অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রধান সমস্যা হলো দারিদ্র্য

অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রধান সমস্যা হলো দারিদ্র্য

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ দারিদ্র্যমুক্ত করে দেশকে স্বনির্ভর ও উন্নত করাই এসব রাষ্ট্রের বড় চ্যালেঞ্জ। ঔপনিবেশিক শোষণ, লুণ্ঠন ও বঞ্চনা পেরিয়ে অনেক দেশ স্বনির্ভর ও স্বাধীন হওয়ার সংগ্রাম করেছে। কিন্তু আজো ভূমি ও সম্পদের তুলনায় লোকসংখ্যা ক্রমবৃদ্ধির ফলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিঘ্নিত হচ্ছে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ, মানবাধিকার বাস্তবায়ন, বৈষম্য, দুর্নীতি, অনিরাপত্তা ও সহিংসতা দূরীকরণে যথাযথ ও কার্যকর রাষ্ট্রীয় উদ্বেগের বিকল্প নেই। দারিদ্র্যবিমোচন কৌশল বাস্তবায়ন করে দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন করা প্রয়োজন। খাদ্যসঙ্কট ও বিক্ষোভ ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বিশ্বের ১২১টি রাষ্ট্রের খাদ্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পর ৪০টি দেশের খাদ্যসঙ্কটকে ভয়াবহ বলে গণ্য করেছিল। সেই সঙ্কট ক্রমেই গভীর পর্যায়ে পৌঁছেছিল। আমেরিকার মানুষ খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় তাদের আয়ের ১০ শতাংশ ব্যয় করে। অন্যদিকে সঙ্কটাক্রান্ত রাষ্ট্রগুলোর মানুষ তাদের আয়ের ৮০ শতাংশ ব্যয় করে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য। খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয় সম্পন্ন ও আর্থিকভাবে পশ্চাৎবর্তী লোকরা বিক্ষুব্ধ ও হিংস্র হয়ে ওঠে। খাদ্যসঙ্কটের দাঙ্গায় শত শত লোকের প্রাণহানি ঘটেছে ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। খাদ্য আমদানি ও বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উত্তাল গণবিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে কিছু রাষ্ট্রের সরকার। সরকারি অর্থ এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সস্তায় খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থাও গৃহীত হয়েছে। ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মিসর, কম্বোডিয়া চাল রপ্তানি বন্ধ করেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে। একই ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন, আর্জেন্টিনা ও কাজাখস্তান।

১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্ব দারিদ্র্যবিমোচন দিবস’ পালিত হয় বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৭ অক্টোবর। দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গঠনে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান ধ্বনিত হয়। ১৮৯টি রাষ্ট্রের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২০০০ সালে জাতিসংঘে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাতে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বকে দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য ঘোষিত হয়েছিল ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য’ (এমডিজি) দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্যে আর্থ-সামাজিক নীতির ভিত্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। পৃথিবীতে প্রচুর সম্পদ থাকা সত্ত্বেও শিশুর মৌলিক চাহিদা অপূরিত থাকে। বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার ভয়ঙ্কর শিকার হয় দরিদ্র মানুষ। অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রধান সমস্যা হলো দারিদ্র্য। বিশ্বের বৃহত্তম গম আমদানিকারক দেশ মিসর