স্ট্যাটাসমন্ত্রী এবং নতুন প্রজন্মের প্রকৃত রাজনীতি

স্ট্যাটাসমন্ত্রী এবং নতুন প্রজন্মের প্রকৃত রাজনীতি

মোমিন মেহেদী:
‘উন্নয়ন হোক পথে ঘাটে, রাজনীতি হোক ইন্টারনেটে’। হ্যাঁ এমন একটি শিরোনাম দিয়ে সম্প্রতি আমাদের রাজনীতি সচেতন এক বন্ধু লিখেছেন, বর্তমানে রাজনীতিতে সফল হওয়ার সহজ একটি পদ্ধতি হচ্ছে রাজনৈতিক দল গঠন করা। অতঃপর কিছু সভা সেমিনারের মাধ্যমে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। নিবন্ধন হোক না হোক সেটা কোন সমস্যা না দরকার শুধু বড় দলগুলোর একটু সুদৃষ্টি। কারণ দুটি জোটে ছোট কিংবা নামমাত্র দলগুলোর কদর যেভাবে বাড়ছে তাতে যদি কোন ভাবেই একটা জোটে ডাক পড়ে তাহলেই উদ্দেশ্য সফল কারণ উক্ত পার্টির প্রধান হিসাবে নির্বাচনে একটি নমিনেশন অন্তত জুটবে। তার নির্বাচনী এলাকাটি যদি হয় ঐ জোটের বলয়ের মধ্যে তাহলে উক্ত জোটের মার্কা ব্যবহার করে এক চান্সে এমপি হয়ে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে। যেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বড় দলগুলোর নমিনেশন লাভে ব্যর্থ হতে হয় সেখানে দল গঠন করে জোটে ভিড়ার পদ্ধতিতে অতি দ্রুত সফলতা লাভ করা সম্ভব। অতীতেও এরকম সফলতার চিত্র দেখা গেছে সুতরাং ভবিষ্যতেও দেখা যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই ইদানিং আমাদের দেশে অনেকেই নানান খাত/অখ্যাত/কুখ্যাত নামে রাজনৈতিক দল গঠন করে মাঠে নেমে পড়েছেন। বড় একটি দলে যার একটি পদ পাবার যোগ্যতা নেই তিনিই হয়ে যাচ্ছেন পার্টির চেয়ারম্যান, আবার যার কর্মী হওয়ারও যোগ্যতা নেই তিনিই হয়ত উক্ত পার্টির বড় কোন পদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন। এ হচ্ছে বাংলাদেশ! বর্তমান মন্ত্রীসভায়ও এমন কয়েকজন আছেন যারা তার পার্টি থেকে নির্বাচন করলে কোনদিন এমপিও হতে পারবেন না অথচ জোট তত্ত্বের কারণে এমপি তো হয়েছেনই অনেকে আবার মন্ত্রীও হয়েছেন। তারপরও তাদের নিয়ে প্রশ্ন তুললাম না কারণ তাদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। কিন্তু ইদানিং যারা বিভিন্ন দল নিয়ে মাঠে নেমেছেন তাদের যোগ্যতা কেমন? এ প্রশ্নটি সবসময় উঁকি দেয়। তাই এরকম বেশ কয়েকজনের সাথে মিশে তাদের যোগ্যতা/গ্রহণযোগ্যতা বুঝার চেষ্টা করেছি কিন্তু বুঝতে পারি নাই অথচ তিনারাই পার্টির চেয়ারম্যান! সে যাই হোক জোট তত্ত্বের সুবিধা দেখে একটি পার্টি গঠন করার চিন্তা করছি। পার্টির সম্ভাব্য নাম ‘বাংলাদেশ ফেসবুক পার্টি’। পার্টির স্লোগান ‘উন্নয়ন হোক পথে ঘাটে, রাজনীতি হোক ইন্টারনেটে।’  লেখাটির এখানেই ইতি ঘটেনি। ইতির আগে আবার একটি লাইন ঠিক এভাবেই যুক্ত ছিলো, (বিঃদ্রঃ এই পার্টি কখনোই রাস্তার রজনীতি করবে না তাই কারো চেয়ারম্যান হওয়ারও সুযোগ নেই)।
এই লেখাটি যে বন্ধুটি লিখেছেন, নিতান্তই ঈর্ষাকাতরতা থেকে কখনো সাংসদ গোলাম মাওলা রনি, আবার কখনো আন্দালিব রহমান পার্থ, আবার কখনো কখনো নতুন প্রজন্মের রাজনীতি সচেতন নতুন নেতৃত্বকে তিনি কঁটাক্ষ করে লিখে থাকেন। এখন আমার কথা হলো তিনি নতুন প্রজন্মের রাজনীতি সচেতনদেরকে নিয়ে লিখছেন, সমালোচনা করছেন। যারা রাজনীতিতে সত্যিকারের পরিবর্তন চায় তাদের বিরুদ্ধাচারন করছেন। কিন্তু যারা রাজনীতির ‘র’ জানে না। কেবল মায়ের আর্শিবাদ ধন্যতাই যাদের পূঁজি। যারা ফেসবুক টুইটার  আর অনলাইন ব্যাতিত কোন জায়গায় নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারেন না; তাদেরকে নিয়ে কেন লিখছেন না? এই কারনে যে, যদি তাদের বিরুদ্ধাচারন করে তাহলে আর পত্রিকা পত্রিকা খেলা চলবে না? তাহলে আর মন্ত্রীদের সুনজরও পাবে না? তাই যদি হয়; তাহলে আর এত ভালো ভালো কথা বলার কি প্রয়োজন, সেই লোকদের বাসায় ‘মোসাহেবী’র চাকরীটা নিয়ে নিলেই পারেন। কেননা, এই রাজনীতিকরা মোসাহেবী অনেক পছন্দ করেন। যার বিনিময়ে অনেক টোকাইকে এরা দলের বড় বড় পদ দিয়ে বসিয়ে রেখেছে। সে যাই হোক, তাঁর উদ্যেশ্যে বলছি, ভাইরে আপনার দৃষ্টিতে তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে যারা নাম লিখিয়েছে; তাদের যোগ্যতা না থাকলেও আপনার সেই নেতাদেরতো আছে, যারা মায়ের আর নানা-বারার উত্তরসূরী। এই উত্তসূরীদের রাজনৈতিক যোগ্যতা এতটাই যে, ঈদকে সামনে রেখে দেশে এসে সাধারন জনগনের সাথে ঈদ না করেই চলে যায় পরদেশে।  