বিজ্ঞান বক্তৃতা শেষে এক মায়ের উপলব্ধি

বিজ্ঞান বক্তৃতা শেষে এক মায়ের উপলব্ধি

মাজেদা খানম বিথী: বিজ্ঞান বক্তৃতা শব্দ দুটি শুনতেই কেমন খটমটে একটা বিষয় মনে হয়। কিন্তু আমার সব ধারণা ভুল করে দিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতার অনুষ্ঠান ডিসকাশন প্রজেক্ট “ওরা কেন আসেনি”। আলোচনায় ছিলেন বাংলা একাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞান বক্তা আসিফ (তিনি এই নামেই পরিচিত) এবং ডিসকাশন প্রজেক্টের একনিষ্ঠ কর্মী ও বক্তা খালেদা ইয়াসমিন ইতি।

টিকিট দুটো হাতে পেয়ে রিমঝিমের সে কি আনন্দ! ভীষণ ভালো লাগল তার বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ দেখে। অন্য বাচ্চাদের মতো সে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু আনন্দে বাধ সাধলো পরীক্ষা। প্রতিদিন দুটো করে পরীক্ষা চলছে স্কুলে। কী করি এখন? রিমঝিমকে বললাম, তুমি যেটা চাইবে সেটাই হবে। সে বলল, মা তুমি চিন্তা করো না। আমাকে অবাক করে সেদিন সকাল বেলাই সে দুটো সাবজেক্টের সব পড়া লাঞ্চের আগেই শেষ করে ফেলল। অথচ ছুটির দিনে সে পড়ালেখা নিয়ে আলসেমি করে। বাপ থাকলেতো কথাই নেই! সাড়ে পাঁচটায় প্রোগ্রাম, জ্যামের ভয়ে সোয়া চারটায় বেরিয়ে পড়লাম। জুয়েল যথারীতি অফিসে। ওইদিন আবার চ্যানেল আই’র জন্মদিন।

যার জন্য এত কথা সে বিষয়ে আসি এখন। দুই ঘণ্টার বক্তৃতা মা-মেয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম এবং দেখলাম। সেই আদিম যুগের আগুন আবিষ্কার থেকে শুরু করে সর্বশেষ নাসায় ১২০ কোটি আলোক বর্ষ দূর থেকে আসা শব্দ তরঙ্গ। বক্তৃতাটি শেষ হয়েছিল সেই রেডিও সিগন্যাল দিয়ে। পুরো হলে তখন শুনশান নীরবতা। কেবল সেই আওয়াজ, সঙ্গে বিস্ময় আর ভয়ের এক মিশেল উত্তেজনা, কারা পাঠিয়েছে এই বার্তা? তাহলে কি আসলেই পৃথিবীর মতো আরো কোন গ্রহ আছে? তারা কি মানুষেরই মতো? নাকি অন্য ধরনের কোন বুদ্ধিমান প্রাণী! বিজ্ঞানীরা এর কুলকিনারা এখনো করতে পারেননি।

আলোচনায় এসেছে নারী বিজ্ঞানীদের প্রতি নানা অবিচারের কথা। আমাজনের জঙ্গল পুড়িয়ে দিয়ে জনপদ তৈরির ইতিহাস। তাতে নাম না জানা অনেকের ত্যাগের ইতিহাস। ছিল বিজ্ঞানের প্রাচীণ যুগ, মধ্যযুগ, রেনেসাঁর অভ্যুদয় এবং বর্তমান নিয়ে আলোচনা। আমি বিষয়টি নিয়ে এত বকবক করছি তার কারণ এই অনুষ্ঠানটিতে আসার আগ মূহুর্ত পর্যন্তও দ্বিধা কাজ করছিল। মেয়ের পরীক্ষার আগের দিন পড়া নষ্ট করে অনুষ্ঠানে যাচ্ছি বলে মনের ভেতর একটু খটর-মটর আর খচখচ ছিল। বক্তৃতা শেষে আমার মনে হয়েছে, এই দুই ঘন্টায় রিমঝিম আজ যেটুকু জেনেছে বা শুনেছে গত ছয় বছরেরর ফর্মাল শিক্ষা জীবনে সে মনে হয় এতটুকু জানেনি। আমি নিজেই তো অভিভূত।

অতীতে আমি এমন অনেক অনুষ্ঠান বাদ দিয়েছি মেয়ের লেখাপড়ার কথা ভেবে। অস্বীকার করব না। রিমঝিমের কাছে সেজন্য আমি দুঃখিত। আমরা লেখাপড়ার জন্য সারাক্ষণ ছুটছি বাচ্চাদের পেছনে। যেখানে এই শহুরে যান্ত্রিক জীবনে আমরা তাদের একটু খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে পারি না, সেখানে এই ধরনের আয়োজনে উপস্থিত থেকে তাদের যদি একটু আনন্দ দেয়া যায়, তাদের পরিতৃপ্ত মুখটা দেখা যায়, হোক না একদিন একটু কম লেখাপড়া। আর কমই বা বলছি কেন! এমন আয়োজনইতো আসল শিক্ষা। আজকের এই সময়টাও তার মনে গেঁথে থাকবে হয়তো। জাহাঙ্গির সুরকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আবারো অপেক্ষায় রইলাম।

অতিথি লেখক