একুশের চেতনায় বাংলা একাডেমীর বইমেলা

একুশের চেতনায় বাংলা একাডেমীর বইমেলা

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ

 

বই জ্ঞানের বাহন, এ সত্যটি দেশের নিরক্ষর মানুষটিও জানে। কাজেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে বইয়ের অপরিহার্য ভূমিকা নিয়ে বিশদ বলাটাই বাহুল্য। সমস্যা হলো, আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বইয়ের যেমন বাধ্যতামূলক সম্পর্ক, তার বাইরে সমাজে শিক্ষিত মানুষের সঙ্গে বইয়ের সম্পর্ক প্রায় শূন্যের কোঠায়। এমন নয় যে, শহরে বা গ্রামাঞ্চলে বিসত্মর গণপাঠাগার আছে, বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটা থাকলেও সেগুলোতে এলাকার শিক্ষিত মানুষের আনাগোনা দূরবীন দিয়েও চোখে পড়বে না। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে বইয়ের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক রাখেন, এমন মানুষ সমাজে শতকরা একজনও আছেন কিনা সন্দেহ। গণপাঠাগার ছাড়াও, উন্নত দেশের শহরগুলির পাবলিক- প্লেস বা বড় বিপণীকেন্দ্রগুলোতে বইয়ের পৃথক দোকান, কিংবা বইয়ের জন্য আলাদা কর্নার চোখে পড়ে। কম্পিউটারের সামনে বসে ইন্টারনেটে অসংখ্য বইয়ের ভেতর থেকে নিজের প্রয়োজনীয় বইয়ের অর্ডার দিলেই সে বই ঘরে চলে আসে। কিন্তু আমাদের দেশের অবস্থা মোটেও সেরকম নয়। নোটবই-গাইডবই বা পাঠ্যবই ছাড়া কোনো বই খুঁজে পাওয়ার বিপণন-ব্যবস্থা এখন পর্যমত্ম গড়ে ওঠেনি। যে কোনো জেলা শহরে বসে একজন তার প্রয়োজনীয় বইটি খুঁজে পাবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। রাজধানীতে বাংলাবাজারে বইয়ের আড়তসম একটি পুরনো বইবাজার টিকে আছে বটে, কিন্তু সেখানেও বড় দায়ে না পড়লে গ্রন্থানুরাগীরা বই দেখতে বা কিনতে যান বলে মনে হয় না। ক্রমবর্ধমান রাজধানীর গ্রন্থপিপাসুদের হাতে বই তুলে দেওয়ার জন্য শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটে কিছু বইয়ের দোকান গড়ে উঠেছে। কিন্তু সেগুলির বড়ই টিমটিমে অবস্থা। সব মিলিয়ে বছরের ১১ মাসই বই নিয়ে দেশের চালচিত্র মোটামুটি একরমই নিষ্প্রাণ এবং নিষ্প্রভ। এই বাসত্মবতার পটভূমিতে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ফিরে আসে একুশে বইমেলা । নিছক বইমেলা হয়েও একুশের এ মেলা কী করে এমন সাড়াজাগানো এবং সারা দেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের প্রাণের মেলা হয়ে উঠেছে, সেটা যেমন বিস্ময়কর, তেমনি তাৎপর্যপূর্ণ বটে।

বাংলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত একুশে বইমেলা ইতিমধ্যে জাতীয় সংস্কৃতিক অঙ্গনের সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণ অবশ্য ভাষা আন্দোলনের মাসে অনুষ্ঠিত এই মেলার সঙ্গে মহান একুশের চেতনার আবেগময় সম্পর্ক। বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য গৌরবের দিন একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বে আমত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়ায় একুশ নিয়ে আমাদের গর্ব বেড়েছে, তেমনি বাংলা ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য- সংস্কৃতির হালফিল প্রকাশ একুশের বইমেলা নিয়েও আগ্রহ বেড়েছে। ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আমত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করার সময় ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ছিল ক্ষমতায়। সঙ্গত কারণে সরকার এটাকে তাদের বড় অর্জন হিসেবে দেখেছে। বাংলা ভাষা এবং এ ভাষার অর্জিত গৌরবময় অর্জনগুলিকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার দাবিটিও সে সময় সরকারের কাছে বেশ গুরুত্ব পেয়েছিল। পরের বছর ২০০০ সালে আমত্মর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের ভিত্তি প্রসত্মর স্থাপন করেন। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার আবার ক্ষমতায় আসায় প্রকল্পটি আবার চালু হয়েছে। ২০১০ সালের একুশের বইমেলা উদ্বোধন করতে এসে প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প চালুসহ রাজধানীর এই এলাকায় একটি সংস্কৃতি বলয় গড়া তোলার ঘোষণা দিয়েছেন।

