জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হলুদ রংয়ের দুটি ব্যানারঃ সাংবাদিক নির্মূলের দাবি

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হলুদ রংয়ের দুটি ব্যানারঃ সাংবাদিক নির্মূলের দাবি

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! সাংবাদিকদের উপর উপর্যপুরি পুলিশি নির্যাতনের পর এবার সাংবাদিকদের নির্মূল করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হলুদ রংয়ের দুটি ব্যানার ঝোলানো  হয়েছে! যেসব সাংবাদিক সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করে তাদের চিহ্নিত করে নির্মূল করার দাবি জানানো হয়েছে এদুটি ব্যানারে।

‘সচেতন সাংবাদিক সমাজ’-এর নামে  ‘সাংবাদিকরা আইনের উর্ধ্বে নয়’ শিরোনামের ব্যানারে লেখা হয়েছে: “বেআইনি সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর, বিনা কারণে পুলিশের ওপর আক্রমণ সমাজ সচেতন সাংবাদিকদের কাজ নয়। এদের চিহ্নিত করে নির্মূল করুন।“

তবে কে বা কারা ব্যানারটি রাতের আঁধারে ঝুলিয়ে দিয়ে চলে যায় জানা যায়নি। ব্যানারটিতে যে সংগঠনের নাম লেখা রয়েছে সে সম্পর্কে সাংবাদিক নেতারা ও প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষও কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক  সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, “কে বা কারা এ ধরণের কাজ করেছে, তা আমাদের জানা নেই। তবে যারাই এ কাজ করেছে, তারা সাংবাদিকদের চরিত্র হননের জন্যই করেছে।“

এ ঘটনায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “যারা এ ধরনের হীন কাজ করেছে, তারা সাংবাদিকদের তাদের প্রতিপক্ষ মনে করেই করেছে।“ তিনি বলেন, “যদি সত্যিকার সাংবাদিকদের সংগঠন এ কাজ করে থাকে, তাহলে অবশ্যই তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে এবং তারা গোপনে না করে সৎসাহস থাকলে প্রকাশ্যেই তাদের স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।“

ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরো বলেন, “তাদের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তবে যাদের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছি, তাদের ভেতরের একটি অংশ এ কাজ করে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে।“

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) অপর অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী মনে করেন, “সরকারের একটি এজেন্সি অথবা দলীয় লোকদের কোনো পক্ষ সরকার পুলিশ ও জনগণকে সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য এ ধরনের হীন প্রপাগান্ডাকে বেছে নিয়েছে।“ তিনি বলেন,“স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর সর্ব সাম্প্রতিক মন্তব্য, তার ভাতিজা কর্তৃক কালের কন্ঠসহ কয়েকটি মিডিয়ার সাংবাদিক নির্যাতন, পুলিশ কর্তৃক কোর্ট চত্বরে সাংবাদিক নির্যাতন, ফটো সাংবাদিকদের মারধর, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, বিডিনিউজের কার্যালয়ে হামলা এবং অত:পর কিছু লোককে দিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিল করানো এবং এ ব্যানার ঝোলানোর ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা।“

“সাংবাদিকদের ঐক্য বিনষ্ট করা, আমাদের আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য তারা এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে“ বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “ তারা যতোই ষড়যন্ত্র করুক, তাদের চক্রান্ত সফল হবে না। এ ধরনের কাজ চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ।“

এ ব্যাপারে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “যারা এ কাজ করেছে তারা সাংবাদিকদের শত্রু। যে মুহূর্তে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন করছে, ঠিক সে মুহূর্তে এ ধরণের ব্যানার কারা ঝোলাতে পারে তা সবার কাছে স্পষ্ট।“

পুলিশের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কেউ এ কাজ করেছে বলে তিনি মনে করেন। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই ব্যানারগুলো অপসারণ করা হবে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি, একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিক নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা, দৈনিক প্রথম আলোর  ৩ জন ফটো সাংবাদিককে পুলিশের বেধড়ক পিটুনি,  ঢাকার জজ কোর্টে কোতয়ালি থানা পুলিশের এক নারীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে গেলে ২ আইনজীবীসহ কয়েকজন সাংবাদিককে নির্যাতন এবং বিডিনিউজের কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিক সমাজ একের পর এক কর্মসূচি পালন করছে।

নিজস্ব প্রতিনিধি