লোপার পরবর্তী সকাল…

লোপার পরবর্তী সকাল…
~~~লোপার পরবর্তী সকাল~~~
তানজারীন ইফফাত স্বাতী
লোপা সোসাইটিতে মিশতে খুব পছন্দ করে। হই-হুল্লোর, সফট ড্রিংক। একটা কোম্পানিতে ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। আজ একটা পার্টি আছে। গতকালই ওদের একটা প্রোজেক্ট বায়াররা পছন্দ করেছে এবং একসেপ্টও করে নিয়েছে। সেই সুবাদে ওদের বস মানে হোল টিমের পরিচালক পার্টি আহ্বান করেছেন। পার্টিতে নাচা লোপার একটা সখ। হেলে দুলে নাচতে ওর ভালোই লাগে। আর আজকের পার্টি তো খুব ইম্পরট্যান্ট। শুনেছে বায়াররাও তাতে যোগ দিচ্ছে। একটা শিফনের জর্জেট শাড়ি পড়েছে লোপা। গোল গলার ব্লাউজটার পিছনে অনেকটাই ফাঁকা। পিঠের একাংশ অনাবৃত। তবে বড় চুল গুলো ছড়িয়েছে পিঠে।
ওদের মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি। নিজেদের গাড়ি নেই। তো কি হয়েছে? বস গাড়ি পাঠাবে বলেছে। ঐ বুঝি এলো। লোপা বেরিয়ে যায়। রাতের পার্টি। তাছাড়া রাস্তায়ও প্রচণ্ড জ্যাম। তবে ও পার্টিতে সময় মতই পৌঁছে গেছে। আজ কেমন যেন অন্য রকম লাগছে সবকিছু। গেস্টরা অনেকে খুশি খুশি মুডে আছে। কিছু ডেলিগেট্‌সও আছে। লোপার সামনে দিয়ে কেউ একজন একটা গ্লাসে ড্রিংক নিয়ে গেল।
এটাতো সফট ড্রিংক নয় হার্ড ড্রিংক মনে হচ্ছে। বস এসে ওকে সবার সামনে নিয়ে যায়। কেউ কেউ এসে হাতে হাত মেলায়। বস খুব করে বলে, আজ লোপার জন্যই কাজটা হয়েছে। খুব এপ্রিশিয়েইট করে। অন্য কলিগরা যেখানে আছে ও সেখানে চলে যায়।
বলতো কি অবস্থা!
হুম। আমিতো ভাবতেই পারিনি আজ পার্টিটা এত বড় হবে। কিছু বিদেশী ডেলিগেট্‌সও মনে হয় আছে।
এই কারণেই কি তবে হার্ড ড্রিংকের ব্যাবস্থাও রাখা হয়েছে?
জানি না। তোর ইচ্ছে হলে নিতে পারিস। হাসে ওরা।
ওর পুরনো অল্প পরিচিত একজনকে দেখতে পায়। ওর দিকেই এগিয়ে আসছে।
আরে লোপা?
হ্যাঁ। হাই! তুমি কে যেন?
আমি হাসান। তুমি চিনতে পারনি?
ও হ্যা তাইতো। তুমি হাসান। হঠাৎ দেখা তো, বুঝতে পারিনি।
আমাদের একটা ক্লাব আছে। আসতে পারো মাঝে মাঝে।
থাঙ্কস, চেষ্টা করব।
চেষ্টা কেন বলছ? এত বড় অফিসে তুমি জব করো। এটাতো সামান্য। আর ক্লাবে তো আমাদের বন্ধুরাই আসে।
ওহ্‌ আচ্ছা।
হাসানের হাতেও ড্রিংক। চিয়ার ইট!
লোপা বুঝতে পারেনা কি করবে?
ওর এক কলিগ ওকে একটা গ্লাস এনে দেয়। সফট ড্রিংকের।
হঠাৎ হাসান ওর পিঠের চুল গুলো সরিয়ে ওর পিঠে হাত রাখে।
এ তুমি কি করছ হাসান? প্লিজ ছাড়ো। ও অস্বস্তি বোধ করে। হাসানের হাতটা হাত দিয়ে সরিয়ে সোফায় গিয়ে বসে। এরা পার্টি করতে আসে নাকি অসভ্যতা!
ওকে সরি। ভুলে যেওনা। এসো কিন্তু।
লোপা মাথা নাড়ে। আর ভাবে, ক্লাবে গেলে কি হয়!
আর কিছুক্ষন পরে এখানে অনেকেই নাচবে। বস ওকে নিতে আসে। এসো লোপা। বসের সঙ্গে ও আগেও নেচেছে। তবে আজ ওর ভালো লাগছে না। বলে, আমি পারব না। আমি বাড়ি যাব।
কি বলছ বাড়ি যাবে মানে?
লোপা বাধ্য হয়ে বসের সঙ্গে যায়। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে লোপা। এত সব মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়। আজ পার্টি শেষ হবে। এরপর আবার হবে। আজ বস বলে কিছু বলছে না। আর বস যে তেমন অসভ্যতা আজ করেছে সেটাও বলবে না। তবে আজ সব কিছু ওকে ভাবায়। এভাবে কতদিন! আজ হাসান গায়ে হাত দিয়েছে। কাল আবার কেউ দেবে।
এভাবে মেনে নিতে নিতে… আর ভাবতে পারছে না। তবে কি চাকরীটা ও ছেড়ে দেবে? বসের গাড়িতেই বাড়ি পৌঁছে দেয় ওকে। এসেই ঘুমিয়ে পড়ে। যেন ভোর হয় সোনালি রোদে। কাল রাতে একটা দুঃস্বপ্নের মত কেটেছে। ন’টায় অফিস যেতে হবে। নতুন কাজ নতুন প্রোজেক্ট। আর এসবতো হরহামেশা চলতেই থাকবে। এসব থেকে বেরিয়ে এলে লোপার পা যেন আর চলতে চাইবে না। একই বৃত্তে আটকে থাকবে।
অফিসের জন্য রেডি হয়। কি করবে? গত রাতের ঘটনা ভুলে যাবে? নাকি আজ ওর অফিসের শেষ দিন হবে?

অতিথি লেখক