গমের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দুঃসহ সঙ্কটে পড়ে। সঙ্কট মোকাবেলার জন্য প্রেসিডেন্টের নির্দেশে সেনাবাহিনী দৈনিক ১২ লাখ রুটি বানিয়ে তা বাজারে সরবরাহ করার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তারপরও সে দেশে খাদ্য বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে জনগণ এবং হিংসাত্মক ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু ঘটে। ধর্মঘট আহ্বানকারীদের দমন করতে গিয়ে আরো দুজনের মৃত্যু ঘটে এবং জেলবন্দি করা হয় ৬০০ জনকে। ইন্দোনেশীয় ১০ হাজার জনতা সয়াবিনের মূল্য ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকার খাদ্য ভর্তুকি বাড়িয়েছে এক-চতুর্থাংশ। ক্যামেরুন নামক রাষ্ট্রে ভয়ঙ্কর খাদ্য দাঙ্গায় ৩৪ জনের অধিক নিহত হয়েছে। বিক্ষুব্ধ ট্যাক্সিচালকদের ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। খাদ্য আমদানিতে কর প্রত্যাহারসহ সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। সেনাবাহিনীকে রুটি সরবরাহের কাজে নামানো হয়। রাশিয়া সরকার ভর্তুকি দিয়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া খাদ্যসামগ্রীর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। গিনিতে ভয়াবহ খাদ্য দাঙ্গার ঘটনা ঘটে আঠারো মাসে পাঁচবার। পেরুতে আলুর গুঁড়ো দিয়ে রুটি বানিয়ে তা সরবরাহ করেছে সেনাবাহিনী। বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ থাইল্যান্ডে শতকরা ৫০ শতাংশ চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজনৈতিক-সামাজিক অস্থিরতা সঙ্কট বাড়তে থাকে। সেখানে সমস্যা মোকাবেলায় সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেঁধে দিয়েছে। খাদ্যগুদাম বা খাদ্যবাহী ট্রাক থেকে খাদ্য লুণ্ঠনের ঘটনা রোধে সেনাবাহিনী নিয়োগ করেছে। কৃষকরা চুরি রোধে দিনরাত ধরে ধান পাহারা দেয় মাঠে। বারকিনা ফসোতে খাদ্য দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে শহরাঞ্চলগুলোয়। শ্রমিক ও দোকানদাররা ধর্মঘট ডাকে। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা খাদ্য লুণ্ঠন করে এবং সরকারি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। মরক্কোতে খাদ্যের জন্য বিক্ষোভরতরা গ্রেপ্তার হয়। ইয়েমেনে খাদ্য দাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা হলো ১২ জন। খাদ্য মূল্য দ্বিগুণ হওয়ায় বিক্ষোভ বেড়েছে। ফিলিপাইন চাল রপ্তানিকারক দেশ হলেও অভ্যন্তরীণ খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় মজুতের জন্য জেল-জরিমানা ধার্য করে কঠোরভাবে মজুতদারি রোধ করেছে। সালভাদরে খাদ্যমূল্য দ্বিগুণ হওয়ায় দরিদ্র মানুষ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য। রাষ্ট্রসংঘ সে দেশে লক্ষাধিক লোকের খাদ্য সরবরাহ করলে অতিরিক্ত দেড় লাখ লোকের খাদ্যের দায়ভার গ্রহণ করে। স্কুলগুলোয় একবেলা খাদ্য প্রদান করা হয়। কোটে ডি আইভরিতে খাদ্যসঙ্কটের কারণে বিক্ষোভে নেমে আসে নারীরাও। রাজপথে সংঘর্ষ হয় পুলিশের সঙ্গে এবং টায়ারে আগুন ধরানো ও মহিলাদের চলাচলে ব্যারিকেড দেয়া হয়। খাদ্য আমদানিনির্ভর দেশ এরিট্রিয়ার খাদ্যসঙ্কট অতীতের তুলনায় বেড়ে যায়। গ্রাম ও শহরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের জীবন দুঃসহ হয়ে ওঠে। ইয়েমেনে খাদ্য দাঙ্গায় চার মাসে ১২ জনের মৃত্যু হয়। পাকিস্তানের দরিদ্র মানুষ খাদ্যসঙ্কটে উদ্বিগ্ন হয়েছে। সরকার ভর্তুকি দিয়ে সস্তায় খাদ্য দিলেও খাদ্যবাহী ট্রাক পাহারা দিয়েছে সেনাবাহিনী। চীনে খাদ্যমূল্য শতকরা প্রায় ২০ ভাগ বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য আমদানি কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। দেশটিতে