই বছর। ভবনটি ছয়তলা। ভবনটির প্রবেশ পথে কার পার্কিং পেরুলেই চোখে পড়বে টাইলসের মুরাল। ভবন মালিক সিবিত্র নেতা নিজের, তার পিতার ও পুত্রের বিশাল ছবি ঠাঁই পেয়েছে মুরালে। তার একটি প্রাইভেট কারও রয়েছে। ভবনটির পাশের এক দোকান মালিক খোরশেদ আলম বলেন ‘এ বাড়ির মালিক জাবের সাহেব ওয়াসার ডিরেক্টর। তার স্ত্রীও ওয়াসার বড় কর্মকর্তা। বিল্ডিং বানানো হয়েছে অনেক খরচ করে। প্রতিটি ইট কেনা হয়েছে ১০ টাকা করে। শুনেছি প্লট কেনা বাদে কেবল বাড়ি তৈরিতে খরচ হয়েছে দেড় কোটি টাকার বেশি।’

জাবের হোসেন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওয়াসা বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওয়াসার এই ক্ষমতাধর শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে একাধিকবার দুর্নীতির মামলা হয়েছে। সাজা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই পার পেয়ে গেছেন। সূত্র জানায়, অনেকেই শ্রমিক নেতা নামধারী। তারা আছেন বহাল তবিয়তে। রাজত্ব করছেন ওয়াসায়। এরা সব মিলিয়ে বেতন পান ১০-১১ হাজার টাকা। কিন্তু অল্প সময়ে গুটি কয়েক ব্যক্তি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার কারণে সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জাবের হোসেনের দুর্নীতির বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালে মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে অবস্থিত ভাসানী হোটেলের ২২ হাজার টাকার পানির বিল ২২’শ টাকায় করে দেয়ায় জাবের হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ওই সময় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, তাকে রাজস্ব বিভাগে রাখা হবে না। তিনি ১৯৮৬ সালে আবার রাজস্ব বিভাগে ফিরে আসেন। ২০০৩ সালে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে মামলা করে। তিনি দুদকের মামলার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পান। ২০০৯ সালের ১৭ ফ্রেরুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় তাকে জরিমানা করে। অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। জাবের হোসেন জরিমানা দিয়ে কারাদণ্ড থেকে রেহাই পান। চাকরি বিধি অনুযায়ী এ দণ্ডের জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা। কিন্তু হয়নি। উল্টো তাকে অপেক্ষাকৃত বেশি টাকার জোন হিসেবে খ্যাত বাণ্যিজিক সংযোগ সমৃদ্ধ মতিঝিল এলাকায় বদলি করা হয়। ওয়াসার একটি সূত্র জানিয়েছে, জাবের হোসেন তার দুর্নীতি ও মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র ফাইল থেকে গায়েব করে ফেলেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।

নিজস্ব প্রতিনিধি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।