মাওলানা ফারুকীকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা

মাওলানা ফারুকীকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা

বিশেষ প্রতিনিধ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ চ্যানেল আই’র জনপ্রিয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’র উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ২৭ আগস্ট (বুধবার) রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় তিনি খুন হন। এ ঘটনায় শেরে বাংলা নগর থানার এসআই রাজু আহমেদ জানান, প্রথমে পুলিশের কাছে মুঠোফোনে তথ্য আসে মাওলানা ফারুকীকে মারধর করা হয়েছে। এই সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। এর মধ্যেই ফের সংবাদ আসলো তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শেরেবাংলা নগর থানার এসআই আহাদ আলী জানান, রাতে ৫/৬ যুবক ডাকাতির উদ্দেশ্যে মাওলানা ফারুকীর বাসায় যায়। অস্ত্রের মুখে বাসার লোকজনকে জিম্মি করলে তিনি এগিয়ে এসে বাধা দেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তবে নিহতের স্ত্রীর বরাত দিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে দুই যুবক ফারুকীর কাছে আসেন হজ্বের ব্যাপারে কথা বলতে। তারা গিয়ে নিচে থাকা আরো তিনজনকে ওপরে যাওয়ার অনুমতি চায়। কিছুক্ষণ পরে ওই ৫ জন বাসার ও পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনের গুলির হুমকি দিয়ে পুরুষ ও নারীদের আলাদা কক্ষে বন্দি করে রাখে। এরপর তারা চলে যাওয়ার পর বাসার লোকজন ও প্রতিবেশিরা ডাইনিং টেবিলে হাত বাধা অবস্থায় ফারুকীর গলা কাটা লাশ দেখতে পায়।

এদিকে রাত সোয়া ১০টার দিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তার সঙ্গে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, পূর্ব রাজাবাজারের ১৭৪ নম্বর বাসায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন মাওলানা ফারুকী। মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ড নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। র‌্যাব বলছে, এটা প্রতিপক্ষের পরিকল্পিত খুন হতে পারে। তবে ফারুকীর ছেলে বলছে, বাধা দেয়ায় ডাকাতদের হাতে খুন হয়েছেন তিনি। তবে বাসার কী কী জিনিস খোয়া গেছে তা তিনি বলতে পারেননি।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৭৪ পূর্ব রাজাবাজার মুন্সীবাড়ীর একটি চার তলা ভবনের দুই তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন মাওলানা ফারুকী। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হজে যাওয়ার কথা বলে দুই জন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। এরপর ১৫/২০ মিনিট পর আরো তিনজন ভক্ত পরিচয় দিয়ে বাসায় আসেন। কিছুক্ষণ পর এরা অস্ত্রের মুখে স্ত্রী-সন্তানদের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের একটা কক্ষে আটকে রেখে ডাইনিং রুমে ফরুকীকে গয৩ডলাকেটে হত্যা করে চলে যায়। এ ব্যাপারে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান জিয়াইল হক জানান, এই মার্ডারের সঙ্গে গোপীবাগের সিক্স মার্ডারের মিল রয়েছে। তুষার নামে একজন ভক্ত দাবি করেন, এর আগেও তার ওপর একাধিকবার হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি মিলাদ ও মাজারের পক্ষে কথা বলতেন। একারণেই বিপক্ষে অবস্থানকারী গোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে মাওলানা ফারুকীর বড় ছেলে রাজ জানান, এটা একটি ডাকাতির ঘটনা। বাধা দেয়ায় ডাকাতরা তার বাবাকে হত্যা করেছে। তবে ঘর থেকে কী কী মালামাল লুট হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি। এদিকে মাওলানা ফারুকীর খুনের সংবাদ পাওয়ার শত শত সমর্থক তার বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছে বিক্ষোভ করছে। তারা খুনিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানাচ্ছে। ফার্মগেটেও ভক্তরা বিক্ষোভ করায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফারুকীর দুই স্ত্রীর মধ্যে বড় স্ত্রী থাকেন মালিবাগে। এ ঘরে এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে তার। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রাজাবাজারে থাকতেন তিনি।

আরো জানা যায়, মাওলানা ফারুকী ইসলামী মিডিয়া জনকল্যাণ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন। পূর্ব রাজাবাজার জামে মসজিদের সেক্রেটারিও ছিলেন তিনি। এছাড়া মেঘনা ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।

বিশেষ প্রতিনিধি