প্রতিক্রিয়া প্রকাশে আমরা যেন ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ না করি

প্রতিক্রিয়া প্রকাশে আমরা যেন ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ না করি

শওগাত আলী সাগর: কানাডার সময় এখন ভোর ৪টা। ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ যুদ্ধাপরাধীদের সরদার গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের রায় শোনার জন্য বিনিদ্র রাত্রি যাপন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে চোখ রাখলেই টের পাওযা যায়,কেবল টরন্টোই নয়,পুরো উত্তর  আমেরিকায় অসংখ্য মানুষকে ঘুমকে ফাকিঁ দিয়ে টিভি পর্দার সামনে,কম্পিউটারের সামনে অধীর আগ্রহে বসে আছেন। সবারই অপেক্ষা একজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সরদারের ফাসিঁর রায় শোনার প্রত্যাশায়।

কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা হতাশায় পরিণত হয় রায় পাঠ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে। আদালতের রায়,’ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদণ্ড ।‘সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে যেন বিষ্ফোরন ঘটে। ‘এ রায় মানি না’- অভিন্ন একটি প্রতিক্রিয়ায় সরগরম হয়ে উঠে ফেসবুকের স্ট্যাটাসগুলো। নিজেদের ক্ষোভ,হতাশা,মনের জ্বালা প্রকামের সীমানাকে অতিক্রম করে কেউ কেউ রাজনৈতিক ভাষায়ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে শুরু করেন। সরকারের সঙ্গে জামাতের আঁতাতের ফলে এই ধরনের রায় হয়েছে বলেও অনেকে ক্ষোভ ঝাড়তে থাকেন।

আদালতের কোনো বিচার বা রায় নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ বা মন্তব্য করা কঠিন। আর যদি কোনো মামলার সঙ্গে দেশ ও জাতির  আবেগের প্রশ্নটি জড়ি থাকে তাহলে তো আরো কঠিন। তাৎক্ষনিক মন্তব্য অনেক সময় মনের ক্ষোভকে প্রশমিত করলেও ভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়াও  তৈরি করে।

গোলাম আযমের মামলার রায় দেওয়ার সূচনাতে আদালত মামলাটি সম্পর্কে কিছু অভিমত দিয়েছেন। সেই অভিমতে প্রসিকিউশনের ব্যর্থতা নিয়ে কিছু কথাবার্তা আছে। গোলাম আযম মামলার রায় নিয়ে বিশ্লেষন করতে হলে এগুলোসহই করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত মনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা যেন আদালতকে বিতর্কিত করে না ফেলি।কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য ,প্রতিক্রিয়া্ প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা যুক্তির গন্ডির মধ্যে থাকতে পারছি না।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর প্রথম থেকে জামাত বিএনপি আদালতকে বিতর্কিত করার সবধরনের প্রচেষ্টাই চালিয়েছে। ‘ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন নয়,সরকারের নির্দেশনায় এর রায় হয়’- এমন একটি বক্তব্য তারা প্রচার করছে,সামনেও করবে। নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে আমরাও কি তাদের এই প্রচারনার সুযোগ করে দেবো?ইতিমধ্যে ফেসবুকে কয়েকটি মন্তব্য চোখে পড়েছে, আমাদের সহযোদ্ধাদের ক্ষোভ মিশ্রিত স্ট্যাটাসের নিচে উৎসাহী হয়ে অনেকেই কমেন্ট করছে, তাহলে স্বীকার করে নিলেন,এই আদালত স্বাধীন নয়, সরকারের নির্দেশনামতো পরিচারিত হয়!’

গোলাম আযমের মামলায় রায়ে আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুব্দ ও হতাশ। ।আমি মনে প্রানে চেয়েছি এই রাজাকর সর্দারের ফাসিঁ হউক। কিন্তু হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা যেন ট্রাইব্যুনালকে নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ করে না দেই। ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ না করি।

শওগাত আলী সাগর: প্রধান সম্পাদক,নতুনদেশ ডট কম।।

অতিথি লেখক