এই উত্তসূরীদের রাজনৈতিক যোগ্যতা এতটাই যে, স্টেইজে কথা বলার কোন রকম যোগ্যতা না থাকায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান দিতে হয় যে, আমি আছি। এই উত্তসূরীদের রাজনৈতিক যোগ্যতা এতটাই যে, কথা বলার আগেই ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়ার বাক্যটা চলে আসে। যে কারনে আজ দেশের রাজনীতিকে নতুন প্রজন্মের অনেকেই ঘৃণা করছে। ছি ছি করছে। আর ঠিক সেই সময়ে যারা সত্যিকারের রাজনীতি করতে তৈরি হচ্ছে, যারা স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করে এগিয়ে চলছে নিরন্তর; তাদেরকে প্রতিহত করতে তৈরি হচ্ছে অনেকেই।
এই হলো বাংলাদেশ। যেখানে যুদ্ধাপরাধীদেরকে, যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদেরকে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যায় আওয়ামী লীগার। যেখানে যুদ্ধাপরাধীদেরকে, যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের ব্যাংকের স্পন্সর নিয়ে বাংলাদেশের পতাকাকে রাখা হয় পাকিস্তানের পতাকার নিচে। যুদ্ধাপরাধীদেরকে, যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করতে সময় লাগে সাড়ে ৪ বছর। যুদ্ধাপরাধীদেরকে, যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের বিচার করতে ভয়ে ভীতু হয়ে থাকে আদালত। হায়রে বাংলাদেশ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ। এখানে নতুন নতুন ফাঁদ পাতা হয় আমাদের রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্মকে  কৌশলে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে। যে কারনে আজ আজিজের পথে রকিব। বিতর্কিত আজিজ কমিশনের পথেই হাঁটছে বর্তমান রকিব কমিশন। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সোয়া কোটি ভুয়া ভোটার করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল বিগত আজিজ কমিশন। তেমনি বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অদূরদর্শী কর্মকাণ্ড ও নানা আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানকে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছে স্বাধীন ইসি। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বর্তমান ইসিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘আজ্ঞাবহ’ আখ্যা দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিছু দিন আগে বর্তমান ইসিকে ‘অথর্ব’ উপাধিও দিয়েছেন। কমিশনের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এমনকি ইসি পুনর্গঠন করারও দাবি তুলছে তারা। দেশে প্রথমবারের মতো সার্চ কমিটির মাধ্যমে বর্তমান কমিশন গঠিত হলেও নানা কর্মকাণ্ডের মাধমে বিতর্কের সৃষ্টি করছে তারা। তাই রকিব কমিশনও আজিজের পথেই হাঁটছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা উঠলে বর্তমান কমিশন দিন দিন নিজের ক্ষমতা হারাতে থাকে। দশম সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে যেসব প্রস্তুতি প্রয়োজন তার অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এমনকি দশম সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা নিয়েও বর্তমান ইসি এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে।
