নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রথম প্রয়াণ বার্ষিকী আজ

নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রথম প্রয়াণ বার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ চোখের পলকেই হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর একবছর পূর্ণ হলো। ৬৪ বছরের জীবন শেষে গত বছরের এই দিনে আটলান্টিকের ওপারে আমেরিকার নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে ক্যান্সার আক্রান্ত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা সাহিত্যের এই রাজপুত্রের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিক উদ্যেগে রয়েছে মিলাদ মাহফিল এবং ইফতার বিতরণের আয়োজন। হুমায়ুন আহমেদের পরিবার থেকে জানা গেছে, এই দিনকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের নূহাশ পল্লী সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। দিনব্যাপী নূহাশ পল্লীতে থাকছে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত, বাদ আসর দোয়া মাহফিল। এরপর রয়েছে এতিম অসহায়দের জন্য ইফতার এবং নৈশভোজ। হুমায়ূন আহমেদের প্রধান সহকারী জুয়েল রানা জানান, এরই মধ্যে মেহের আফরোজ শাওন দুই ছেলেকে নিয়ে নূহাশ পল্পীতে চলে গেছেন। হূমায়ন আহমেদের ছোটভাই আহসান হাবীব জানিয়েছেন, আজ তাদের পল্লবীর বাসায় বাদ আছর মিলাদ মাহফিল রয়েছে। মিলাদ মহফিলে পরিবারের নিকটাত্বীয় ও হূমায়ুনের বন্ধু-বান্ধবদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নুহাস পল্লীতে অনুষ্ঠিত মিলাদে হূমায়ূনের আগের স্ত্রীর পক্ষের কেউ অংশ নিচ্ছেন না। তবে আগামীকাল বা পরশু হূমায়ুনের কবর জেয়ারত করতে তার মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নূহাস পল্লীতে যেতে পারেন।

এদিকে ২০ জুলাই রয়েছে হুমায়ুন আহমেদের গ্রন্থ প্রকাশকদের উদ্যোগে ধানমণ্ডির বেঙ্গল গ্যালারিতে আলোচনাসভা। অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা অংশগ্রহণ করার কথা। এছাড়া তার স্মরণে চ্যানেলে চ্যানেলে রয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান। এর মধ্যে চ্যানেল আই আয়োজন করেছে চার দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। আয়োজনে ১৯ জুলাই পুরোদিনের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে। এ ধারাবাহিকতায় সকাল ৭টায় প্রচার হবে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে গান ও আবৃত্তি। এতে গান করবেন এস আই টুটুল এবং আবৃত্তি করবেন অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে দেখানো হবে বিশেষ টেলিছবি ‘নিমফুল’। এটি পরিচালনা করেছেন মেহের আফরোজ শাওন। হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক বিশেষ আলোখ্যানুষ্ঠান ‘যে আঁধার আলোর অধিক’ প্রচার হবে রাত ১১টা ৩০ মিনিটে। এতে অংশ নেবেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক এবং জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ।

উল্লেখ্য,প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে। তার বাবা প্রয়াত ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ। তার বাবা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুরে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন। হুমায়ূনের ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের জনপ্রিয়তম কল্পবিজ্ঞান লেখক। পরিবারের সবার ছোট ছেলে আহসান হাবীব রম্যসাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট। ছোটবেলায় হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল ছিল শামসুর রহমান; ডাকনাম কাজল। তার বাবা নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরে আবার নাম বদলে হুমায়ূন আহমেদ রাখেন। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। এই দম্পতির তিন মেয়ে- শিলা, নোভা ও বিপাশা এবং ছেলে নূহাশ। ২০০৫-এ গুলতেকিনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। ওই বছরই তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। হুমায়ূন-শাওন দম্পতির তিন ছেলে-মেয়ে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। দুই ছেলেদের নাম নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন। হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার এবং নাট্যকার। বলা হয়, বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃত্। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। বিভিন্ন গল্প ও উপন্যাসে তার নির্মিত দুই চরিত্র হিমু ও মিসির আলী নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয়তম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন।

নিজস্ব প্রতিনিধি