রাতভর অভিযান চালিয়েও খোঁজ মেলেনি পাইপে পড়ে যাওয়া শিশুটির

রাতভর অভিযান চালিয়েও খোঁজ মেলেনি পাইপে পড়ে যাওয়া শিশুটির

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাতভর রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়েও খোঁজ মেলেনি শাহজাহানপুরে খেলতে গিয়ে গভীর নলকূপের পাইপে পড়ে যাওয়া চার বছর বয়সি শিশুটির। রেলওয়ে কলোনি এলাকায় পানির পাইপের মধ্যে পড়ে যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এই দীর্ঘ অভিযানে শিশুটির সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

জানা যায়, জাহিদ নামে চার বছরের ওই শিশুটির বাবার নাম নাসির উদ্দিন। তিনি মতিঝিলের একটি বিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী। তার মায়ের নাম খাদিজা বেগম। জিহাদ দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট।  জিহাদের মামা মঞ্জু জানান, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাসা থেকে বের হয় জিহাদ। প্রায়ই এক ঘণ্টা পর তারা জানতে পারে জিহাদ ওই পাইপের মধ্যে পড়ে গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে।  বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রশি ফেলে কয়েক দফা উদ্ধারকাজ চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করা যায়নি। এ সময় শিশুটিকে সুস্থ রাখার জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। তার খাবার হিসেবে পাইপের মধ্যে জুসের প্যাকেট দেওয়া হয়। আবার ওপর থেকে কেউ জিহাদের কথা শুনতে পেয়েছে বলেও জানায়।  উদ্ধার অভিযানের শুরুতে রশি দিয়ে তাকে তুলতে না পেরে রশির সঙ্গে ব্যাগ বেঁধে দেওয়া হয়। তাতে উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ায় পরে পাইপ তুলে তাকে উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে পাইপ তোলার জন্য আনা হয় ক্রেন। ততক্ষণে নিচ থেকে আগের মতো কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।  ক্রেন দিয়ে পাইপ তোলার পর তার ভেতর একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর যাওয়ার কথা থাকলেও পরে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।

 

এর মধ্যে ঘটনাস্থলে বুয়েট, ওয়াসা, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ক্যাচার ব্যবহার করে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান। পরে রাত দেড়টার দিকে ক্যাচার মেশিনটি পাইপের মধ্যে ছাড়া হয়। মেশিনের সঙ্গে থাকে ক্যামেরা ও টর্চলাইট। ঘটনাস্থলে যান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান,  ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহমদ খান, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা মনিটরের মাধ্যমে ক্যাচার মেশিনের কাজ দেখতে থাকেন। পাইপের মধ্যে পাঠানো ক্যামেরা ২৫৩ ফিট পর্যন্ত গভীরে যাওয়ার পরও শিশুটির কোনো অস্তিত্ব মনিটরে দেখা যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

 

এ ব্যাপারে শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, ২৫৩ ফিট পর্যন্ত ক্যামেরা পাঠিয়ে সেখানে কোনো মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সেখানে বিভিন্ন পোকা-মাকড় ও আবর্জনা দেখা গেছে। তবে কেউ যদি থেকে থাকে তবে সে সুস্থ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।  তিনি জানান, সেখানে পর্যাপ্ত অক্সিজেন রয়েছে। ফলে কোনো মানুষ থাকলে সে সুস্থ থাকবে। তিনি আরো জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

 

স্থানীয়রা জানায়, রেলওয়ে কলোনি এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য ওই পাম্পটি স্থাপন করছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পানি ঠিকমতো না পাওয়ায় পাশে নতুন আরেকটি পাইপ বসানোর কাজ চলছিল। এস আর হাউস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এ পাইপগুলোর কাজ দেওয়া হয়। এসব কাজের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। অন্য একটি পাইপ বসানোর কাজ চললেও যে পাইপটিতে শিশুটি পড়েছে, সেটি ছিল ঢাকনাবিহীন।

 

এ ঘটনায় রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করা হয়।এ ছাড়া নতুন গভীর নলকূপ স্থাপনে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস আর হাউসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নিজস্ব প্রতিনিধি