সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শঃ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা পাস জরুরি

সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শঃ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা পাস জরুরি

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ“ধূমপান ও তামাক সেবনের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, হাঁপানি, বিভিন্ন রকম ক্যান্সার, ডায়বেটিস, যক্ষাসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর এ মিছিল রোধে তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা পাস করতে হবে।”

আজ সকাল ১১টায় শের-এ বাংলা নগরস্থ জাতীয় বাতজ্বর ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা উপরোক্ত দাবি তুলে ধরেন। ‘তামাকজনিত অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচনা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের ফোকাল পারসন ডা. এম মোস্তফা জামান, হেলথব্রিজ এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরমসন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইিিটর সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ বাকী, বারডেম হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনেস্ট টোব্যাকো (উফাত) এর সাংগঠনিক সম্পাদক ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এর অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসাপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার প্রমুখ। জাতীয় বাতজ্বর ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম-এর সঞ্চালনায় এবং জাতীয় বাতজ্বর ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’র সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুন নাহার চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তামাক বিরোধী পত্রিকা সমস্বর-এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন। ড. মোস্তফা জামান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার আইন পাস করেছে। আইনের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের সব ধরণের প্রচার-প্রচারনা নিষিদ্ধ হয়েছে। ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মানুষকে রাস্তায় ধূমপান করতে দেখা যায়, ফলে অনেকে মনে করে ধূমপানের প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু আসলে তা নয়, বরং আইনের মাধ্যমে গণপরিবহন ও জনসমাগমস্থল ধূমপানমুক্ত হয়েছে। এছাড়া পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাসাবাড়িতেও ধূমপানের প্রবণতা কমেছে। তাই ধূমপায়ীরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় ধূমপান করছে। এটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখতে পারি। তবে রাস্তায় ধূমপানও যেন কমে আসে, সে লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা দ্রত পাস করার মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি লবন ও শক্তিবর্ধনকারী পানীয় নিয়ন্ত্রণে কাজ করারও আহবান জানান। দেবরা ইফরমসন বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আমরা সবাই চাই। কিন্তু আমরা টিভিতে, পত্রিকায় চিপস, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক্স এর বিজ্ঞাপন দেখছি। শিশুদের এসব প্রতিনিয়ত দেখাচ্ছি, আর তাদের যদি বলি এসব খেও না, তাইলে তারা মানবে? তিনি তামাকের ক্ষেত্রে যে আইন করেছে বাংলাদেশ সরকার, সেটাও প্রশংসনীয়। তবে বাস্তবায়ন দুর্বলতার কারণে আইনের সুফল পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না। তাই আইন বাস্তবায়নের দুর্বলতাগুলো দূর করা দরকার।
অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল্লাহ বাকী বলেন, ধূমপান ও তামাক ক্যান্সারের প্রধান কারণ। তাই ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন দরকার। অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, তরুণদের স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। ধূমপান বা তামাক সেবন বা ফাস্কফুড, কোমল পানীয় বর্জন করতে হবে। তরুণদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি সহজ হবেÑএমন  নীতি গ্রহণ করা দরকার। অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ধূমপান হচ্ছে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে এ রোগে মৃত্যুসংখ্যা সবচাইতে বেশি। হৃদরোগ ও স্ট্রোকজনিত মৃত্যু কমিয়ে আনতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতি সম্পর্কে কার্যকর পদক্ষেপ দরকার। এজন্য তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করা দরকার। ডা. কামরুন নাহার চৌধুরী বলেন, জাতীয় বাতজ্বর ইনস্টিটিউট তামাক নিয়ন্ত্রণে খুবই সক্রিয়। ২০০৭ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় নিজস্ব ক্যাম্পাস ধূমপানমুক্ত করা হয়। পাশাপাশি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ইত্যাদি ধূমপানমুক্ত করা হয়। তবে পেশাজীবী চিকিৎসকদের আরও সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

মুক্ত আলোচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম, ডেন্টাল কলেজ এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. এ এফ এম সারওয়ার,  মানবিক এর উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন, প্রত্যাশা’র সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, এইড এর নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল, গনস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল ও কলেজ এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. সায়ীদ-উজ-জামান, আরটিএম ইন্টারন্যাশনাল এর কর্মকর্তা ডা. মুস্তাফিজা রুধী বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে সহ তামাক বিরোধী নারী জোট, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল, একলাব, ব্রিজ, বনফুল ফাউন্ডেশন, সাপ, উদয়ন, ইকো সোসাইটি, বউকস, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন সংস্থা, টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), গ্রীণ ভয়েস, হীল ইত্যাদি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

নিজস্ব প্রতিনিধি