ভূমিকম্প হওয়ায় দরিদ্র মানুষের সঙ্কট আরো বেড়েছে। আফগানিস্তানে খাদ্য আমদানির সামর্থ্যও হ্রাস পেয়েছে। ৫০ লাখ মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করেছে জাতিসংঘ। সরকার আরো ২৫ লাখ লোককে খাদ্য দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। বিদেশি সাহায্য আর সহায়তার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে সে দেশের সরকার ও জনগণ। বিশ্বখাদ্য সংস্থার (ফাও) হিসাব মতে, ২০০৯ সালে নতুন করে ১০ কোটি অনাহারি মানুষ বেড়েছে। শুধু এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই বিশ্বের ৬৪.২০ কোটি অনাহারি মানুষ রয়েছে। উপসাহারা অঞ্চলে ২৬.৫০ কোটি ও লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান এলাকার ৫.৩০ কোটি এবং নিকট প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ৪.২০ কোটি অনাহারি লোক। বিশ্বের সর্বাধিক ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা উপসাহারা অঞ্চলে। দরিদ্র দেশগুলোর দারিদ্র্য হ্রাস ও কৃষি উন্নয়নে ধনী দেশগুলোর সহায়তা থাকলেও তারা বাস্তবে উন্নত ও স্বনির্ভর হতে পারেনি। মুক্তবাজার এবং গ্রামীণ কৃষি ও কৃষক উদার বাণিজ্যনীতির ফলে খাদ্য ক্ষেত্রে পুঁজিপতিদের বিনিয়োগ বাড়ায় গরিব কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। খাদ্য উপকরণ ও কৃষিপণ্যের মূল্যস্ফীতির ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। ফলে কৃষক জমি থেকে উৎখাত হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়। কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষকরা সঙ্কটে পড়ে। কৃষিপেশা ত্যাগ করে তারা বেকার হয়ে পড়ে। পুঁজিবাদী শ্রেণী অধিক মুনাফার লোভে কৃষি ক্ষেত্রে অধিক বিনিয়োগ করে এবং বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। খাদ্যদ্রব্যের চড়া মূল্যের কারণে তারা লাভ করে অধিকহারে। মুনাফা শিকারীদের কারণে সাধারণ ক্রেতারা জিম্মি হয়ে পড়ে। খাদ্যাভাবে বিক্ষোভ করে, গণবিদ্রোহ বাড়ে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও দুঃসহ হয়ে ওঠে। পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের কবলে পড়ে দরিদ্র কৃষক, নারী ও শিশুর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতার স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। খাদ্য সাহায্যের নামে খাদ্যবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণেই তৎপর হয়ে ওঠে বিশ্ব বাণিজ্যবাদীরা। তৃতীয় বিশ্বের জনগণকে দেখা দিয়ে তারা উন্নয়ন সহযোগিতার নামে দরিদ্র দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। জমি, জলাভূমি ও জৈবসম্পদের দিকে তাদের নজর পড়ে। রপ্তানিমুখী অর্থকরী ফসল উৎপাদন আর বিলাসদ্রব্য আমদানিতে উৎসাহী করা হয় দরিদ্র দেশের সরকারগুলোকে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ১৯৫৫ সাল থেকেই কৃষিতে অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থা চালু করে। মুক্তবাজারের সুযোগে আমেরিকা-ইউরোপের প্রতাপ বাড়তে থাকে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোয়। দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ খাদ্য আমদানির কবলে পড়ে। খাদ্য আমদানিতে ক্রমাগত অধিক মূল্য ব্যয় করতে হয় তাদের। খাদ্যশষ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে। ফলে অবাধ বাজারনীতিতে দেশীয় কৃষকের উৎপাদন বাড়লেও তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না বহুজাতিক কোম্পানির কৌশলের কাছে। ক্রমাগত লোকসান ও অনিশ্চয়তার কারণে কৃষক পরবর্তী পর্যায়ে কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। খাদ্যকে