আর এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সংসদের ৫৩ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে বিরোধী দলের সমালোচনার মুখে পড়ে এই ইসি। একই সঙ্গে দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন করতে বিশেষভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া নিয়েও সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিগত আজিজ কমিশনের দুর্নাম ঘুচিয়ে নির্বাচন কমিশনকে একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন ড. শামসুল হুদার কমিশন। তারা ইসিকে শক্তিশালী করতে নানা পরিকল্পনা রেখে এলেও তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি।
আমরা দেখেছি যে, বিএনপির চালে ২০০৫ সালে বিচারপতি এম এ আজিজ আদালতের বিচারকের পদে থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ায় শুরুতেই বিতর্কের মুখে পড়েন। আর সোয়া কোটি ভুয়া ভোটার করা নিয়ে বিতর্কের কারণে পদত্যাগে বাধ হয় আজিজ কমিশন। এরপরে গঠিত হয় ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন। গত বছরের ফেব্র“য়ারিতে তারা মেয়াদ পূর্ণ করে বিদায় নেন। দেশে প্রথমবারের মতো সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত হয় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশন। গত বছরের ১২ ফেব্র“য়ারি দায়িত্ব নেয় এই কমিশন। দায়িত্ব নিয়েই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তো কেবল দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের সেটেল হতে সময় দিন। এরপর এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর। কিন্তু বিগত ইসির সাফল্য ধরে রাখা দূরের কথা তারা নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা নির্ধারণ ও নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে কাজ শুরুর ঘোষণা দেয় ইসি। প্রথমেই সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান একজন কমিশনার। এরপর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এক দিনে সংলাপ করা এবং জামায়াত ও সিপিবিকে একই দিনে সংলাপে দাওয়াত দিয়ে সমালোচনায় পড়ে ইসি। আর প্রধান বিরোধী দলও ইসির সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি হয়নি।
এই সুযোগেই সরকারের মদদে বিএনএফ নামক একটি ভিত্তিহীন সংগঠনকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য নিবেদিত হচ্ছে ইসি। শুধু এখানেই শেষ নয়; বাংলাদেশ ফেসবুক পার্টির প্রধান (যিনি নিয়মিত ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে আমাদেরকে রাজনীীত শেখাচ্ছেন, সেই আগামীর ফেসবুক মন্ত্রী সজীব ওয়াজেদ জয়) ইসিকে প্রভাবিত করে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে গমের শীষ প্রতিক বরাদ্দের জন্যও কৌশলে এগিয়ে আসছেন। তবে বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্মকে চিনতে তিনি ভুল করেছেন, একথা বলতেই হবে। বাহান্নর কথা ভুলে গেছেন তিনি, উনসত্তুরের কথা ভুলে গেছেন তিনি, তিনি ভুলে গেছেন একাত্তরের কথা, পঁচাত্তরের কথা এবং প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সাধারন মানুষের অংশ গ্রহনের কথা। তিনি তা ভুলে যাওয়ায় আজ স্মরণ করিয়ে দিতে বলতেই হচ্ছে, প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অতিতে যেমন নতুন প্রজন্ম ছিলো; এখনো আছে, আগামীতেও থাকবে। আর সেই নতুন প্রজন্ম তৃণমূল থেকে উঠে আসা পোড়খাওয়া নেতৃত্ব। কোন নানা-বাবা বা মায়ের উত্তরসূরী নয়। কথাটা  বাংলাদেশ ফেসবুক পার্টির প্রধান (যিনি নিয়মিত ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে আমাদেরকে রাজনীীত শেখাচ্ছেন, সেই আগামীর ফেসবুক মন্ত্রী সজীব ওয়াজেদ জয়)-এর যেমন মনে রাখাতে হবে, তেমন মনে রাখতে হবে সেই বন্ধুটিরও যিনি নতুন প্রজন্মের রাজনীতিকদের বিরোধীতা করে বাংলাদেশ ফেসবুক পার্টির ঘোষণা দিয়েছেন। তা না হলে সারাদেশে সোচ্চার হওয়া আগামীর কান্ডারীরা এমন দশা করবে যে, জীবনে আর রাজনীতি করার কথা মাথাতেই আসবে না, ফেসবুক বা ইন্টারনেটতো অ-নে-ক পরের কথা…
মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)

mominmahadi@gmail.com

অতিথি লেখক