ইউক্রেনের বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজে হামলা, প্রকৌশলি নিহত

ইউক্রেনের বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজে হামলা, প্রকৌশলি নিহত
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্ক: ইউক্রেনে যুদ্ধের মধ্যে দেশটির অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ গোলার আঘাতের শিকার হয়েছে। এতে জাহাজটিতে বিস্ম্ফোরণ হয় এবং আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় হাদিসুর রহমান নামে এক প্রকৌশলী নিহত হয়েছেন। রকেট হামলায় নিহত বাংলাদেশি প্রকৌশলির নাম হাদিসুর রহমান। তিনি জাহাজটিতে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ছিলেন। তার বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগি উপজেলায়। বুধবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ১০ মিনিটে এ হামলায় মারা যান তিনি।বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির বুধবার মধ্যরাতে বলেন, ‘বিএসসির জাহাজে একটা রকেট শেল আঘাত করেছে। সেটা বিস্ফোরিত হয়ে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা গেছেন। জাহাজের বাকি ২৮ জন নাবিক ও ক্র অক্ষত আছেন। আগুন নেভানো হয়েছে।’ সমুদ্রগামী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে যুক্ত হয়। ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা এটিই প্রথম। তবে রকেকটি কারা ছুড়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সাত দিন আগে শুরু হওয়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধে এরই মধ্যে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।

হামলার শিকার জাহাজটি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন। হাদিসুর রহমান ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তার বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলায়। এ প্রকৌশলী নিহত হওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করে বহু মানুষ স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

কুর্ডস গ্লোবাল নামে একটি শিপিং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি জাহাজের রকেট হামলার শিকার হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছে। তারা একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। তাতে দেখা গেছে, জাহাজটিতে বিস্ম্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। ইউক্রেনের সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের বরাতে ওই পোস্টে আরও বলা হয়েছে, একটি রকেট আঘাত হানার পর ৩৬৩ নম্বর অ্যাঙ্করেজে থাকা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে আগুন ধরে যায়। পরে বন্দর থেকে দুটি টাগবোট পাঠানো হয় সেখানে।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির গতকাল রাতে জানান, এমভি বাংলার সমৃদ্ধির আগুন নেভানো হয়েছে। জাহাজটিতে ২৯ বাংলাদেশি নাবিক ছিলেন। প্রকৌশলী হাদিসুর নিহত হয়েছেন। বাকিরা অক্ষত।
তিনি আরও জানান, জাহাজে খাবারসহ অন্যান্য রসদ পর্যাপ্ত রয়েছে। এখন জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে।

জাহাজে থাকা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল আহমেদ সেতুর বাবা ফারুক আহমেদ বলেন, ‘সেতুর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওরা সবাই ভালো আছে।’ তিনি জানান, হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিএসসির কর্মকর্তারা তাদের খোঁজ নিচ্ছেন। ছেলে ভালো আছে বলে সবাই আশ্বস্ত করছেন আমাদের।

বিএসসির ডিজিএম (চার্টার্ড) ক্যাপ্টেন মুজিবুর রহমান গতকাল মধ্যরাতে বলেন, আমরা শুনেছি, গোলা হামলা হয়েছে। তবে সেটি গোলা, নাকি বিমান হামলা- এখনও নিশ্চিত নয়। তবে আক্রান্ত ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে অবস্থান করা নাবিক আতিকুর রহমান মুন্না তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, জাহাজে রকেট হামলা হয়েছে। একজন মারা গেছেন।

জাহাজটিতে থাকা এক নাবিকের ভাই আজিজুল হক টাঙ্গাইল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। তিনি  বলেন, ‘জাহাজটি হামলার শিকার হয়েছে। আমাদের ভাইদের জন্য দোয়া করুন।’

বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) পীযূষ দত্ত জানান, আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে এটি তৈরি করে চীনের জিয়াংশু নিউ ইয়াংজি শিপ বিল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর জাহাজটি বিএসসিকে বুঝিয়ে দেয় তারা। রকেটের আঘাতে জাহাজটি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; প্রাথমিকভাবে তা নিরূপণ করা যায়নি। ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছানোর পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে জাহাজটি সেখানে আটকা পড়েছে।

বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছে। দেশটিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় পণ্য বোঝাই না করেই দ্রুত ফিরে আসার জন্য নির্দেশনা দেয় শিপিং করপোরেশন। শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি জাহাজটি। বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, গত বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোর পর থেকে দেশটির বন্দরগুলোতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশি জাহাজটির মতো আরও কয়েকটি জাহাজ সেখানে আটকা পড়েছে। জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ‘মেরিন ট্রাফিক’-এর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এমভি সমৃদ্ধি ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। জাহাজটি অলভিয়া বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই করে ইতালির রেভেনা বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। পরিস্থিতি ভালো হলে জাহাজটির ইউক্রেন ত্যাগ করার কথা ছিল।

এদিকে জাহাজের একাধিক নাবিক নিজেদের ফেসবুক পেজে পরিস্থিতি জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে উদ্ধারের আকুতি জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে বসবাসকারী অন্য বাংলাদেশিদেরও ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক