ভালোবাসার গল্প (মর্তুজা হাসান সৈকত)

ভালোবাসার গল্প (মর্তুজা হাসান সৈকত)

###ভালোবাসার গল্প###

<—মর্তুজা হাসান সৈকত—>

================================================================

দরোজা খুলে দাঁড়াতেই চমকে গেলো আবির । চমকালো
খুব করে । রুমগুলো সাজানো, গোছানো, ছিমছাম তখন !
ঠিক যেন পরিপাটি একদম । তাকাতেই সে দেখলো
ডাইনিং টেবিলটায় দুটো মোমবাতি জ্বলছে । জ্বলছে
আসন্ন উৎসবের অভিপ্রায়ে, একটা ছোট্ট কেক তাঁর সামনেই !
>>>
ব্যাপারটা বুঝেই দুষ্টুমি খেলে যায় তাঁকে । আহা, আজ যে
বিয়ে বার্ষিকী তাঁদের । আহা, আজ যে ! সে ভাবে, ধ্যাত
এই কর্পোরেট ব্যাস্ততার যুগে বউয়ের সাথে খুনসুটি করার
সময় মেলানোও কষ্টের বড় । ব্যাস্ততা কতইনা এই সেই !
তবে খানিকটা হয়ে যাকনা আজই, যাকনা হয়ে তবে এক্ষুনি !

>>>
আকাশনীল রঙা শাড়ি পড়েছিলো বৃষ্টি । কপোলে টিপ, ঠোঁটে
লিপস্টিক । নেশা ছুঁয়ে যায় আবিরকে, ধরে যায় সৌন্দর্যের
মাদকতা । ভাবে, ধ্যাত । বাদ দেইনা ওসব । বাদ-,
তারচে ছুঁয়ে দেই, যাই ছুঁয়ে ছুঁয়ে বউটাকে । দেইনা ছুঁয়ে এক্ষুনি !

>>>
দুষ্টুমিটাও খেলে যায় আবার, খেলে যায়…, উচ্ছ্বাসটুকু আড়াল
করে বলে ফেলে সে, ক্যানো যে এ টাইপের ছেলেমানুষিগুলো
করে যাচ্ছো । ক্যানো যে করে যাও এখনো ! শুনে, স্তব্ধ হয়ে
যায়, যায় বৃষ্টি । স্তব্ধ হয়ে যায় কিছু না বুঝেই ! দুটো
মোমবাতি, নীলাভ মোমবাতি, আসন্ন উৎসবের অভিপ্রায়ে জ্বলে
জ্বলে নিঃশেষ হচ্ছিলো তখন, হচ্ছিলো কেকটার একটু সামনেই !

>>>
সে কী অভিমান অভিমানীর এরপর । অভিমান সে কী তাঁর !
সারারাত ফুঁপিয়ে কাঁদলো সে । কাঁদলো সারারাত । সে কী প্রচণ্ড
অভিমান অভিমানীর ! বার কয়েক সরি বললো আবির । বললো
বৃথাই । হাত ধরতে চাইলো, চাইলো অভিমান ভাঙাতে ।
হাত সরিয়ে ও বললো, আমাকে ছোঁবে না । ছোঁবেনা কখনোই ।

>>>
এরপর, খুব সকালে কিছু না বলেই, না বলে কাউকেই, চলে গেলো
বাবার কাছে । চলে গেলো না বলেই । কী হয়েছে জানতে চাইলে,
কিচ্ছু বলেনি কাউকে, বলেনি বাবা কিংবা ভাইকেও । কেবল রুম লক
করে কাঁদলো, কাঁদলো শুধুই । কাঁদলো ফুঁপিয়ে । কাঁদলো না বুঝতে
দিয়েই কাউকেই । খানিক বাদেই আর ভাবছিলো, এই বুঝি আবির
বলছে, অপ্সরী, সরি । সরি, চল বাসায় যাই । বুঝি এই আবির বলছে !

>>>
অথচ, কেউই আসেনি, বলেওনি কেউ। ফোন কিংবা এস এম এসও
নয় কোনো । নয় ফোন কিংবা আসেনি কেউ ! কেবল যখন
সন্ধ্যেবেলা দক্ষিণের জানালাটা খুলে ও তাকিয়ে ছিলো বাইরে, তাকিয়ে
ছিলো আনমনে । তখন-, কাজের বুয়াটা ফোনে বললো, ‘আফা
তাড়াতাড়ি আইয়েন, স্যারতো অসুস্থ মেলা । আফনে আইয়েন তাড়াতাড়ি !’

>>>
খানিক বাদে বাসায় ফিরেই অবাক হয়ে যায় বৃষ্টি । অবাক হয়ে যাচ্ছে
ক্রমশই । দু’চোখে তাঁর একের বিস্ময়ের পর বিস্ময় তখন । বিস্ময়
একের পর এক ! অসংখ্য মোমবাতি সারা ঘরময় ওদের, যেন আলোর
জোনাকি তাঁরা । প্রতিটা মোমবাতির পেছনে টেডি বিয়ার । প্রতিটির
পেছনেই একটি করে । মোমবাতিগুলোকে পাহারা দিচ্ছে বুঝি ওরা !
ডাইনিং টেবিলটায় বিশাল কেক এক । টেবিলটায় শোভা পাচ্ছে তখন ।

>>>
বৃষ্টির টেডি বিয়ারটা ওটার পেছনেই । হাতে একটা কার্ড । আবির লিখেছে-,
অপ্সরী জানি, ক্যান্ডেল-লাইট আর টেডি বিয়ার তোমার পছন্দ খুব । জানি,
পছন্দ খুব । দুটো ক্যান্ডাল আর একটা টেডি বিয়ারে বড্ড বেমানানই
লাগছিলো তোমার পাশে । বড্ডই বেমানান ! খানিকটা কষ্ট দিলাম
তাই । সরি, সরি অপ্সরী, সরি ফর এভরিথিং । বৃষ্টির চোখ বৃষ্টিতে ভরে
গেছে ততক্ষণে । এ বৃষ্টি ভালোবাসায় ! এ বৃষ্টি পরম সুখে । মুখ ঘুরিয়ে
পেছনে তাকাতেই সে দেখতে পেলো, আবির তাঁর দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে !
___________________________________________________________________

অতিথি লেখক