অন্ধত্বের কালো প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রতিটি মানুষ পৃথিবীর অপরূপ শোভা উপভোগ করুক…!

অন্ধত্বের কালো প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রতিটি মানুষ পৃথিবীর অপরূপ শোভা উপভোগ করুক…!

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে প্রতি বছর ১২ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। প্রকৃত অর্থে দৃষ্টি প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। যে ব্যক্তি অন্ধত্বের অভিশাপে পৃথিবীর অপরূপ শোভা দেখতে পারেনি, তার র্দুভাগ্যের কোন সীমা পরিসীমা নেই। সুতরাং কাউকে যেনো অন্ধত্ব বরণ করতে না হয়, সে বিষয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর বিশেষ মনোযোগ নিবন্ধন অত্যাবশ্যক। এ ব্যাপারে মূখ্য ভূমিকা রাখতে হবে ব্যক্তি, সমাজ এবং সর্বপরি রাষ্ট্রের। সবার মনে রাখা উচিৎ একজন দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের মতোই পৃথিবীকে দেখার অধিকার তারও আছে, যে অন্ধত্বের শিকার হয়েছে। আর তাই “দি রাইট টু সাইট” শ্লোগানের ভিত্তিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সংগতি রেখে বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম বারের মতো সাড়ম্বরে পালিত হয় বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। মূলত দৃষ্টিহীন মানুষের অধিকারের প্রতি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাই দিবসটি পালনের প্রধান লক্ষ্য। দৃষ্টিহীন ব্যক্তিদের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তরিকতার সাথে কাজ করাই এ দিবসের আহ্বান।

২০০০ সালে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আলোকে জানা যায় যে, বিশ্বের প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক অন্ধত্ব বরণ করেন এবং প্রতি মিনিটে অন্ধত্বের করুণ শিকার হতে হয় একটি নিষ্পাপ শিশু কে। অন্ধত্ব বরণের এই হার নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বিবিসি’র এক জরীপে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের প্রায় ৫০ মিলিয়ন লোক অন্ধ। এছাড়াও ১৪৫ মিলিয়ন লোক কোন না কোন ভাবে চোখের সমস্যায় ভূগছেন, যা পরবর্ত্তীতে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে অন্ধত্ব বরণকারীদের শতকরা ৯০ শতাংশই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অধিবাসী! এই সকল দেশ সমূহে প্রতি বছর অন্ধত্বের শিকার হতে হচ্ছে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষকে। অন্ধত্ব বরণের এই হার যদি ক্রমান্বয়িক ভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক বিরাট ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, এর-ই মধ্যে আশার কথা হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আর্শীবাদে বিশ্বের অন্ধজনদের অন্ত্যত ৮০ শতাংশকে অন্ধত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে সম্পূর্ণ সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব। পাশাপাশি সর্তকতা অবলম্বনের মাধ্যমে অন্ধত্বের হার কমানোও অসম্ভব নয়। আর সেই লক্ষ্যটিকে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রতিস্থাপন করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতি বছর সারা বিশ্বে একই সাথে আয়োজনের সাথে পালন করা হয় বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। উল্লেখ্য যে, বিশ্ব দৃষ্টি দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ভাবে ২০২০ সাল পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য মাত্রাকে সামনে রেখে সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনে শপথ নেয়া হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে অন্ধত্ব মুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই শপথের আলোকে ইতোমধ্যেই ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং সেই পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে  যথেষ্ট তৎপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক গৃহীত কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে রয়েছে অন্ধত্বকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিতকরণ। তাছাড়া ৩ টি প্রধান উপাত্তকে সামনে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্দ্যেগে কর্ম পরিচালনা করা হচ্ছে। এগুলো হলোঃ (১) অন্ধত্বের পেছনে যে বড় কারণ গুলো কাজ করে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। (২) অন্ধত্ব ও এর কারণ সর্ম্পকে সাধারণ জনগণকে সচেতন করে তোলা এবং (৩) নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের সংগঠন সমূহ, সরকার, চক্ষু বিষয়ক সংস্থা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থা গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে লক্ষ্যকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। উক্ত কর্মসূচির আলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অপরাপর সংস্থা গুলোর সঙ্গে কর্মপন্থা নির্ধারণ ও সমন্বয় সাধন করতে যথেষ্ট চেষ্টা করছে। বিভিন্নধরণের চোখের রোগ ও তার কারণকে নির্দিষ্ট করে তা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মপন্থা ঠিক করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বিশ্ব ব্যাপী শতকরা ২০ শতাংশ মানুষের অন্ধত্বের মূল কারণ হচ্ছে ‘ট্রাকোমা’ নামক এক ধরণের ইনফেকশন। আফ্রিকা অঞ্চলে এ জাতীয় রোগের প্রার্দুভাব তুলনামূলক বেশি। ভিশন ২০২০ এর আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ট্রাকোমা’ নির্মূলের বিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্পর্শকাতর বিষয় হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ২.২ মিলিয়ন শিশু অন্ধত্ব বরণ করে আছে। এর মধ্যে আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের শিশুর সংখ্যাই বেশি। তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোতেও শিশু অন্ধত্বের হার আশঙ্কা জনক। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী, ভিটামিন ‘এ’ এবং পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে একটি শিশুকে অন্ধত্বের অভিশাপের শিকার হতে হয়।

একটি বিষয় অনস্বীকার্য যে, অন্ধত্ব যে কোন জাতির জন্য এক প্রকার অভিশাপ। অন্ধজন সমান ভাবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হতাশার কারণ হতে পারে। একটি জাতি কে অন্ধত্বের হাত থেকে মুক্ত করা বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধত্ব মুক্ত করাই দৃষ্টি দিবস পালনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা না থাকলে কোন সংগঠন বা রাষ্ট্রের একার পক্ষে এই বিশাল উদ্দেশ্য সফল করা দুরূহ। আর তাই সকলকে বিশ্ব দৃষ্টি দিবসের আন্দোলনের শামিল হওয়ার জন্য প্রয়োজন গণজাগরন। এই ব্যাপারে মিডিয়াকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। চোখের রোগ ও তার কারণ সর্ম্পকে সাধারণ মনুষকে জাগ্রত করার মাধ্যমে অন্ধত্বের রাহুজাল থেকে মুক্ত হওয়া অনেকাংশে সম্ভব। সকলের আন্তরিক ও দৃঢ় প্রচেষ্টায় অন্ধকারের কালো থাবা থেকে আলোর দিশারী হয়ে প্রতিটি মানুষ পৃথিবীর অপরূপ শোভা উপভোগ করুক, সেটাই আজকের দিনে প্রত্যাশা…!

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।।

প্রধান সম্পাদক