ভারতের হরিয়ানায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর সন্ত্রাসী তান্ডব

ভারতের হরিয়ানায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর সন্ত্রাসী তান্ডব

এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্ক: ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্নভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিন-ই দেশটির কোথাও না কোথাও নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এসব খবর খোদ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। একই সাথে খবর গুলো ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর এহেন অত্যাচার অবিলম্বে বন্ধ না করতে না পারলে, ভারত সরকারের জন্যেইেএর পরিণাম মঙ্গল হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান এই পরিস্থিতি যে কোন সময় ভয়াবহ ’সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা’-য় রূপ নিতে পারে।

ভারতের মুসলমানদের উপর চলমান পরিসস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও এর অঙ্গ সংগঠন দফায় দফায় মিটিং করছেন। ০৯ আগস্ট (বুধবার) সম্মিলিতভাবে তারা বৈঠক করেছেন। সম্প্রতি ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে মুসলমানদের উপর হামলা সংক্রান্ত আলোচণায় তারা বলেছেন, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে মুসলমানদের ৩০০ ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেশটি থেকে মুসলমানদের বিতরণের খেলায় মেতে উঠছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপির কসাইখ্যাত মুসলিম বিদ্বেষীদের হাতে ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলিম খুন হচ্ছে। ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠী আজ শঙ্কিত। বুলডোজার দিয়ে ঘর বাড়ি গুড়িয়ে ভারত থেকে মুসলিম শূন্য করা যাবে না। সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ না করলে সন্ত্রাসী মোদি সরকারের পরিণাম শুভ হবে না। ভারতের হরিয়ানায় ইমামসহ মুসলিম হত্যা এবং মুসলমানদের শত শত ঘর বাড়ি গুড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদে আজ ০৯ আগস্ট (বুধবার) বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

বিভিন্ন ইসলামি দলের পৃথক পৃথক বিবৃতি:-

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি

ভারতের রাজধানী দিল্লির পাশ্ববর্তী হরিয়ানায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর যে সন্ত্রাসী তান্ডব চালানো গণগ্রেফতার ও ঘর বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদে আজ বুধবার বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর আল্লামা ছরওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার তীব্র নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এক যুক্ত বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় পরিকল্পিত ভাবে ভারতকে মুসলিম শূন্য করার চক্রান্ত হিসাবে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর পাশবিক তান্ডব চালানো হচ্ছে। হরিয়ানায় সম্পূর্ণ নির্দোষ মুসলিমদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। ঘর বাড়ি গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ভিটা মাটি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ভারতের চরম ঔদ্ধত্যের এই সন্ত্রাসী তান্ডব কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘৃণ্য বর্বরোচিত সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বনেতাদের কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। নেতৃদ্বয় বাংলাদেশ সরকারকে ভারতীয় হাই কমিশনারকে ডেকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর দাবি জানান।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেছেন, ভারতের হরিয়ানায় মুসলিমদের গ্রেফতার ও ঘর বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ভারত নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে পরিচয় দিলেও মুসলমানদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এভাবে মুসলমানদের হত্যা ও গ্রেফতার এবং ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে মানবধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মুসলমানদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। মঙ্গলবার দলীয় এক সভায় তিনি বলেন, মসজিদে আগুন দিয়ে ইমামকে যারা হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতার না করে উল্টো মুসলমানদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দ ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।

জাতীয় শিক্ষক ফোরাম

জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নাছির উদ্দীন খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবিএম জাকারিয়া ও সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক আব্দুস সবুর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগাঁও ও নূর জেলায় সম্প্রতি দাঙ্গায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে একটি মসজিদের ইমামসহ এখনো পর্যন্ত ৬জন মুসলিম নিহত এবং ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আজ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, হরিয়ানা রাজ্যে মুসলমানদের ৩০০ ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে ভারত থেকে মুসলমানদের বিতাড়ণের খেলায় মেতে উঠেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপির কসাইখ্যাত মুসলিম বিদ্বেষীদের হাতে প্রতিনিয়ত মুসলিম খুন হচ্ছে। ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠী আজ আতঙ্কিত ও শঙ্কিত। হরিয়ানা রাজ্যের যে মসজিদে আগুন লাগিয়ে ইমামকে হত্যা করা হয়েছে এটা চরম হিন্দুত্ববাদী বর্বরতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও ধর্মীয় নেতাকে হত্যার কথা কোন সভ্য ধর্মের অনুসারীরা করতে পারে না।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে ভারত নিজেদেরকে উগ্রবাদী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। ভারত নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দাবি করলেও মূলত উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন, যা মুসলিম বিদ্বেষের সৃষ্টি করছে। বিজেপি সরকার মুসলিম হত্যা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের ইন্ধন ছাড়া এমন দু:সাহস দাঙ্গাবাজরা করতে পারে না। আমরা অবিলম্বে নিহত ইমাম হাফিজ সাদসহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছি। সেইসাথে ভারতের ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন

ভারতের হরিয়ানায় মসজিদের ইমামকে পুড়িয়ে হত্যা এবং মুসলমানদের ঘর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশের) কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন আকন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের হরিয়ানায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হাজার হাজার মুসলমানদের বাড়িঘর গুড়িয়ে দিয়ে মসজিদের ইমাম ও খতীবকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ ধরণের বর্বরতা বিশ্বের কোথাও চোখে পড়ে না। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে নূহ জেলায় সাম্প্রতিক সহিংসতা শত শত মুসলমানদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অসহায় মুসলমান মানুষরা আকাশের নিচে খোলা ময়দানে বসবাস করছেন ।

মসজিদের ইমাম ও খতীবকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে শত শত মুসলমানদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে ভারতে নিরীহ মুসলিম হত্যা নির্যাতন এবং জুলুম বন্ধ ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। মুসলমানদের উপর এই ধরনের ন্যাক্কার জনক কর্মকান্ড মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় বিজেপি মূখ্য মন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে এই ধরনের জাহিলিয়াতের ঘটনা ঘটাচ্ছে। যারা নিজের দেশের মুসলমানদের রক্ষা করতে পারে না। তারা কি ভাবে অন্য দেশের মুসলমানদের পক্ষে দালালি করছে । আমরা এই ধরনের ন্যাক্কারজনক মুসলিম হত্যাযজ্ঞ ও বাড়ি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। এসব ঘটনায় যেসব উগ্র সন্ত্রাসীরা জড়িত তাদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ

ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান আজ বুধবার এক বিবৃতিতে ভারতে ইমামকে পুড়িয়ে হত্যা এবং সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর অমানুষিক নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, হরিয়ানায় মুসলমানদের হত্যা, ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে এবং বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়ে ভারতকে মুসলিম শূন্য করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না। তিনি ভারতে মুসলমানদের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি ভারতীয় পণ্য বর্জন এবং ক‚টনৈতিক সর্ম্পক ছিন্ন করার অনুরোধ জানান।।

এসবিডি নিউজ ডেস্ক

Related articles