এটা অনস্বীকার্য, অমর একুশের দিনটিকে ঘিরে আমাদের জাতীয় জীবনে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে আবেগময় যে প্রাণস্পন্দন, তা অবশ্যই জাতীয় সংস্কৃতিরও একটি বড় উপাদান। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, এই উপাদান তথা জাতির এই আবেগকে জাতীয় অগ্রগতির প্রেরণায় আমরা কতটা ব্যবহার করতে পেরেছি? না পারলে কেন পারছি না? এ নিয়ে তেমন ভাবনা-চিমত্মা বা মূল্যায়ন হয়েছে বলে মনে হয় না। এমনিতে বাঙালির আবেগপ্রবণ হুজুগে জাতি বলে বদনাম রয়েছে। একুশে উদযাপনের ক্ষেত্রেও বাঙালির আবেগ-উচ্ছ্বাসের দিকটি বেশি প্রাধান্য পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই আবেগকে জাতীয় অগগ্রতির প্রেরণা হিসেবে কাজে লাগানো হয় কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর অর্ধ শতাব্দীরও বেশি কাল অতিবাহিত এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সর্বসত্মরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে নতুন করে দাবি তুলতে হয় আজো। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষার ব্যবহার অবাধ না হওয়ায় ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে। বাংলা একাডেমীর একুশের বই মেলায় ভিড় বাড়ছে, বই প্রকাশনার সংখ্যাও বাড়ছে, বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু মানসম্পন্ন বইয়ের প্রকাশ এবং দেশের প্রকাশনা শিল্পের উন্নয়ন ঘটছে কতটা? এসব জিজ্ঞাসার জবাবে গ্রন্থানুরাগী মহলের অভিমত তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। বইমেলা উদ্বোধন করতে এসে সরকার প্রধান বইয়ের ভূমিকা ও পঠন-পাঠনের ক্ষেত্র প্রসারের লক্ষ্যে অনেক মূল্যবান কথা বলে থাকেন। চলতি মেলা উদ্বোধন করতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণেও একুশের চেতনা, বই ও বইমেলার গুরুত্বের প্রতিফলন এবং ভাষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তার সরকারের করণীয় সম্পর্কে সদিচ্ছা ও আমত্মরিকতা প্রকাশ পেয়েছে। তবে শুধু প্রতিশ্রম্নতির ওপর নির্ভর করে বলা মুশকিল, চলতি বছরের একুশে উদযাপনের তুলনায় আগামী বছরগুলির একুশে উদযান জাতির জন্য কি অগ্রগতি বয়ে আনবে। একুশের বইমেলার গুণগত উন্নয়নও সম্প্রসারণই-বা ঘটবে কতটা?

এটা ঠিক যে, স্বাধীনতার পর দেশে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে বাংলা সরকারি অফিস আদালতে ব্যবহার হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। মনে পড়ছে, মাত্র বছর কয়েক আগে উচ্চ আদালতের এক সম্মানিত বিচারক বাংলা ভাষায় রায় প্রদান করে এ ক্ষেত্রে উৎসাহব্যঞ্জক দৃষ্টামত্ম স্থাপন করেছিলেন। সরকারি অফিস-আদালতেও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলার ব্যবহার বাড়লেও ইংরেজির ব্যবহার কমছে তা বলা যাবে না। বরং বিশ্বায়নের এ যুগে আমত্মর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা বাণিজ্য হয়ে ওঠার পর ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও দ্রুত বেড়ে চলেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের একুশের চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা মোটেও অমুলক নয়। ইংরেজি ভাষা ও অন্য কোনো বিদেশী ভাষা শেখার গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু যেখানে জাতীয় জীবনে বাংলা ব্যবহার করলে কাজ চলে, সেখানে ইংরেজি ফলানোটা হীনমন্যতারই নামামত্মর। প্রতি বছর ঘটা করে একুশে উদযাপনের পরে দেশের নবীন প্রজন্মের মধ্যে যদি এ ধরনের হীনমন্যতা বাড়তে থাকে, তবে যতই ঘটা করে একুশে উদযাপন করা হোক, আগামী বছরগুলিতেও জাতি হিসেবে এগিয়ে যাওয়াটা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠবে।

