রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ছিনতাই

রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে ছিনতাই

রুপম হালদার,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজধানীতে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, মালামাল বোঝাই ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এমনকি রিকশা চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চোখের পলকে সংঘবদ্ধ চোর গাড়ি নিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। আর অস্ত্রের মুখে ছিনতাইকারী চক্র চালককে জিম্মি করে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। চুরি ও ছিনতাই হওয়া গাড়ির মধ্যে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন দিনদুপুরেও গাড়িচুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পৌঁছাচ্ছে নগরীর থানাগুলোতে। সূত্র জানায়, বিশেষ করে রাজধানীর বিমানবন্দর থানা এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর গাড়ি চুরির হিড়িক পড়ে যায়। পুলিশের বেতার যন্ত্রগুলো সন্ধ্যার পর মাঠ পর্যায়ে কর্মরত গাড়িচুরি ও ছিনতাইয়ের তথ্য জানাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। প্রতিদিন উত্তরা, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বাড্ডা ও দক্ষিণখান থানা ছাড়াও কোথাও না কোথাও গাড়িচুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছেই। অফিস আদালত, মার্কেট, হাসপাতাল, বাসাবাড়ির সামনে এমনকি চলতি পথেও সংঘবদ্ধ চক্র নকল চাবি ব্যবহার করে চুরি কিংবা অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। কোথাও গাড়ি রেখে নিশ্চিন্তে থাকা কিংবা কাজ করার সুযোগ নেই। বাড়ির গেট ভেঙেও দুর্বৃত্তরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে গাড়ি এবং মূল্যবান যন্ত্রাংশ। একবার চুরি বা ছিনতাই গেলে তা আর কোনদিন উদ্ধার হবে এই নিশ্চয়তা নেই। মাঝে মাঝে দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও উদ্ধার হয় না গাড়ি। গাড়ি চুরি-ছিনতাই মামলা করে বাদীকে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি।
গত গত ১৩ এপ্রিল ভাটারা থানার কুড়িল বিশ্বরোড জহিরের গ্যারেজের সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার চুরি করে নেয় ছিনতাইকারীরা। গাড়ির নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো-ক-১১-৭৩৯৮। ঐ প্রাইভেটকারটির মালিক হচ্ছে মো. মুনসুর মিয়া। তার বাসা হচ্ছে ৫০/৬০ কুড়িল কাজী বাড়ী রোড, বাড্ডা। চুরি হওয়া প্রাইভেটকারটির দাম হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে ভাটারা থানায় একটি জিডি দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ ঐ গাড়িটি উদ্ধার করতে পারেনি। গত ১১ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জান্তিক বিমানবন্দর থেকে একজন যাত্রী ৩ হাজার ২শ’ টাকায় ভাড়া নেন। যাত্রী প্রাইভেটকার ( ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৪৯৯৩) যোগে মুজাফ্ফর গঞ্জ কুমিল্লা রওনা হন। ছিনতাইকারীচক্রের সদস্যরা কুমিল্লা জেলার চান্দনা থানার মাদাইয়া যাওয়ার পথে কৌশলে প্রাইভেটকারটি ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে মো. মহিউদ্দিন বাদী হয়ে চাঁদপুরের কচুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়াও র‌্যাব-১ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও একই দিনে রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইকারীরা একটি প্রাইভেটকার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রাইভেটকার নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো-খ-১১-৩৪০৬। অপরদিকে, গত ১১ এপ্রিল রাত আইড়াইটার দিকে প্রাইভেটকারে ৪ জন যাত্রী নিয়ে নোয়াখালী হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ড্রাইভার মো. মামুন শেখ। পথের মধ্যে মদনপুর নাজিম উদ্দিন ভূইয়া কলেজের সামনে ছিনতাইকারীরা ড্রাইভারকে মারধর করে প্রাইভেটকারটি ছিনিয়ে নেয়। প্রাইভেটকার নম্বর হচ্ছে ঢাকা মেট্রো-গ-১৯-১২৮৬। ঐ প্রাইভেটকারটির মালিক হচ্ছে আহাম্মদ হোসেন। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ডিবি’র গাড়িচুরি প্রতিরোধ টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন লেগে থাকার পর হয়তো দু’একটি গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। দুর্র্বৃত্তরা এমন এমন স্থানে চোরাই গাড়ি রেখে দেয় যা খুঁজে বের করা অনেকটা অসম্ভব। সুনির্দিষ্ট সংবাদ ছাড়া চুরি-ছিনতাইকৃত গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। এছাড়া অনেক সময় দেখা যায় গাড়ি চুরির পর যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে দেয় দুর্বৃত্তরা। তখন ঐ গাড়ির কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেট রয়েছে যার আন্ডারগ্রাউন্ডে চোরাই গাড়ি রাখার খবর রয়েছে। ঐসব স্থানে প্রায়ই অভিযান চালানো হয় বলে পুলিশ সূত্র জানায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, গাড়িচুরি বা ছিনতাই হলে তা উদ্ধারে যে পরিমাণ জনশক্তি এবং প্রযুক্তি প্রয়োজন তা পুলিশের কাছে নেই। ফলে এ সংক্রান্তে থানায় যেসব মামলা হয় তা ডিবির গাড়িচুরি প্রতিরোধ টিমের কাছেই ন্যস্ত করা হয়।

নিজস্ব প্রতিনিধি