৯ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামে আধা বেলা হরতাল ডেকেছে শিবির

৯ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামে আধা বেলা হরতাল ডেকেছে শিবির

চট্রগ্রাম প্রতিনিধি, এসবিডি নিউজ২৪ ডট কমঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে আজ বুধবার ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই ছাত্র নিহত এবং প্রক্টরসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এর প্রতিবাদে কাল বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরে হরতাল ডেকেছে ছাত্রশিবির।
আজ বুধবার রাত ৮ টার দিকে মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো. ইসমাইল মিডিয়াকে হরতালের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, সংঘর্ষের ঘটনায় আজ সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ছাত্রদের এবং কাল বেলা ১১টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য কামরুল ইসলাম জানান।
সংঘর্ষে নিহত ছাত্ররা হলেন প্রাণীবিদ্যা বিভাগের পুরাতন প্রথম বর্ষের মুজাহিদ ও ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মাসুদ বিন হাবিব। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম এই দুই ছাত্রের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নগরের হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বাবুল আক্তার জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমানসহ ১১জনকে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি বদিউল আলম জানান, মাসুদ বিন হাবিব সোহরাওয়ার্দী হল শাখার ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক। আর মুজাহিদ শিবিরের সাথি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মো. শামসুদ্দিন দাবি করছেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁদের কর্মীদের ওপর গুলি করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করার জন্য ছাত্রলীগ এ পন্থা অবলম্বন করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিবির ও ছাত্রলীগের কর্মীরা গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে গতকালও ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছিল। এরই জের ধরে আজ দুপুর ১২টার দিকে ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৪১৯ নম্বর কক্ষে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে উভয় সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় তাঁরা চার-পাঁচটি গুলি ছোড়েন। এই সংঘর্ষে গুরুতর আহত মুজাহিদকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। আর মাসুদকে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিত্সকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে প্রক্টর নাসিম হাসান উত্তেজিত ছাত্র ও দুই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের শান্ত করতে গেলে একপক্ষ তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। এতে তিনি মুখে আঘাত পান। পরে তাঁকে পুলিশের গাড়িতে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাম্পাসে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে উভয় পক্ষের দাবি, সংঘর্ষে পুলিশের অবস্থান ছিল সন্দেহজনক। উভয় পক্ষের কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে দুই পাশে অবস্থান নিয়েছেন। পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ জন শিক্ষার্থী চিকিত্সাধীন রয়েছেন। সেখানেও কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। লাশ ওয়ার্ড থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় শিবিরের কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনা জানার পর উভয় পক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের স্বল্পতা ছিল। নগর থেকে পুলিশ পৌঁছাতে পৌঁছাতে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে আগামীকাল সকাল ১০টায় সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

Admin

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।