ফেব্রুয়ারি চলে গেলে একুশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও ভাষা-সাহিত্য নিয়েও আমাদের আবেগ উচছবাস কমে যেতে থাকে। পরবর্তী ফেব্রুয়ারি না আসা পর্যমত্ম যেন ভাষার ব্যাপারে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিক ভূমিকা তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না। এই বাসত্মবতার একটা বড় দৃষ্টামত্ম হয়ে উঠছে একুশের বইমেলা এবং বাংলাদেশের গ্রন্থ প্রকাশনা। প্রতি বছর দেশে যত নতুন বইয়ের প্রকাশ ঘটে, তার সিংহভাগই প্রকাশিত হয় একুশের বই মেলায়। বই বিক্রির জন্য প্রকাশকদের প্রায় একমাত্র ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে বইমেলা। দেশের সাহিত্য সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রকাশনা শিল্পের উন্নয়নে বইমেলার ইতিবাচক ভূমিকা মোটেও খাটো করে দেখছি না। কিন্তু একুশে বইমেলায় কী ধরনের বই বেশি প্রকাশ পাচ্ছে এবং কী ধরনের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে, তা থেকেও একুশের চেতনার সঙ্গে বইমেলার বাণিজ্যিক দিকটির দূরত্ব বা বিরোধ আন্দাজ করাটা কঠিন নয়। গ্রন্থানুরাগী মহলের অনেকেই অভিমত দিয়েছেন, দেশের প্রকাশনা শিল্প শুধু ফেব্রুয়ারির বইমেলার ওপর নির্ভরশীল হলে, শিল্প হিসেবে তার স্বতন্ত্র অসিত্মত্ব রক্ষা কঠিন হয়ে উঠবে। ভাষা যেমন বারো মাসই চর্চার বিষয়, সেই ভাষায় প্রকাশিত জাতির মেধা-মনন ও সৃজনশীলতাও তেমনি বারমাসই সক্রিয় থাকার কথা। মাতৃভাষায় শিক্ষা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা কখনোই বিশেষ মাস বা দিবস কেন্দ্রিক হতে পারে না। প্রকাশকদেরও তেমনি বই প্রকাশ, বইয়ের বিপণন ও পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রগুলি বারমাসই সচল থাকা উচিত। একুশের বইমেলায় প্রচুর নিম্নমানের বই তাড়াহুড়া করে প্রকাশ হতে দেখা দেয়। এই প্রবণতা সাহিত্য-সংস্কৃতির মান নিম্নগামী করতেই সাহায্য করবে । অন্যদিকে বইমেলা ছাড়াও সারা দেশে বই বিক্রিয়-বিতরণের নেট ওয়ার্ক গড়ে উঠলে সারা বছর ধরে প্রকাশকরা পরিকল্পিত ও মানসম্পন্ন বই প্রকাশের সুযোগ পাবেন। এতে প্রকাশনা শিল্পের উন্নয়ন-সম্ভাবনাই জোরালো হয়ে উঠবে।