রাজনৈতিক মারণাস্ত্র ও মুনাফার মাধ্যমরূপে ব্যবহার করায় দেশে দেশে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি, খাদ্যসঙ্কট সৃষ্টি, রাজনৈতিক অস্থিতি ও বিদ্রোহ প্রবল হয়। পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন ও আর্থিক উদারনীতির ফলেই দেশে দেশে বারবার রাজনৈতিক অস্থিতি, খাদ্যসঙ্কট ও বিক্ষোভ বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দারিদ্র্যের প্রকোপ ডিসেম্বর ২০০৭ থেকে জুন ২০০৯ পর্যন্ত মহামন্দায় শুধু বিশ্বের স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বরং দারিদ্র্যের তীব্র কষাঘাতে বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল ধনী রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতিও। দীর্ঘস্থায়ী বেকারত্ব, জীবনমানের অনুন্নয়ন ও অনিরাপত্তা লক্ষ্য করা গেছে মার্কিনীদের মধ্যেও। দারিদ্র্যে উপনীত হওয়া মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, বঞ্চিত ও বেকার জনগোষ্ঠী দেশে দেশে পুঁজিবাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তীব্র বিক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে তারা উত্তাল আন্দোলনের মাধ্যমে। এবারের মহামন্দায় ৪০ লাখের অধিক দীর্ঘস্থায়ী বেকারের যন্ত্রণা ও ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে। মহামন্দার প্রকোপ কমার পর কর্মসন্ধানী প্রাপ্তবয়স্করা কর্মসংস্থানের কিছুটা সুযোগ পেতে শুরু করে। বেকারত্ব বীমার সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিতরা কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হলে দারিদ্র্যের হার বাড়তেই থাকবে। ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪ কোটি ৪২ লাখ মানুষ দরিদ্র ছিল, যা মোট জনসংখ্যার ১৫.১ শতাংশ। প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। ২০০৯ সালে সর্বাধিক দারিদ্র্য-অধ্যুষিত সামনের সারির পাঁচটি অঙ্গরাজ্য হলো_ মিসিসিপি (২৩.২%), অ্যারিজোনা (২১.৩%), নিউ মেক্সিকো (১৯.৬%), আরকানসাস (১৯.১%) ও জর্জিয়া (১৮.৫%)। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া (২২.৪%), ফ্লোরিডা (১৯.৫%) ও হাওয়াই (১৮.০%) অঙ্গরাজ্যেও রয়েছে দারিদ্র্যের প্রকোপ। শহরবাসীরা আবাসন সমস্যায় (অধিক বাড়িভাড়া) ভোগে এবং পল্লীর নারী ও শিশুরা অপুষ্টিতে-রুগ্নতায় আক্রান্ত। ২০০৬ সালের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্যের হার ক্রমেই বেড়েছে। আর্থিক বিপর্যয়, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং ধীরগতির উন্নয়নের ফলে দারিদ্র্য আরো বেড়ে যায়। হিস্পানি ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণকায় কৃষকদের দারিদ্র্য আরো বাড়তে থাকে। নারীপ্রধান পরিবারগুলোর দারিদ্র্য চরমে ওঠে। শুধু মহামন্দাকালীন নয়, এর আগে এবং পরেও দারিদ্র্য বেড়েছে। টেক্সাস ও নিউইয়র্কে দারিদ্র্য টের পাওয়া না গেলেও ফ্লোরিডা, নেভাদা, আরিজোনা, মিশিগান, ইন্ডিয়ানা, ওহিও, ক্যালিফোর্নিয়া, কানেকটিকাট ও সাউথ কেরোলিনায় টের পাওয়া গেছে দারিদ্র্যের প্রবলতার। বাজেট সঙ্কোচনের ফলে দারিদ্র্য মোকাবেলার কর্মসূচি কমে আসে এবং জনমনে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মহামন্দার বিপর্যয় মোকাবেলায় ওবামা প্রশাসন নিম্ন আয়ের মার্কিনীদের জন্য ২০০৯ সালে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য স্থায়ী স্বাস্থ্যবীমা প্রচলিত হয়। নিম্ন মজুরির শ্রমিকদের আয় করমুক্ত করা হয়। স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ না কমার আইন প্রণীত হয়।

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।

প্রধান সম্পাদক