গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন

গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন
ছবি: মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু।

মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু: এ যাবত গণতন্ত্র শ্রেষ্ঠ শাসনপদ্ধতি হলেও গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা আছে। সমসাময়িক বিভিন্ন উপাদান মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে। বিপুল সংখ্যক গণতান্ত্রিক দেশে টাকাওয়ালা ছাড়া প্রার্থী হতে পারে না, প্রচার চালাতে পারে না। ক্ষতিকর প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে ভোটাররা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে না। ইউরোপ-আমেরিকার প্রায় শতভাগ শিক্ষিতদের দেশে গণতন্ত্র যতটা ভালভাবে কাজ করে, উন্নয়নশীল ও পশ্চাৎপদ দেশে ততটা করে না। সাময়িক আবেগ, তৈরি করা আবেগ সব দেশেই ভোটকে প্রভাবিত করে। ইউরোপের উন্নত দেশ জার্মানিতে ১৯৩২ সালে হিটলারের নাত্সি পার্টি ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছিল। তবে সোশ্যাল ডেমোক্র‍্যাট ও কমিউনিস্ট পার্টি ঐক্যবদ্ধ হলে তা হতো না। জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে কল্যাণের পথে নিয়ে যাওয়া রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব। ভারতে ১৯৪৬ সালের ভোটের ফলাফলে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়ে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস নেতৃত্ব ভাল ভূমিকা পালন করেনি।


গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। তা-ও ১০০% ভোটার ভোট দেয় না। ভারতে এবার মোদীর দল-জোট হয়তো পাবে ৩৬-৩৮% ভোট এবং কংগ্রেস জোট হয়তো ২০-২১%। তাহলে ব্যবধান ১৫-১৬%-এর। বিরোধীদের ঐক্য সম্ভব হলে ও মোদীর বিকল্প একজন হবু প্রধানমন্ত্রী সামনে এলে পাশা উলটে যেতেও পারতো বা ব্যবধান কম হতো।


ভারতীয় নির্বাচনের ফলাফলে হা-হুতাশ বা গালমন্দ করার কিছু নাই। গণতন্ত্র অনুসারে এই ফলাফল আমি মানি। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের সিদ্ধান্তকে মানি। ভারতে গণতন্ত্রের অনুশীলন আমাদের চেয়ে ভাল। তাই ভোটাররা সিদ্ধান্ত প্রকাশ করতে সক্ষম। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় পবিত্র কিছু নয়। আমি রায় মানি কিন্তু এই রায় প্রদানকে অভিনন্দন জানাবো না।


ধর্মীয় উগ্রতা ও মৌলবাদ প্রশ্নে আমার দেশের লড়াই আমাদের দায়িত্ব। ভারতের লড়াই ভারতীয়দের। তবে উভয় দেশের, এবং বিশ্বব্যাপী, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি পরস্পরকে সমর্থন করবে। কোন্ দেশের সংগ্রাম এগিয়ে বা পিছিয়ে আছে তার নিরীখে সমর্থন থেমে থাকবে না।


মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু: সিনিয়র সাংবাদিক।

অতিথি লেখক