৫২-এর একুশে উদযাপন তো শুধু মাতৃভাষা ও সাহিত্যের জন্য নয়। ভাষা যেহেতু জাতিসত্তা গঠনের একটি প্রধান উপাদান, ভাষা আন্দোলন তাই আমাদের জাতিগত পরিচয়কে আরো সমৃদ্ধ ও অধিকার বোধকে জোরালো করেছে। একটা সময়ে এ দেশের্ মুসলমান বাঙালি মধ্যবিত্ত আত্ম-পরিচয়ের সঙ্কটে ভুগত। মুসলমান নাকি বাঙালি, কোন পরিচয় প্রধান হবে এ দেশের মানুষের? এই প্রশ্ন তুলে এবং শাসক শ্রেণীরা নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে জবাব দিয়ে দেশবাসীর আত্মপরিচয় সঙ্কট বাড়ানোর চেষ্টাও করেছে। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন সেই সঙ্কট থেকেও মানুষকে মুক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে প্রেরণা দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে রাজনৈতিক স্বাধিকারের লড়াই এবং সবশেষে স্বাধীনতার যে লড়াই হয়েছে, তাতে স্বাধীন দেশের নাগরিকদের আত্মপরিচয়ের সঙ্কট ও জাতি হিসেবে হীনমন্যতা এতদিনে সম্পূর্ণরূপে মুছে যাবার কথা। কিন্তু কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে জাতিকে বিভক্ত ও বিভ্রামত্ম করার চেষ্টা চলেছে দীর্ঘকাল। ফলে একুশ জাতীয় ঐক্য ও আবেগের প্রধান উৎস হিসেবে প্রতি বছর পালিত হলেও, সেই আবেগের প্রেরণায় জাতি হিসেবে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময়ে আমাদের যে উন্নতি ও সমৃদ্ধি আসতে পারত, তা হয়নি।

স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রায় চার দশক পরে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিকল্পিত উনণয়ন ও প্রত্যাশিত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে দিন বদলের শ্লোগান তোলা হয়েছে। পেটের ক্ষুধা নিবারণের সঙ্গে সঙ্গে মনের ক্ষুধা মেটানোর ব্যবস্থার উপরেও গুরুত্ব দিয়েছে বর্তমান সরকার। এই ব্যবস্থা শিক্ষার বিসত্মার ছাড়া তেমন কার্যকর হবে না। মাতৃভাষার মাধ্যমে সার্বজনিন শিক্ষার প্রচলন না হলে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আলোকিত মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে না। মাতৃভাষায় শিক্ষা ছাড়া কোনো ভাষাভাষীর জীবনে জাতীয়তাবোধ, তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে একাত্মতাও গড়ে উঠবে না। কাজেই প্রতি বছর একুশে উদযাপনের সময় এ ক্ষেত্রে আমাদের অর্জিত সাফল্য, ব্যর্থতা কিংবা প্রতিবন্ধকতা এবং করণীয় সম্পর্কেও বিশেষভাবে ভাবতে হবে।
বিশ্বায়নের কুফল হিসেবে বিশ্বে অনেক জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি বিপন্ন হয়েছে কিংবা হুমকির মধ্যে পড়েছে। ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক ভাষা-সংস্কৃতি, দ্রম্নত বিলুপ্তির পথে রয়েছে অনেক দুর্বল জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি।।এমন আশঙ্কা প্রকাশিত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কিন্তু বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির হাজার বছরের ঐতিহ্য ছাড়াও, বর্তমানে এই ভাষাভাষী জনসংখ্যার কথা ভাবলে আমাদের অসিত্মত্ব বিলোপের ভয় অমত্মত জাগবে না। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত এবং বিশ্বময় প্রবাসী বাংলাভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটির উপরে। অভিন্ন ভাষাভাষী জনসংখ্যার নিরিখে বাংলা ভাষা এখন বিশ্বের ৮টি ভাষার অন্যতম। একুশের প্রেরণা ও শক্তি সম্পর্কে সচেতন থেকে একুশের আবেগকে সঠিক পথে পরিচালিত করলে বিশ্বসভায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মাতৃভাষা হিসেবে বাংলার আসন যেমন পাকাপোক্ত করা সম্ভব, তেমনি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকেও কোনো শক্তিই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এই অগ্রযাত্রায় প্রেরণা হিসেবে একুশের বইমেলা তার বিভিন্ন দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা যাতে কাটিয়ে উঠতে পারে। তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা এখন সময়ের বড় দাবি হয়ে উঠেছে।।

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।।

jsb.shuvo@gmail.com

প্রধান সম্পাদক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।